শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৩

দাঁতের ক্ষয়রোগ ও তার প্রতিকার

দাঁতে ক্ষয়রোগকে সাধারণত ডেন্টাল ক্যারিজ বলা হয়। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াল কারণে রোগ। এর কারণে দাঁতের কিছু কিছু নির্দিষ্ট স্থানে কালো ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় চিকিৎসা না করা হলে দাঁতের এনামেল এবং ডেন্টিন ছিদ্র হয়ে অভ্যন্তরীণ টিস্যুগুলোতে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দাঁত হারানোর সম্ভাবনা থাকে। কোন কোন সময় এ কারণে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
ডেন্টাল ক্যারিজ সাধারণত মুখের লালার উপস্থিতিতে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত তিনটি বস্তুর সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়। যেমন-
১। ব্যাকটেরিয়াল প্লাক: যা ডেন্টাল ক্যারিওজেনিক ব্যাকটেরিয়া বহন করে।
২। ব্যাকটেরিয়াল সাবস্টেট যেমন- চিনি এবং অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য।
৩। দাঁতের বহির্গঠন।
ডেন্টাল ক্যারিজ দাঁতের মসৃণ এবং অমসৃণ উভয় অংশেই হতে পারে। তবে দাঁতের অমসৃণ উপরিভাগেই সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।
এর কারণে সাধারণত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়ার পর দাঁতের অমসৃণ উপরিভাগের ছোট ছোট গর্তে খাবার কণাগুলো জমা হয়ে থাকে। ফলে মুখের লালার উপস্থিতিতে ক্যারিওজেনিক ব্যাকটেরিয়াগুলো সেখানে বংশবৃদ্ধি করে। পরে উক্ত ব্যাকটেরিয়াগুলো এক ধরনের এসিড নিঃসৃত করে, যা দাঁতের এনামেলের উপর কালো রংয়ের ক্ষতের সৃষ্টি করে। এরপর উক্ত ক্ষত স্থানেও পুনরায় একইভাবে খাবার জমা হয় এবং ক্ষতস্থানটি ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবেই ক্ষত স্থানটি অর্থাৎ ক্যারিজটি যখন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁতের অভ্যন্তরীণ Dental Pulp বা সংবেদনশীল স্নায়ুকে স্পর্শ করে, ঠিক তখনই প্রদাহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু দাঁতের মসৃণভাগে একটু ভিন্নভাবে ডেন্টাল ক্যারিজ-এর সৃষ্টি হয়। গ্লুকান নামের এক ধরনের পলি ম্যাকারাইডের সাহায্যে ক্যারিওজেনিক ব্যাকটেরিয়াগুলো দাঁতের মসৃণভাগে পাতলা একটা আবরণী তৈরি করে। পরে একইভাবে পূর্ববর্তী আবরণীর ওপর পুনরায় ব্যাকটেরিয়াল প্লাকগুলো জমা হয় এবং এসিড নিঃসৃত করার মাধ্যমে দাঁতের মসৃণ এনামেলের উপর কালো ক্ষতের সৃষ্টি করে। এ ক্ষতস্থানটি ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে যখন সংবেদনশীল স্নায়ু বা ডেন্টাল পাল্প পর্যন্ত পৌঁছায় তখন প্রচুর ব্যথা অনুভূত হয়। এ অবস্থাকে পালপাইটিস বলা হয়। ডেন্টাল ক্যারিজ ছাড়াও দাঁতের বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়রোগ হতে পারে। কোন কোন সময় দেখা যায় দাঁতের crown এবং Root এর মাঝামাঝি স্থানেও ক্ষতের সৃষ্টি হয়। দাঁতের এক অবস্থাকে সারভাইক্যাল এট্রিশন বলা হয়। সাধারণত ভুল পদ্ধতিতে ব্রাশ করা এবং যে সব রোগীর গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা আছে তাদের বেলায় এসব রোগ বেশি দেখা যায়। কোন কোন সময় দাঁতের অমসৃণ উপরি ভাগ ক্ষয়ে সমান হয়ে যায় এবং রোগী ঠাণ্ডা কিংবা গরম কিছু মুখে দিলে প্রচুর ব্যথা অনুভব করেন। দাঁতের এমন ক্ষয়রোগকে Occwsal Errosion বলা হয়। যে সব রোগী পান-সুপারি অধিক সময় ধরে চিবিয়ে খান তাদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি দেখা যায়। নির্ভুল চিকিৎসার পূর্বশর্ত হলো সঠিক রোগ নির্ণয়। যদিও ডেন্টাল ক্যারিজকে খালি চোখেই  বোঝা যায়। কিন্তু এর গভীরতা এবং দাঁতের ব্যথার কথা চিন্তা করে সঠিক ও নির্ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। সে কারণেই তীক্ষ্ণ প্রোব, প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা এবং ডেন্টাল মিরর-এর সাহায্যে দাঁতের ক্ষত স্থানের সঠিক অবস্থা বুঝে চিকিৎসা করা হয়। প্রয়োজন হলে ডেন্টাল এক্স-রে এর সাহায্যও নেয়া যেতে পারে। দাঁতের ক্ষয়রোগের চিকিৎসা সাধারণত Filling অথবা Root Canal Treatment দ্বারা করা হয়। যদি ডেন্টাল ক্যারিজ শুধুমাত্র দাঁতের এনামেল পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে তবে সেক্ষেত্রে Silver Filling-এর নিচেই Base হিসেবে Zno-Eugenul Filling ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু যদি এর চেয়ে গভীরে অর্থাৎ ডেন্টাল পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে তবে এমতাবস্থায় Zno-Eugenul Filling-এর নিচেই Seconalary Denton তৈরি হওয়ার জন্য তৃতীয় স্তর হিসেবে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও যদি Pulpitis-এর লক্ষণ  বোঝা যায় অর্থাৎ দাঁতের ক্যারিজের কারণে যদি ব্যথা অনুভূত হয়, সেক্ষেত্রে Root Canal treatment সংক্ষেপে R.C.T  করে নেয়ার পর Filling অথবা ক্যাপ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সামনের দাঁতে সৌন্দর্যের কথা চিন্তা করে Silver Filling-এর পরিবর্তে Light care Filling করে পাশের দাঁতের রংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়। এ ধরনের Filling-কে অনেকে Photo Filling বা Light Cure Composit Filling বলে থাকে। Cervical Attriton-এর বেলায় দাঁত অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়। সেক্ষেত্রে Glass Inmor Filling  দিয়ে দাঁতের সংবেদনশীলতা কমানো যায়। Occlusal Errosion হলে দাঁতের ডেন্টিন এবং কখনো কখনো ডেন্টাল পাল্প বেরিয়ে যায়। এ কারণে দাঁত অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় দাঁতে আরসিটি করার পর স্থায়ী ফিলিং অথবা সিরামিক ক্যাপ করার ব্যবস্থা করা হয়। সর্বোপরি শরীরে যে কোন রোগই হোক না কেন, তা সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিয়মিত নিয়মমাফিক দাঁত মাজা এবং প্রতি ছয় মাস অন্তর দন্ত চিকিৎসকের দ্বারা দাঁত ও মাড়ি পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। প্রিয় পাঠক দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ