সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৩

আওয়ামী ভন্ডামি! একটি ভাগ্যবান পরিবার- যে পরিবারের সকলে ছিল রাজাকার আজ তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা!

বর্তমান সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী সহ ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের মধ্যে থেকে ৮৮ জন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও তার গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাদের সদস্যপদ পুনর্বহাল করেছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঐ ৮৮ জন আওয়ামী লীগ এমপির নাম, পিতার নাম, ঠিকানা এবং সংসদীয় এলাকার উল্লেখ করে তালিকা প্রকাশ করেছিল। এই তালিকার ৮৪ নম্বরে বেগম সাজেদা চৌধুরীর নাম রয়েছে। 

হায় হায়! এটা কি শুনলাম?! বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এত বড় নেত্রী টিক্কা খানের আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছিল?! সাজেদা চৌধুরীও রাজাকার?! আরো কতো তথ্য যে অজানা?! 


কবির চৌধুরী- এক নামে পরিচিত ব্যাক্তি। আওয়ামীদের অন্যতম থিংকট্যাংক। গত আওয়ামী সরকার কবির চৌধুরীকে জাতীয় অধ্যাপক বানিয়েছিল। তিনি ঘাদানিকের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অধ্যাপক কবীর চৌধুরী এখন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা। 

অথচ এই কবির চৌধুরীর পুরো পরিবার ছিল রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী ও পাকিস্তানপন্থী। কিছু তথ্য দেখুন- 

কবির চৌধুরী- 
১৯৬৯-৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় কবীর চৌধুরী পাক হানাদার সরকারের বিশ্বস্ত অনুচর হিসেবে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিল। 

পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার কথা বলে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় দালাল আখ্যায়িত করে ১৯৭১ সালের ১৭ মে দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছিলো কবীর চৌধুরী। 

অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর বড় ভাই কাইয়ুম চৌধুরী- 
কাইয়ুম চৌধুরী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর একজন কর্নেল হিসেবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন। পাকিস্তানের প্রতি তার আনুগত্য এত বেশী ছিল যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পাকিস্তানেই তিনি থেকে গেছেন। পরে ব্রিগেডিয়ার হিসেবে অবসর নিয়ে এখনও পাকিস্তানেই অবস্থান করছেন। 

মুনির চৌধুরী- 
কবির চৌধুরীর আরেক ভাই মুনির চৌধুরী যাকে শহীদ বুদ্ধিজীবি হিসেবে অভিহিত করা হয়। তার ব্যাপারে কাদের সিদ্দীকি বলেছেন এভাবে, পাকিস্তানের পক্ষে ১৯৭১ সালে ঢাকার ৩১জন বুদ্ধিজীবি বিবৃতি দিয়েছিল। তাতে একনম্বরে স্বাক্ষর করেছিল মুনির চৌধুরী। মুনির চৌধুরী পুরো যুদ্ধের সময় একদিনের জন্যও নিজের কর্মস্থলে যাওয়া বন্ধ করেনি। এমনকি নভেম্বর মাসের বেতনও তিনি তুলেছিলেন। ১৩ তারিখ পর্যন্ত যারা অবলীলায় ঢাকায় থেকে পাকিস্তানিদের সব হুকুম হাকাম পালন করেছে, ১৪ তারিখ সুবেহ সাদেকে সেই পাকিস্তানিদের হাতে নিহত হয়ে সবাই পূতঃপবিত্র হয়ে গেল? আর যারা বেঁচে ছিল তাদের কেউ কেউ দালাল হলো? এটা কেমন বিচার? 

৩১ জন বিবৃতিদান কারীদের মধ্যে থেকে কবি তালিম হোসেনকে যখন স্বাধীনতার পরপর দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয় তখন তিনি বলেছিলেন এভাবে, “…বেশ কিছুদিন ধরে কষ্ট হচ্ছে আমরা একসঙ্গে যারা পাকিস্তানের গোলামি করলাম, বেতন নিলাম তাদের কেউ কেউ মরে গিয়ে শহীদ হলো আমরা বেঁচে থেকে দালাল হলাম। এতে কেমন যেন স্বস্তি পাচ্ছি না। বাবা, অপরাধ যা কিছু করার আমরা একসঙ্গে করেছি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করিনি। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চাইতে পাকিস্তান আমলে আমি মাত্র এক বা দু’দিন বেশি বেঁচেছি, চাকরি করেছি। শহীদরা ১৩ তারিখ রাতে মারা গেছে। ১৪ আর ১৫ বলতে গেলে এই দু’দিন তো পাকিস্তানিদের দৌড়াদৌড়িই সার। ওই এক-দেড় দিন আমাদের কারোরই কিছু করার ছিল না। এখন মৃত্যু ভাগ্যে জোটে নাই তার জন্য কিইবা করতে পারি?” 

হায় আফসোস ১৯৭১ এর ঘাতক দালাল কবীর চৌধুরী স্বাধীন বাংলাদেশের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা। সত্যি সেলুকাস বিচিত্র এদেশ। যে পরিবারের প্রতিটি সদস্য পাকিস্তানের পক্ষে দালালি করেছিল তারা আজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের? এর নামই কি আওয়ামী ভন্ডামি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ