শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৩

আমৃত্যু কারাদণ্ড- আপিল করবেন আলীম

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা এবং লুটতরাজের ৯টি অভিযোগের প্রমাণ
পেয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে, আবদুল আলীমের মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য। তবে বয়স ও পঙ্গুত্বের কথা বিবেচনা করে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হলো। অবশ্য রাষ্ট্রপক্ষের আনা ৮টি অভিযোগ থেকে আলীমকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি এম ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল এ রায় ঘোষণা করে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা সবসময় যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে। কিন্তু যে বিচার হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক মানের নয়। মানসম্মত বিচার হচ্ছে না বলেই তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রায়ে আমি সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট নই। ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছি। পুরো রায় দেখে আপিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আবদুল আলীম সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সাজ্জাদ বিন আলীম। তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ রায় দেয়া হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হবে। প্রসিকিউশনের দাখিল করা অভিযোগগুলোর মধ্যে ২, ৮, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত আলীমকে আজীবন কারাদণ্ডের আদেশ, ৬, ৭, ৯ ও ১২ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিটিতে ২০ বছর করে ও ১ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছর কারাদণ্ড  দেয়া হয়। ৩, ১১, ১৩, ১৫, ১৬ ও ১৭ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি বলে ট্রাইব্যুনাল এই অভিযোগগুলো থেকে আলীমকে অব্যাহতি দেয়। এছাড়া ৪ ও ৫ নম্বর অভিযোগে প্রসকিউশন কোন সাক্ষী ও তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে না পারায় তা বাতিল ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।
রায় ঘোষণার মুহূর্ত: আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় শুনতে ট্রাইব্যুনাল ও তার আশপাশ এলাকায় সকাল থেকেই ভিড় করতে থাকেন গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মামলা সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাক্ষীসহ অভিযুক্ত আলীমের নিকটজনরা। স্থান সঙ্কুলানের কারণে ট্রাইব্যুনাল ২-এর এই মামলার রায় ট্রাইব্যুনাল ১-এর এজলাসে ঘোষণা করা হয়। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা ৫০ মিনিট। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ট্রাইব্যুনাল ১-এর এজলাস কক্ষ। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাদের নিজ নিজ আসন গ্রহণ করেন। এর আগে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় অভিযুক্ত আবদুল আলীমকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। তাকে কিছুক্ষণ রাখা হয় ট্রাইব্যুনালের নির্ধারিত কারা কক্ষে। ১০টা ৩৫ মিনিটে ঘিয়ে রঙের ফতুয়া ও সাদা লুঙ্গি পরিহিত হুইল চেয়ারে বসা আলীমকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। ১০টা ৫৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সূচনা বক্তব্যে বলেন, আজ ট্রাইব্যুনাল ২-এর অভিযুক্ত আবদুল আলীমের মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য আছে। তার আগে উভয় পক্ষের আইনজীবী ও সকলের জ্ঞাতার্থে কিছু কথা বলার প্রয়োজনবোধ করছি। ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে  ট্রাইব্যুনালের রায়  ঘোষণার পর তা কোন কোন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত রায় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করা হয়। যা উচিত নয়। রায়ের টেক্সট না পড়ে মন্তব্য করা বিচার বিভাগের জন্য ক্ষতিক্ষর। তাই সবাইকে বলছি আগে রায় পড়ুন, তারপর মন্তব্য করুন। এখানে এটর্নি জেনারেল উপস্থিত আছেন। তার উদ্দেশে বলছি আপনি সবাইকে এই বিষয়টি অবগত করবেন। তিনি বলেন, প্রকাশিতব্য ১৯১ পৃষ্ঠার ১৩৭টি প্যারা পড়া হবে। ১০টা ৫৮ মিনিটে বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম  আলীমের বিরুদ্ধে রায়ের প্রথম অংশ পড়ে শোনান। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, একাত্তরের ২৫শে মার্চের গণহত্যা, পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ড, রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন বিষয়ে আলোকপাত করেন। পরে অভিযুক্ত আবদুল আলীমের পরিচিতি, শিক্ষাগ্রহণ, তৎকালীন কনভেনশন মুসলিম লীগে আলীমের যোগদান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ, একাত্তরে জয়পুরহাট এলাকায় পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের আগমন, তাদেরকে আলীমের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি মেজর আফজালের সহযোগিতায় ও আলীমের নেতৃত্বে জয়পুরহাটে গড়ে ওঠা শান্তিকমিটি, রাজাকার বাহিনীসহ অন্যান্য সহযোগী বাহিনীর ভূমিকার বিষয় পড়ে শোনান তিনি। বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত আবদুল আলীম একাত্তরে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে পুরো জয়পুরহাট এলাকা ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করেছিলেন একেবারে সামনে থেকে। এ থেকে এটুকু অনুমান করে নেয়া যায় জয়পুরহাট ও তার আশপাশের এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধজনক দায়বদ্ধতা (ক্রিমিনাল রেসপন্সিবিলিটি) তার ওপর বর্তায়। ১১টা ৩০ মিনিটে রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত তখনকার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট, সাক্ষীদের জবানবন্দি, বিভিন্ন দলিল ও তথ্যাদি থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি একাত্তরে আবদুল আলীম ছিলেন একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক। তখনকার কনভেনশন মুসলিম লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। জয়পুরহাট এলাকায় তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী গড়ে ওঠে। যারা অক্সিলারি বাহিনী হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করে। জয়পুরহাট এলাকায় একচ্ছত্র অধিকারী ছিলেন অভিযুক্ত আবদুল আলীম। পুরো এলাকা ছিল  তার নিয়ন্ত্রণে। পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে তিনি কাজ করেছিলেন, তাদের সহযোগিতা করেছিলেন এ বিষয়টিও বিচারে প্রমাণিত হয়েছে। জয়পুরহাটে সংঘটিত মানবতাবিরোধী সকল অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তিনি। অপরাধগুলো সংগঠিত হয় তার প্রত্যক্ষ মদত ও নির্দেশে। এ সময় তিনি আলীমের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত ১ থেকে ১৩ নম্বর অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত পড়ে শোনান। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বাকি ৪টি অভিযোগ ও পঠিত অভিযোগগুলোর সঙ্গে আলীমের সম্পৃক্ততা-অসম্পৃক্ততা উল্লেখ করেন। এছাড়া অভিযোগে দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ডদানের বিষয় ঘোষণা করেন তিনি। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে জয়পুরহাট এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দিকপাল ছিলেন আবদুল আলীম। পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্যদের তিনি পুরোপুরি সমর্থন জানিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, নেতা হিসেবেও তার ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মতো। এ সব ঘটনায় সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন দায়) তাকেই নিতে হবে। মরাল সাপোর্ট বলতে যা বোঝায় তখন তা-ই করেছিলেন তিনি।  তখন তার পজিশন ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অথরিটি হিসেবে। এজন্য সংগঠিত অপরাধের সকল লায়াবিলিটি (দায়ভার) তার ওপর বর্তায়। এই মামলায় যুক্তি উপস্থাপনের সময় প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত ও তুরিন আফরোজের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, তারা বলেছেন আলীম ছিলেন একজন শিক্ষিত ও পরিণত ব্যক্তি। জেনে বুঝে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ছিলেন কমান্ডিং পজিশনে। আর বিচার হচ্ছে এখনকার ৮৪ বছর বয়স্ক আলীমের নয়। একাত্তরে ৪২ বছর বয়স্ক আলীমের। এজন্য তিনি কোন অনুকম্পা পেতে পারেন না। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আমরাও তাই মনে করি। সাক্ষীদের জবানবন্দি ও অন্যান্য দলিল নথি থেকে এটা বলা যায়, আসামি যে অপরাধ করেছে তাতে কোনভাবেই সে অনুকম্পা পেতে পারে না। সর্বোচ্চ শাস্তিই তার প্রাপ্য। কিন্তু এখন আবদুল আলীম খুব কঠিন সময় পার করছেন। শারীরিকভাবে তিনি খুবই অসুস্থ। হুইল চেয়ারে করে চলা-ফেরা করতে হয় তাকে। তাছাড়া বার্ধক্যের কারণে শারীরিক মানসিক উভয় দিক থেকেই তিনি দুর্বল। এ বিষয়টি আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। এক পর্যায়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রায়ে দণ্ডদানের বিষয়টি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, আলীমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনীত অভিযোগের মধ্যে ৪ ও ৫ নম্বর অভিযোগের বিষয়ে কোন তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষী হাজির করা হয়নি। তাই এ দু’টি অভিযোগ থেকে অভিযুক্ত নিষ্কৃতি পাবেন। অভিযোগ ১ এর বিষয়ে প্রসিকিউশন তাদের সাক্ষী ও যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ অভিযোগে আবদুল আলীমকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হলো। উল্লিখিত ৬, ৭, ৯ ও ১২ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য অভিযুক্ত আবদুল আলীমকে প্রতিটি অভিযোগে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হলো। ২, ৮, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন সাক্ষ্য-প্রমাণ ও দলিল উপস্থাপনের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই এ অভিযোগে আসামি আবদুল আলীমকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারান্তরীণ রাখার আদেশ দেয়া হলো। এছাড়া ৩, ১১, ১৩, ১৫, ১৬ ও ১৭ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি বিধায় তা থেকে অভিযুক্তকে খালাস দেয়া হলো। 
যে অভিযোগে আজীবন কারাদণ্ড: দ্বিতীয় অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- একাত্তরে ২৬শে এপ্রিল অভিযুক্ত আবদুল আলীম পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী মেজর আফজাল, পাকিস্তানি সেনা ও শান্তি কমিটির সদস্যদের নিয়ে কড়াই কাঁদিপুর এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম কড়াই, কাঁদিপুর, চকপাড়া,  সোনারপাড়া, পালপাড়া, মুন্সীপাড়া গ্রামে সশস্ত্র হামলা চালান। এ সময় হিন্দু সমপ্রদায়ের বাড়িঘরে লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর ৩৭০ জন নিরস্ত্র  লোককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। অশ্বিনী কুমার  দেবনাথ নামের এক ব্যক্তিকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়।
অষ্টম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- একাত্তরের মে মাসের প্রথম দিকে আলীম পাকিস্তানি মেজর আফজালকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষেতলাল থানার উত্তরহাট শহর নামের একটি স্থানে পাঁচ-সাত শ’ জনের একটি সমাবেশে যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘হিন্দুদের ক্ষমা করা যাবে না। এদের যা পাও লুট করে নাও।’ এই উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরে মে মাসের শেষ দিকে হিন্দুপল্লী, উত্তরহাট শহর, হারুনজাহাট এলাকার হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। শুরু হয় হামলা ও লুটপাট। এক সময় ওই এলাকা থেকে হিন্দু সমপ্রদায়ের ১০ জন লোককে ধরে শাওনলাল বাজলার গদিঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শান্তি কমিটির কার্যালয় ছিল। আলীম তাদের হত্যার নির্দেশ দেন। পরে ওই ১০ জনকে খঞ্জনপুর কুঠিবাড়িঘাট এলাকায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
দশম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- জুনের শেষদিকে আলীমের সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা ২৬ জন ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে অপহরণ করে একটি ট্রাকে করে জয়পুরহাট  রেলস্টেশনে নিয়ে যায়। এ সময় আলোখেলা স্টুডিওর মালিক  মোতাসিম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে আলীম নিয়ে আসেন। তিনি ওই ২৬ জন আটক ব্যক্তির সঙ্গে আলীমের ছবি তোলেন। পরে তাদের জয়পুরহাট কলেজে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
চতুর্দশতম অভিযোগে বলা হয়েছে- একাত্তরের ৭ই অক্টোবর আলীমের নির্দেশে জয়পুরহাট সিও অফিসের সামনে থেকে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম ও আরও দু’জনকে ধরে নিয়ে যায় শান্তি কমিটির সদস্য ও পাকিস্তানি সেনারা। পরে আলীমের নির্দেশ ও উপস্থিতিতে খানজানপুর পুকুরপাড়ে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।
যে অভিযোগে ৮০ বছর কারাদণ্ড: ষষ্ঠ অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- একাত্তরের মে মাসের প্রথম দিকে আক্কেলপুরের আবদুস সালাম ও আরও নয়জন নিরস্ত্র ব্যক্তি ভারত যাওয়ার পথে নূরপুর গ্রামে পৌঁছায়। বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান, শান্তি কামিটির সদস্য ও রাজাকাররা তাদের ধরে স্থানীয়  সৈয়দ আলীর বাড়িতে আটকে রাখে। পরে তাদের আক্কেলপুর রেলস্টেশনের বিশ্রামকক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আলীমকে জানানো হয়। আলীম তাদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। পরে তাদের পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে  দেয়া হয়। এক সময় এই ন’জনকে  কোকতারা গ্রামের বকুলতলা এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়।  মোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি  কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে- একাত্তরে ২৬শে মে আলীমের নির্দেশ অনুসারে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার নওদা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইলিয়াস উদ্দিন সর্দার, ইউসুফ উদ্দিন সর্দার, ইউনুস উদ্দিন সর্দার এবং আবদুল কাদের মণ্ডল নামের চারজনকে ধরে এনে বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়। পরে তাদের কালীপুকুরের পাশে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা আলীমের বিরুদ্ধে
নবম অভিযোগে বলা হয়েছে- ১৪ই জুন শান্তি কমিটির সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে ১৫ জন যুবককে শাওনলাল বাজলার গদিঘরে ধরে নিয়ে যায় ও সেখানে আটকে রাখেন। মেজর আফজালের সঙ্গে পরামর্শ করে আবদুল আলীম তাদের হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে তাদের পশ্চিম আমাত্রা গ্রামে নিয়ে নির্যাতন শেষে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়।
দ্বাদশতম অভিযোগে বলা হয়েছে- একাত্তরে ২৪শে জুলাই আলীমের নির্দেশে জয়পুরহাট কাজীপাড়া এলাকা থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আবুল কাশেমকে আটক করে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা। তাকে দু’দিন শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ২৬শে জুলাই সন্ধ্যায় আবুল কাশেমকে খানজানপুর কুঠিবাড়ী ব্রিজের কাছে গুলি করে হত্যা করা হয়।
যে অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড : প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে- একাত্তরের ২০শে  এপ্রিল বিকালে আলীম পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামের মেহের উদ্দিন  চৌধুরীর (মৃত) বাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালান। বাড়িটিতে লুটপাট করা হয়। এক পর্যায়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এই ঘটনার পরে মেহের উদ্দিন চৌধুরী দেশান্তরিত হতে বাধ্য হন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ