রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১২

তিন বাহিনীতে যোগ হচ্ছে আধুনিক অস্ত্র

সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে যোগ হচ্ছে আধুনিক অস্ত্র। এর মধ্যে রয়েছে- অটোমেটিক গ্রেনেড লঞ্চার, অব দি সেলফের মতো সাবমেরিন এবং বিজিআই জঙ্গিবিমান। দেশের প্রতিরক্ষা খাত আরও শক্তিশালী করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মূলত বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাহিনীর মতো আধুনিক বাহিনী গড়ে তুলতে সরকার এরই মধ্যে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এরই অংশ  হিসেবে তিন বাহিনীতে আধুনিক অস্ত্র সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাহিনীর সদস্যদের গুণগতমান আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সমপ্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সংসদীয় কমিটিতে দেয়া এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে তিন বাহিনীকে শক্তিশালী করতে যেসব অস্ত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে তার তালিকা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি সশস্ত্রবাহিনীর জন্য অবকাঠামো নির্মাণে অগ্রাধিকার দেয়ার চেয়ে প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেয়। 
প্রতিবেদনে সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এ বাহিনীর জন্য আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ক্রয় এবং তৎসংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর জন্য কেনা হচ্ছে- অটোমেটিক গ্রেনেড লঞ্চার (এজিএল), সেলফ প্রোপেলড গান (এসপি গান), অ্যানটি ট্যাংক গাইডেড উইপন (এটিজিডব্লিউ), ট্যাংক, উইপন লোকেশন রাডার (ডব্লিউএলআর) প্রভৃতি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সকল ফর্মেশন ছাড়াও সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড প্রশিক্ষণ উন্নয়নে কাজ করছে। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও গুণগতমান বাড়ানোর লক্ষ্যে সর্বদাই অধিক গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে। 
প্রতিবেদনে নৌবাহিনী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নৌ বাহিনী অবকাঠামো নির্মাণের চেয়ে আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি এবং প্রশিক্ষণের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে। এতে বলা হয়েছে, ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের অংশ হিসেবে চীন থেকে দু’টি অব দি সেলফ সাবমেরিন ও দু’টি ফ্রিগেট কেনা হচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি ইউএসসিজি কাটার ডালাস (ডব্লিউএইচইসি-৭১৬) শিপ সংগ্রহের চেষ্টা আব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে দু’টি মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট (এমপিএ) কেনার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বাহিনীর দক্ষতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নৌবাহিনীর অফিসার ও নাবিকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে বিভিন্ন কোর্স, মহড়া ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সামগ্রী চালনা ও প্রশিক্ষণের জন্য অধিক সংখ্যক কর্মকর্তা ও নাবিকদের নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য সংস্থায় এবং বিদেশেও প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হচ্ছে। 
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বিমানবাহিনী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সশস্ত্রবাহিনীকে আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বিমানবাহিনীতে নতুন নতুন সরঞ্জাম সংযোজন করা হচ্ছে। গত বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিমানবাহিনীতে একটি সোর্ড সিস্টেম (স্বল্প পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র) সংযোজন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, গত অর্থ বছরে এক স্কোয়াড্রন (১৬টি) এফ-৭, বিজিআই জঙ্গিবিমান, তিনটি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার এবং দু’টি রাডার কেনার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করা হয়েছে। শিগগিরই এগুলো বিমানবাহিনীতে সংযোজন করা হবে। এছাড়া রাশিয়া থেকে এক স্কোয়াড্রন মাল্টিরোল কমবাট এয়ারক্রাফট (এমআরসিএ), প্রশিক্ষণ বিমান (অ্যাডভান্স জেট ট্রেইনার) এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাডার সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি লোন প্রটোকলের মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহ করা হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বিমান, হেলিকপ্টার, রাডার ও গোলাবারুদ সংগ্রহের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। চলতি অর্থবছরে বিমানবাহিনীর আনুমানিক মোট ৩১২২ জন সদস্যকে দেশে এবং ১২০ জন সদস্যকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ নিয়ে কমিটির সদস্যরা পর্যালোচনা করেছে। তারা এ ধরনের পরিকল্পনা শিগগিরই বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ