শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৩

ভারত হতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইধের ন্যায্য ফি চাওয়া যেহেতু অসভ্যতা!

দেশের মানুষ আজকাল অনেক কিছুতেই আর অবাক হন না। তবে আমি বাজি ধরছি (নিজের সাথে) পাঠক, আপনাকে অবাক করে ছাড়ব। আমি নিশ্চিত আমি এখন যে তথ্যটি দেব তাতে সবাই অবাক হবেন। তারপর রাগে দুঃখে ক্ষোভে নিজের চুল ছিড়বেন। আমি আরো নিশ্চিত যে, যাদের মাথায় আমার মতো প্রায় শূণ্য চুল তারা চুল ছিড়তে সাহস করবেন না!!
ভূমিকা দেওয়া শেষ। এবার খবর দেওয়ার পালা। তবে তার আগে একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে। আপনি কি আপনার ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে খুশি? আপনাদের উত্তর যাই হোক না কেন আমার খবরের তাতে কোন পরিবর্তন হবে না। মানে কিছুই যায় আসে না। দেশের সাধারণ মানুষের দৌড় আমাদের কম-বেশি সবার জানা আছে। কারণ আমি নিজেও সেই জনগণের একজন।
এখনও আমরা ব্লগে আর ফেসবুকে রাজা উজির মারি! আর স্বপ্ন দেখি একদিন বিপ্লব করে জনস্বার্থ বিরোধী সকল কর্মকান্ডের কবর রচনা করে দেব। দেশের মালিক জনগণ কথাটা বইয়ের পাতা থেকে বের করে এনে বাস্তবে এমনভাবে বসিয়ে দেব যে, জনগণ আর একথাটা মুখেও আনবে না। :-)
আমি বুঝতে পারছি পাঠক বিরক্ত হচ্ছেন। কারণ অহেতুক-অপ্রয়োজনীয় কথা বলছি। দুঃখিত!
কাজের কথাটা বলে ফেলার আগে একটা প্রশ্ন করি! আশা করি পাঠকরা রাগ করবেন না!! প্রশ্নটি হলো- আপনি প্রতিমাসে ইন্টারনেট বিল বাবদ কতো টাকা খরচ করেন? ২৫০ টাকা? ৩০০ টাকা? ৪০০ টাকা? ৫০০ টাকা? ১০০০ টাকা? ১৫০০ টাকা? পরিমাণটা বলবেন কী?
ধরুন, একজন ব্যবহারকারী মাসে গড়ে ৩০০ টাকা ইন্টারনেটের জন্য খরচ করে। এক হিসেব মতে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ। তাহলে গড়ে ৩০০ টাকা হিসেবে মোট খরচ হলো ৯৪৫ কোটি টাকা। সরকার এর উপর ভ্যাট পাচ্ছে ১৫ শতাংশ হারে মাসে ১৪১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তাহলে বছরে ভ্যাট বাবদ সরকারের আয় হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
বিনিময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার আমাদেরকে যে সেবা দিচ্ছে সেটা অত্যন্ত নিম্নমানের। অথচ ইন্টারনেট এখন আর বিলাসিতা নয়। মানুষের মৌলিক চাহিদার অংশ হয়ে গিয়েছে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সেকথা স্বীকারও করে। যেকারণে মাত্র কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর তনয় ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ক ‍উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় বলেছেন যে, তারা যদি আবারো ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে জনগণকে অল্প দামে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে। তিনি আরো বলেছেন যে, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়ে দেবেন।
আমার প্রশ্ন হলো আবার ক্ষমতায় এসে কেন কমাতে হবে? এখনই কেন নয়?
আপনাদের একটা তথ্য দেই।
আওয়ামী লীগের অত্যন্ত আস্থাভাজন পত্রিকা জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক রিপোর্টে (২১ অক্টোবর, ২০১৩) দেখা যায় যে, বাংলাদেশে ২৬০.৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ রয়েছে। আর সেই ব্যান্ডউইথ থেকে আমরা মাত্র ১৭ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করছি। বাকি ব্যান্ডউইথকে আমরা অব্যবহৃত রেখেছি!! যখন আমাদের পেটে খিদে তখন ফ্রিজ ভর্তি খাবার রেখে আমরা কেন অভুক্ত থাকছি? প্রশ্ন হলো কার স্বার্থে?
জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে আরও লিখেছে যে, বছরে মাত্র ৮০ কোটি টাকার বিনিময়ে ভারতের জনগণের জন্য ১০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা হবে। আপনি ভুল পড়েননি। মাত্র ৮০ কোটি টাকায় আমাদের দেশের জনগণের অধিকার বিক্রি করা হবে ভারতের কাছে। অথচ আমাদের দেশের জনগণ বর্তমানে যে দামে ব্যান্ডউইথ কিনছে তাতে ১০০ গিগাবাইটের দাম হয় ১০ হাজার কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশনের রুল অনুযায়ী ব্যান্ডউইথের মালিক জনগণ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা। যাতে করে জনগণ শুধুমাত্র তার আর্থিক সামর্থ্যের কারণে তার সম্পদ ভোগ করা থেকে বঞ্চিত না হয়। ডিজিটাল ডিভাইড বা ডিজিটাল বৈষম্য যাতে একটি দেশের মধ্যে তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা সরকারের দায়িত্ব। প্রশ্ন হলো- আওয়ামী লীগ সরকার কি সেই দায়িত্ব পালন করেছে? তারা কেন ২৪৩ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত রেখেছে? জনগণের সম্পদ জনগণের হাতে কেন পৌঁছে দিচ্ছে না?
ক্ষমতাসীনদের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার জনগণের রয়েছে। তাছাড়া, আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের সনদ’ নামের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের মানুষের কাছে ওয়াদা করেছিল জবাবদিহি করার। তারা বলেছিল, সকল কাজে স্বচ্ছতা আনবে। জনগণের দেশ জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করার অঙ্গীকার করেছিল তারা। এই অবস্থায় জনগণ ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম চালিকাশক্তি ইন্টারনেটের গতি নিয়ে কথা বলতেই পারে। জানতে চাইতে পারে, কেন ব্যান্ডউইথ রেখে দিয়ে জনগণকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে?
কি বলেছি না, আপনাকে অবাক হতেই হবে। পেরেছি আমার কথা রাখতে? ভালো থাকবেন।
………………………………………………………………………………………………………
পুনশ্চ: ডিজিটাল বাংলাদেশ শ্লোগান দিয়ে জনগণের ভোট নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। জনগণের ভোটের মর্যাদা তারা দেয়নি। তারা বলছে আবার ক্ষমতায় এলে ব্যান্ডউইথের দাম কমাবে। যেমনটা তারা বলছে যে, আবার ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করবে।
এদিকে, যে ব্যান্ডউইথ এদেশের জনগণ কিনছে ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে সেই ব্যান্ডউইথ মাত্র ৮০ কোটি টাকায় ভারতকে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মানুষের চেয়েও ভারতের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছে বেশি প্রিয় হয়ে গেলো?
আমি বিশ্বাস করতে চাই জনকণ্ঠে আজকে যে খবর প্রকাশিত হযেছে সেটা ভুল। এমন কেউ কি আছেন যিনি আওয়ামী লীগকে বোঝাবেন যে, আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাধ্য করেছিলেন ভারতীয় সেনাদের বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে ফিরিয়ে নিতে। তিনি বড় প্রতিবেশীর পাশে মাথা উচুঁ করে কিভাবে থাকতে হয় সেটা তার বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন। তার গড়া আওয়ামী লীগের আজকে এই অধঃপতন কেন?
এই দেশের মানুষ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছিল। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে স্বাধীন হওয়া দেশ কেন মাথা নত করবে?
স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান ছিলো বৈকি। তারা আমাদের ১ কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। একাধিক সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ভারতের ভূখন্ডে স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছিল। প্রায় দুই লাখ যোদ্ধাকে নিয়মিত বেতন ভাতা দিয়েছে। সেজন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সেই ঋণ শোধের জন্য অনেক কিছুই করেছে।
সম্প্রতি নদীতে বাধ দিয়ে আমাদের রাস্তার সহন ক্ষমতার অতিরিক্ত ভারবাহী লরি দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম কোলকাতা থেকে ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পানির হিস্যা ঠিকমতো বুঝে না পেয়েও উচ্চবাচ্য করেনি। সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেনেও কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছে। সীমান্তে ফেলানীসহ বাংলাদেশীদের মৃত্যুকে মেনে নিচ্ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে ভারতীয় মালিকানা তৈরির পরিবেশ করে দিয়েছে।
এতো কিছুর পরও পানির দামে ২০ বছর মেয়াদী নবায়নযোগ্য চুক্তিতে ব্যান্ডউইথ দিতে হবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ