সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৩

ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসঃ সাম্রাজ্যবাদের নতুন রূপ

ভাবতে ভালই লাগে, বাঙ্গালীর গর্ব করার বিষয়ও বটে, আমাদের দেশে শান্তিতে নোবেল জয়ী রয়েছেন। অর্থনীতিবিদ হয়েও শান্তিতে নোবেল জয় করেছেন, করতেই পারেন তার গ্রামীন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাবলম্বী হওয়ার মাধ্যমে অনেকে দু’বেলা খেয়ে বেঁচে আছেন! সমাজে অন্ন এবং অর্থের নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে তিনি আক্ষরিক অর্থে শান্তিই প্রতিষ্ঠা করেছেন! হ্যাঁ শান্তিতে নোবেল জয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের কথা বলছি। যিনি ১৯৭৬ সালে গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে দারিদ্রতা কে জাদুঘরে পাঠাতে চেয়েছিলেন। সরকারের কোন পদক্ষেপ এ নয়, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ইউনূসের গ্রামীন ব্যাংক এর কল্যানে! যেখানে শত শত কোটি টাকা এবং উচ্চতর রাজনৈতিক যোগাযোগ প্রয়োজন একটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদনের জন্যে সেখানে আমাদের দেশের ৮৪ লক্ষ নিন্মবিত্ত পরিবারের নারীরা ব্যাংকের মালিক! এটা কি সরকার করেছে? এটি সম্ভব হয়েছে ইউনূস সাহেবের জন্যে!
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিসংখান দেখলে বুঝা যায় কোন বিভাগ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। বাংলাদেশের অর্থনীতির সিংহ ভাগ আসে বৈদেশিক রেমিটেন্স থেকে, যা আমাদের দেশের শ্রমিক ভাইয়েরা দেশের বাইরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে উপার্জন করেন। আর দেশের ভিতরের কোন খাতের কথা যদি বলেন তাহলে সেটা অবশ্যই পোশাক শিল্প। যেসব শ্রমিক দেশের বাইরে যাচ্ছে তাঁরা কি গ্রামীন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যাচ্ছে? পোষাক শিল্প কি গ্রামীন ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে বা শহর-উপশহরের কয়জন নাগরিক গ্রামীন ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে? ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস আর তার গ্রামীন ব্যাংকের প্রধান টার্গেট হল গ্রামের অসহায়, নিন্মবিত্ত ও অশিক্ষিত নারী সমাজ। যাদের ঋণ দিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা বুঝিয়ে ৬০ ভাগের বেশি সুদ আদায় করতে পারবে। তাই বিভিন্ন যুক্তিতর্কের খাতিরে ডঃ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ তত্ত্বের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণের অলীক স্বপ্ন ধোপে টেকেনা।১৯৭৬ সাল থেকে তিনি গ্রামীন ব্যাংক এর মাধ্যমে দারিদ্রতাকে জাদুঘরে পাঠাতে চাইলেও, মালিক রূপী ৮৪ লক্ষ নারী বাস্তবিক অর্থে ঋণ গ্রহীতাই রয়ে গেছে। তিনি অন্য কোন দিকে সফল না হলেও নিজের আখের ঠিকই গুছিয়ে নিয়েছেন।তিনি নারীদের পুঁজি করে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসায় করে এমন একটি জায়গায় পৌছেছেন যেখান থেকে হাত ভাঙ্গার ধমক দেয়া যায়, রাজনৈতিক দলের প্রধান বা নেতা না হয়েও নির্বাচন মানব না বলা যায়, সভা-সেমিনার করে তত্ত্ব তুলে ধরা যায়, ইতিবাচক কথা বলা যায়, সংবাদ সম্মেলন করে পত্রিকার-টিভি চ্যানেলের শিরোনাম হওয়া যায় কিন্তু সমাজের দারিদ্র পীড়িত মানুষের জন্যে গভীর ভাবে কাজ করা যায় না।
ডঃ ইউনূসের সাথে প্রভাবশালী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান এবং উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্পর্ক লক্ষনীয়। বিশেষ করে বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদী দেশের প্রধানদের সাথে তার দহরম মহরম বেশি। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে সরকারকে ইউনূসের বিষয়ে হুমকি-ধামকি দিয়েছে, হুঁশিয়ারি উচ্চারন করেছে, সরকারকে সতর্কতা মূলক বার্তা পাঠিয়েছে কিন্তু ফল তেমন অনূকুলে আসেনি। বেরসিক সরকার তাদের কথা আমলে নেয়নি। কেন ডঃ ইউনূসের প্রতি তাদের এত দরদ? কি সার্থ তাদের? দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ চাওয়া ও আইনি বিষয় গুলো বাইরে নিয়ে যাওয়া কি প্রমাণ করেনা তিনি বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদীদের তল্পীবাহী ধারক ও বাহক?
ডঃ ইউনূসের রাজনৈতিক উচ্চাবিলাসের কথা এখন আর গোপন কোন বিষয় নয়। ১/১১ এর পরবর্তী সময়ে তার প্রভু রাষ্ট্রের সমর্থনে বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল সমাজের কয়েকজনকে নিয়ে “নাগরিক শক্তি” নামক রাজনৈতিক দল গঠন করেন। জনসমর্থনহীন ও সামরিক শাসকদের ছত্রছায়ায় গঠিত “নাগরিক শক্তি” কিছুদিনের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরিস্থিতি অনূকুলে নয় বলে ইউনূস নিজেই ফিরে আসেন রাজনীতি থেকে। কিন্তু যার মধ্যে ক্ষমতার লোভ রয়েছে, সে কি আর চুপ করে থাকতে পারে? বৈধ হোক অবৈধ হোক বা কোন দলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে হোক যদি ক্ষমতায় আসা যায় তাহলে ক্ষতি কি? শুরু হলো ইউনূসের ষড়যন্ত্র। আবুল হোসেনের দূর্নীতির কথা ছড়িয়ে পরার সাথে সাথে তিনি বিশ্বব্যাংক কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ঋণ দেয়ার জন্যে নিষেধ করলেন। পদ্মা সেতু নিয়ে পরবর্তী নাটকগুলো আমাদের সবারই জানা। ডঃ ইউনূসের এবারের জন্মদিনের উপহার ছিল যুক্তরাষ্ট্র কতৃক জিএসপি সুবিধা বাতিল। দেশের অধিকাংশ মানুষই মনে করেন জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্যে মাননীয় বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ডঃ ইউনূস দায়ী। ঐ সময় বেগম জিয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী দৈনিকের অনলাইন ভার্সনে একটি আর্টিকেল লিখেছিলেন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ কামনা করে। বেশ কিছুদিন আগেও ডঃ ইউনূসের সাথে মির্জা ফখরুল সহ বিরোধী দলীয় নেতারা সাক্ষাত করেছেন, প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলীয় বুদ্ধীজীবি মহল তার সাথে বৈঠক করেন কিন্তু দেশ ও জাতি সেসব বৈঠকে কি আলোচনা হয় তার বিষয়ে অবগত নয়। সর্বশেষ তিনি বলেছেন- “সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচন মানব না”. হ্যাঁ একজন সাধারন মানুষ হিসেবে এই কথাটি সবাই বলতে পারেন। কিন্তু ডঃ ইউনূসের মত একজন মানুষ যিনি সংকট নিরসনে এগিয়ে আসবেন তিনি “নির্বাচন মানব না” কথাটি বলতে পারেন না। তিনি কোন দলের প্রধান নন বা কোন রাজনৈতিক দলের নেতা নন, তিনি সুশীল সমাজের অংশ, তার কথাটি গ্রহন যোগ্য নয়। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করার সুপারিশ করেছিলেন!
ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে উচ্চতর হারে সুদ নিয়ে ঋণ দেয়া এবং সমকামীদের স্বীকৃতি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন জাগে মনে ইসলামে কি সুদ এবং সমকামী বিয়ে বৈধ? যদি বৈধ না হয় তাহলে আল্লামা শফির এই বিষয়ে বক্তব্য কোথায়? শুধু কি বিএনপির সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে আল্লামা শফি ডঃ ইউনূসের সুদের ব্যাবসা এবং সমকামীতা বিষয়ে আপোষ করলেন? এর মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মান যে আল্লামা শফি হুজুর ইসলাম কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতার ভাগ পেতে চান!

অস্বীকার করব না নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনূস দেশের একজন গন্যমান্য ব্যক্তি এবং তিনি দেশের সম্পদ। কিন্তু তিনি নোবেল পুরষ্কার জয়ের পর আজ অবধি এক দিন ও এমনকি বিশেষ দিনগুলোতে যেমন স্বাধীনতা দিবস, মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস বা বুদ্ধিজীবী দিবসে শহিদ মিনার, স্মৃতিসৌধে তার পা পরেনি। একজন সাধারন মানুষ এমনকি একটি শিশুর মধ্যেও এই আবেগটি রয়েছে, খালি পায়ে শহিদ মিনার গিয়ে একটি ফুল দিয়ে আসে তাঁরা। অথচ স্বাধীন বাংলার আলো বাতাসে বড় হয়েও সেই আবেগ, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখনো ডঃ ইউনূসের মধ্যে তৈরি হয়নি। যিনি গোটা বিশ্বের তরুণদের নেতা মনে করেন নিজেকে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভা-সেমিনার করেন এবং বলেন তরুণদের নিয়ে এই ক্ষুধাময় পৃথিবী পাল্টে দিবেন, তিনি শাহাবাগ গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে একটি শব্দও বলেননি। তাহলে কি তিনি আমাদের দেশের তরুন সমাজকে বাইরে রেখে পৃথিবী পাল্টে দিতে চান? মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চলছে দেশে, অনেক বুদ্ধিজীবী-রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব মতামত দিয়েছে। কেউ হয়ত পক্ষে কেউ বিপক্ষে। কিন্তু ডঃ ইউনূস এই বিষয়ে প্রথম থেকেই নির্বাক!
ডঃ ইউনূসের প্রতি বর্তমান সরকারের যত বিরূপ সমালোচনা রয়েছে সেগুলো পাশ কাটিয়ে তিনি যদি দেশের মঙ্গলের জন্য কিছু করতেন তাহলে হয়ত তার উদার নীতির প্রকাশ পেত। নোবেল পুরষ্কার পেয়ে তিনি অনেকটা অন্ধের মত আচরণ করছেন বলে মনে হয়। সাধারন মানুষ নোবেল পুরষ্কার কি এটা কমই বুঝেন। নোবেল পুরষ্কার বিজয়ের মাধ্যমে মানুষের ভালবাসা, জনসমর্থন বা রাজনৈতিক দলের ঘোষনা দিয়ে ক্ষমতায় আশা যায়না। এর উদহারন হিসেবে বলতে পারি মিসরের একজন নোবেল বিজয়ীর কথা। তিনি বিরোধী শিবিরের নেতৃত্বে থাকলেও বর্তমানে পলাতক রয়েছেন! শত সমালোচনার মধ্যেও যদি ডঃ ইউনূস প্রধান দুই দলের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এগিয়ে আসতেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিজের ইমেজ ব্যবহার করে বিস্বব্যাংকে রাজি করাতেন তাহলে হয়ত তিনি মানুষের মনে জায়গা করে নিতেন। তিনি মুকুট পড়েছেন ঠিকই কিন্তু মুকুটের সম্মান রক্ষা করতে জানেন না!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ