রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

অনিশ্চয়তার মুখে ৫০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা

রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা। আগামী ৪ঠা নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা।  শেষ হবে ২০শে নভেম্বর। এতে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই ২১শে নভেম্বর থেকে অষ্টম শ্রেণী ছাড়া অন্যান্য শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু ঠিক সময়ে পরীক্ষা   নেয়া যাবে কি না, তা স্পষ্ট করে  কেউ বলতে পারছে না। ২০শে নভেম্বর থেকে শুরু হবে সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। চলবে ২৮শে নভেম্বর পর্যন্ত। এই পরীক্ষায় প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর অংশ নেয়ার কথা। এই পরীক্ষার পরপর ৭ থেকে ১৮ই ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শুরু হচ্ছে সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১লা নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা। পাঁচটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে ২৩শে নভেম্বর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ১৬ই নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৫শে নভেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া  দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও হবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে। অন্যতম বৃহৎ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভর্তি পরীক্ষার্থীরাও চিন্তিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আলোচনার সূত্রপাত না হলে টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে ১৮ দলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ফলে পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এছাড়া পরীক্ষা গ্রহণের কার্যক্রম নিয়ে চিন্তিত শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ও পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ও অস্থিরতার মুখে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করা যাবে কি না, তা-ই এখন সবার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু পরীক্ষাই নয়, পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে ক্লাস ও প্রস্তুতি নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিরোধী দল ইতিমধ্যে আভাস দিয়েছে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলতি মাসের  শেষ সপ্তাহ থেকেই হরতালসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেবে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষায়’ যা যা করার তা-ই করা হবে। সরকার ইতিমধ্যে রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অভিভাবক ঐক্য  ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা শুধু উদ্বিগ্নই নন, আদৌ পরীক্ষা হবে কি না- সেটাই এখন তাদের চিন্তার কারণ হয়ে  গেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে সমঝোতা না হলে এবার ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকতে হবে। গতবারও রাজনৈতিক কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছিল। স্থগিত করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও। অভিভাবক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নীপা সুলতানা বলেন, আমরা বাচ্চাদের পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হরতাল, ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালিত হবে। এর মধ্যে আবার পরীক্ষাও হবে। ছেলে-মেয়েরা কিভাবে পরীক্ষা দিবে তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পরীক্ষা দিয়ে সুস্থভাবে বাসায় ফিরতে পারবে কিনা সেটাও চিন্তার বিষয়। তিনি বলেন, সরকার ও বিরোধী দলের উচিত একটা সমঝোতায় আসা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের  চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তারা যেন পরীক্ষার ক্ষতি হয় এমন  কোন কর্মসূচি না দেয়। তিনি বলেন, নভেম্বর মাস থেকে পাবলিক পরীক্ষা শুরু হবে। এখন আমরা জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করছি। এরপর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ফোনালাপের বিষয়টি ইতিবাচক। এরপর আস্তে আস্তে ভালর দিকে যেতে পারে পরিস্থিতি। অধ্যাপক আহমদ বলেন, অনিশ্চয়তাতো রয়েছেই। তারপরও প্রায় ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন করেছেন- এটা একটা ভাল দিক। হরতাল প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রবীণ এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বাস্তবতাতো দেখতে হবে। ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৮ জন মারা গেছেন। হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অনেকের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। অনেককে জেলে নেয়া হয়েছে। সে বিষয়টাও দেখতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ