বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৩

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মুত্যু হলে যাবজ্জীবন

sangs2.jpg আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে কোনো ব্যক্তির মুত্যু হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ)-২০১৩’ পাস হয়েছে।বৃহস্পতিবার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) সংক্রান্ত বিল-২০১৩’ উথ্থাপন করলে তা পাস হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি কণ্ঠ ভোটে দিলে তা বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা না থাকায় কোন রকম বির্তক ছাড়াই সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। এদিন পিতামাতার ভরণ-পোষণ বিল নামে আরও একটি বেসরকারি বিল পাস হয়। এই নিয়ে নবম জাতীয় সংসদে তিনটি বেসরকারি বিল পাস হলো।
এর আগে গত বুধবার অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ বিল দু’টি পাশের সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রী ছাড়া অন্য সদস্যরা আইন প্রণয়নের জন্য কোনো বিল আনলে তা বেসরকারি বিল হিসেবে বিবেচিত হয়। সংসদে বেসরকারি বিল পাসের ঘটনা খবুই কম। এর আগে ২০১১ সালে সাবের হোসেন চৌধুরীর ‘দ্যা লেপারস (রিপিল) অ্যাক্ট-২০১১’ নামে আরো একটি বিল পাস হয়। পূর্বের ৮টি সংসদে উত্থাপিত ২৫৫টি বেসরকারি বিলের মধ্যে পাস হয়েছে মাত্র ৬টি।
‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ)-২০১৩’ বিলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সরকারি কর্মকর্তার হেফাজতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ)-২০১৩’ বিলে বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্মকর্তার বা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির নূন্যতম যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ক্ষেত্র বিশেষে অপরাধীকে উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দণ্ডপ্রাপ্তকে অতিরিক্ত দুই লাখ টাকার জরিমানা দিতে হবে।
বিলে বলা হয়েছে, নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ অথবা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদের কার্যকারিতা প্রদানের লক্ষ্যে বিলটি আনা হয়েছে। এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তি আদালতে নির্যাতনের অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই ব্যক্তির বিবৃতি লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা তার পক্ষে কর্তব্যরত কোনো ব্যক্তির গাফিলতি বা অসতকর্তার কারণে অভিযোগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলে অভিযোগকারীকেই প্রমাণ করতে হবে তার কোনো দোষ নেই। অপরাধের জন্য দণ্ড ঘোষণার দিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে জানাতে হবে এটি জামিন অযোগ্য। এটি পূরণ করা ছাড়া কোনো আপিল করা যাবে না। কোনো অপরাধী যদি অন্য দেশের নাগরিক হন তাহলে প্রত্যাবর্তন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। সংবিধান অনুযায়ী, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করার বিধান থাকলেও তা করা হয় না। এ ধরনের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ রাষ্ট্রের কাঠামোকে দুর্বল করে। সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে, আইনের শাসন সুরক্ষিত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং সাধারণ মানুষকে সরকারি প্রশাসনযন্ত্র এবং পুলিশের বে-আইনি আচরণ অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষায় এই বিল আনা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ