রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

চট্টগ্রামে হরতাল গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর, তাণ্ডব

চট্টগ্রাম থেকে: গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে শুরু হলো হরতালের প্রথম দিন। গতকাল ৬০ ঘণ্টার টানা হরতালের শুরুতে জনশূন্য হয়ে পড়ে পুরো নগরী। রাস্তাঘাট ছিল পুরোপুরি ফাঁকা। সরকারি-বেসরকারি সব    
প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেখা গেছে। যান চলাচল ছিল না বললেই চলে। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বড় ধরনের কোন লেনদেন হয়নি। বন্দরের অভ্যন্তরে জাহাজে মালামাল ওঠানামার কাজ চলেছে। তবে পণ্য নিয়ে কোন পরিবহন শহর ছেড়ে যেতে পারেনি। তাই ডেলিভারি হচ্ছে না। হরতাল পালন করতে গিয়ে একাধিক জায়গায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল ভোররাত থেকেই রাস্তায় সক্রিয় দেখা যায় বিএনপি-জামায়াতের নেত-কর্মীদের। তাদেরকে প্রতিহত করতে মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের অবস্থান। প্রথম সংঘর্ষ ঘটে নগরীর আলমাস সিনেমার সামনে। সেখানে ১৮ দলের ১০-১২ জন নেতা-কর্মী রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা বেশ কয়েকটি বড় বাস ভাঙচুর করে। এরপর পিকেটারদের রোষানলে পড়ে গাড়ি ভাঙচুর হয় শহরের ওয়াসা মোড়, কাজীর দেউড়ি, চৌমুহনী, বন্দর টিলা এলাকায়। এসব জায়গায় অন্তত ১০/১২টি ছোটবড় বাস, অটোরিকশা, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাকে হামলা চালানো হয়। দুপুরের দিকে বিএনপি অফিসের কাছে একটি সিএনজি অটোরিকশায় (চট্টমেট্রো-ট-১২-৯০৯৯) আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একই ভাবে হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় নুসরাত নাহরিন নামের এক মহিলা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। তিনি হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা। 
হরতালের সমর্থনে নগরীর বাকলিয়া এলাকায় সকাল সাড়ে সাতটায় মিছিল বের করেন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন। অন্যদিকে নিজের দলের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বেশ সক্রিয় ছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। 
পরে আয়োজিত বিভিন্ন সমাবেশ থেকে বিএনপি নেতারা জানান, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশের জনগণ কোন নির্বাচন মেনে নেবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, আমরা আইন মানি কিন্তু শেখ হাসিনার কোন আইন মানি না। তাই এই অবৈধ সরকারের কোন কথাই আপনারা শুনবেন না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাবো। যতদিন পর্যন্ত এই সরকারের পতন হবে না তত দিন পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এই সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, নির্যাতন, নিপীড়ন, মামলা-হামলাতে জনজীবন অতিষ্ঠ।
অন্যদিকে জামায়াতের নগর প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ এক বিবৃতিতে জানান, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন জনগণ মানে না। ১৮ দলীয় জোটের আহবানে দেশব্যাপী ২৭-২৯ অক্টোবর তিনদিনের ৬০ ঘণ্টা টানা হরতাল চলাকালে জামায়াতে ইসলামী থানায় থানায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও পিকেটিং অব্যাহত রাখবে। জামায়াত নেতারা মনে করেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধ। এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। এই অবৈধ সরকারকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে হটাতে হবে।
এদিকে হরতালে সহিংসতা ঠেকাতে চট্টগ্রাম জেলায় পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানও উপজেলায় বিশেষ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। 
নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মাসুদ উল হাসান বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে সাদা পোশাকে আইনশঙ্খলা বাহিনীর লোকজন নিয়োজিত আছেন। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ