বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩

টাকার অভাবে কাঁধে মায়ের লাশ!

মাত্র ১শ’ টাকা না দিতে পারায় লাশ নামানোর স্ট্রেচার দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে নিরুপায় হয়ে চতুর্থ তলা থেকে মায়ের লাশ কাঁধে করে নিচ তলায় নামিয়েছেন এক হতভাগা ছেলে।

বৃহস্পতিবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটে।

এদিকে এ ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ায় নিন্দার ঝড় ওঠেছে সর্বত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লালমনিরহাটের বাড়াইপাড়া গ্রামের এন্তাজ আলীর স্ত্রী বৃদ্ধা নছিরন অসুস্থ অবস্থায় বুধবার বিকেলে রংপুরে আসেন চিকিৎসা নিতে। চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে তাকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। সেই সাথে তাকে দ্রæত অক্সিজেন দেয়ার পরামর্শ দেন।

পরামর্শ অনুযায়ী নছিরনকে রমেকের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হয় বুধবার সন্ধ্যায়। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত বার বার কাকুতি-মিনতি করার পরেও হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়নি। ফলে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যান নছিরন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, মৃত নছিরনের লাশ হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে নিচে নামিয়ে আনার জন্য কর্মচারীদের অনুরোধ করা হলে তারা একশ’ টাকা দাবি করে। দাবিকরা টাকা দিতে না পারায় তারা স্ট্রেচার দেয়নি নিহতের স্বজনদের। শেষ পর্যন্ত কাঁধে করে লাশ নিয়ে নিচে নামিয়ে আনে হতভাগা শরিফুল।

এদিকে, চিকিৎসার জন্য টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে হতদরিদ্র নছিরনের স্বজনরা। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সামনেই মায়ের লাশ নিয়ে ছেলে শফিকুল ভিক্ষা শুরু করে। তার কাকুতি-মিনতিতে অনেকেরই মন গলে। দিনভর লাশ সামনে রেখে ভিক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করে তার ছেলে ও স্বজনরা। পরে সে টাকায় লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

ছেলে শফিকুল জানান, সন্ধ্যা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত তার মা শ্বাসকষ্টে কাহিল হয়ে পড়ে। বার বার কাকুতি-মিনতি করার পরেও অক্সিজেন দেয়া হয়নি। রাত তিনটায় এক চিকিৎসক চিরকুটে ট্যাবলেটের নাম লিখে বাইরে থেকে আনতে বলেন। অনেক কষ্টে ওষুধ নিয়ে এসে খাওয়ানোর পর আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তার মা। ভোরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

শফিকুল দাবি করেন, চিকিৎসকদের অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় তার মার মৃত্যু হয়েছে। তাদের সহায়-সম্বল কিছুই নেই। যে টাকা নিয়ে এসেছিলো বাইরে থেকে ওষুধ কিনেই তা ফুরিয়ে গেছে। লাশ বাড়িতে নেয়ার মতো কোনো টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে মায়ের লাশ নিয়ে ভিক্ষা করতে বসতে হয়েছে।

এদিকে মায়ের মৃত্যুর পর শফিকুলের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। মায়ের লাশ নিয়ে কাঁদতে দেখে অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত তিন হাজার টাকা সংগ্রহ করে শফিকুল তা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করে। পরে মায়ের লাশ নিয়ে রওনা দেয় বাড়ির দিকে।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ