বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩

ম্যাডাম জানলে নিজের মান-সম্মান-ওজন রক্ষার জন্য হলেও এমন অদ্ভুত প্রস্তাবটি তিনি দিতেনই না।

এখন যে তথ্যগুলো দিচ্ছি, আমি শতভাগ নিশ্চিত- এর একটিও ম্যাডাম জানতেন না। জানলে নিজের মান-সম্মান-ওজন রক্ষার জন্য হলেও এমন অদ্ভুত প্রস্তাবটি তিনি দিতেনই না। আর ম্যাডাম এতটা বেকুব অবশ্যই নন। এই পরিমান বেকুব হলে তিনি তিন-তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতেই পারতেন না !
এবার তথ্যগুলো দিচ্ছি-

(১) ১৯৯৬ ও ২০০১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মোট ২০ জন উপদেষ্টার মধ্যে সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ এবং সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী দুই সরকারেরই উপদেষ্টা ছিলেন। ফলে মোট উপদেষ্টার সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে ১৮ জন, কোনোভাবেই ২০ জন নয়।
(২) এই ১৮ জন উপদেষ্টার মধ্যে ৪ জন এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে ১৯৯৬ ও ২০০১ -এই দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১৪ জন উপদেষ্টা এই মুহুর্তে জীবিত আছেন।
(৩) জীবিত ১৪ জন উপদেষ্টার মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ। বিশেষ করে ড. ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ এবং ড. নাজমা চৌধুরী বেশ অসুস্থ। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নোবেলজয়ী ব্যাক্তিত্ব হলেও নানা কারণে বিতর্কিত।
(৪) সার্বিক বিবেচনায় মৃত, অসুস্থ ও বিতর্কিত ব্যাক্তিদের বাদ দিলে ১৯৯৬ ও ২০০১ -এই দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাত্র ১১ জন উপদেষ্টা এখনো রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্ব নেয়ার মতো সক্ষম আছেন। এই ১১ জনের মধ্য থেকে ১০ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা গেলেই তবে বেগম জিয়ার প্রস্তাবটি বাস্তবে রূপ পাবে। এটা কিভাবে সম্ভব? ম্যাডাম নিজেও কি তা জানেন?

এবার ১৯৯৬ ও ২০০১-এর সেই ২০, কিন্তু আসলে ১৮ জন উপদেষ্টার প্রত্যেকের অবস্থা বলছি-

মারা যাওয়া ৪ উপদেষ্টার মধ্যে, ১৯৯৬ ও ২০০১ মেয়াদে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব পালন করেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা ব্রি. জে. (অব) আব্দুল মালেক। শিল্প, বাণিজ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা মে. জে. (অব) মইনুল হোসেন। শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য(১৮ তম) অধ্যাপক শামসুল হক। প্রয়াত এই ৪ উপদেষ্টা ম্যাডামের অলীক প্রস্তাবটি থেকে পুরোপুরি মুক্ত।
দু’জন উপদেষ্টা বেশ অসুস্থ। অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ এখন শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। আর শ্রম ও জনশক্তি, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমা চৌধুরী বর্তমানে শয্যাশায়ী। এই দু’জন বেঁচে থেকেও শারীরিক কারণে ম্যাডামের আজগুবি প্রস্তাব থেকে বেঁচে গেছেন।

৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. ইউনুস। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে বেশ বিতর্কিত অবস্থায় রয়েছেন এই নোবেল বিজয়ী। ক্ষেত্রবিশেষে তিনি কখনো-কখনো আওয়ামী লীগ বিরোধী, তথা বিএনপিপন্থী আচরণ প্রকাশ্যে দেখিয়ে দিয়েছেন। এসব মিলিয়ে ড. ইউনুসকে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ বলার সুযোগ আর নেই। তাই নিরপেক্ষ সরকারের একজন হিসেবে তাঁকে চিন্তা করার মানেই হয় না। নিরপেক্ষতা হারিয়ে ড. ইউনুসও বলতে গেলে ম্যাডামের গোলকধাঁধা থেকে ‘চামে’ বেঁচে গেলেন।
এই সবাইকে বাদ দিলে বাকি থাকেন যে ১১ জন উপদেষ্টা, তারা হলেন-

(১) ৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, পাট এবং বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেগুফতা বখত চৌধুরী। বর্তমানে নিজস্ব সেক্টরে কাজ করছেন তিনি।
(২) তৎকালীন কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও পশুসম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এ জেড এম নাসির উদ্দিন। তিনি এখন রাজনৈতিক আলোচনার পুরোপুরি বাইরে। অবস্থান অজানা।
(৩) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মে. জে. (অব) আব্দুর রহমান খান। তিনিও বর্তমানে রাজনৈতিক আলোচনার বাইরে। অবস্থান অজানা।
(৪) সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ৯৬ এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন; ৯৬ সালে যোগাযোগ, নৌপরিবহন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কৃষি, নৌ পরিবহন, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০০১ সালে। বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
(৫) বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এর উপাচার্য হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।
(৬) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক বিচারপতি বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী। বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে অনেক দূরে রয়েছেন। অবস্থান অজানা।
(৭) অর্থ, পরিকল্পনা, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন, সাবেক অডিটর জেনারেল হাফিজ উদ্দিন খান। তিনি এখন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত, অনেকটা অসুস্থও, প্রতিনিয়ত থেরাপি নিতে হয় তাঁকে।
(৮) তথ্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, খাদ্য, পরিবেশ ও বন এবং ভূমি মন্ত্রণালযয়ের দায়িত্ব পালন করেন মো. মুয়ীদ চৌধুরী। তিনিও এখন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।
(৯) মহিলা ও শিশু বিষয়ক, সমাজকল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ব্যাংক ম্যানেজার ও ব্যাবসায়ী রোকেয়া আফজাল রহমান। বর্তমানে ব্যাবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই’র দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন তিনি।
(১০) যোগাযোগ, বিদ্যুত্, জ্বালাণি ও খনিজসম্পদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, প্রকৌশলী আমানুল ইসলাম চৌধুরী। বর্তমানে নিজ সেক্টরে কাজ করছেন তিনি।
(১১) শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এএসএম শাহজাহান। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত রযেছেন তিনি।

এবার ম্যাডাম নিজেই বলুন দেখি, এ কেমন প্রস্তাব দিলেন আপনি? আপনি কি এতটাই বেকুব? আপনি তো এতটা বেকুব নন! তবে কোন বেকুবের বুদ্ধিতে এমন আজব প্রস্তাবটি আপনি দিলেন গো? ধরেন শালাকে, এক্ষুনি। ওই শালা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবসম্মত প্রস্তাবটির বিপরীতে আপনাকে একটা অবাস্তব-হালকা-অলীক-হাস্যকর প্রস্তাব ধরিয়ে দিয়েছে ম্যাডাম। বুঝেছেন তো এবার?

পুনশ্চঃ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা এই ১১ উপদেষ্টার কেউ-কেউ এরই মধ্যে সরকারের মন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়া বিষয়ে অপারগতা জানিয়ে দিয়েছেন। ১১ জনেরিই বয়স সত্তরের ওপর। আর এরা কেউ খালেদা-হাসিনা’র চাবি দেয়া পুতুল কিংবা গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী নন যে, কেউ বললেই নির্বাচন সফল করতে রেফারির ভূমিকায় নেমে যাবেন।

বি. দ্রঃ ১৯৯৬ ও ২০০১-এর দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে `৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ, তিনি একা হাঁটাচলাও করতে পারেন না; আর ২০০১ সালের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান একরকম অন্তরালেই থাকেন, কদাচিৎ দু’একটি সভা-সেমিনারে তার দেখা পাওয়া যায়। ম্যাডাম যেন আবার এই দুই সাবেক প্রধান উপদেষ্টাকে টার্গেট করে না বসেন। প্লিজ ম্যাডাম... এটুকু বেকুবতা করবেন না দয়া করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ