সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৩

১২ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে আলটিমেটাম

দেশের এক ডজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে আলটিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে রয়েছে তীব্র দ্বন্দ্ব। রয়েছে দেশব্যাপী অবৈধ ক্যাম্পাস। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মালিকানার দ্বন্দ্ব নিরসন ও অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধ করতে হবে। তা নাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইল পাঠানো হবে চ্যান্সেলর প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী। নতুন ৬টি নিয়ে বর্তমানে দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৭টি। এর মধ্যে এক ডজন বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে। রয়েছে একাধিক ট্রাস্টিবোর্ড ও ক্যাম্পাস। ইউজিসি বারবার সতর্ক করার পরও কান দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। নিরুপায় হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি দারস্থ হচ্ছে দেশের প্রেসিডেন্টের। যেসব ইউনিভার্সিটিতে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে ও একাধিক ট্রাস্টিবোর্ড রয়েছে তা ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করা হবে। সেইসঙ্গে বর্তমান ভিসিদের সরিয়ে নতুন ভিসি নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। বর্তমানে নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে মাত্র ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়। ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে নিজস্ব ক্যাম্পাসে। ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় জমি ক্রয় করেছে ফাউন্ডেশনের নামে। নির্ধারিত জমিতে ভবন তৈরি করছে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়। জমি ক্রয় করলেও কাজ শুরু হয়নি ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। জমি ক্রয় করে ভবন তৈরির নকশা প্রণয়ন করছে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। জমি ক্রয় করলেও ভবন নির্মাণের অনুমোদন পায়নি ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়। মালিকানার দ্বন্দ্ব ও অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের। সরকারের হিসাব অনুযায়ী তাদের দেশব্যাপী রয়েছে ১০৭টি অবৈধ ক্যাম্পাস। বাস্তবে ক্যাম্পাসের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার শ’। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের প্রতিষ্ঠিত অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা হলেও বর্তমানে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম এটি দখল করে নিয়েছেন। দখলের মিশনে রয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারাও। বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে একাধিক অবৈধ ক্যাম্পাস। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি একাধিকবার নোটিস দিয়েছে। প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি শাখা রয়েছে। একটি উত্তরা অপরটি মিরপুরে। এদিকে ১লা সেপ্টেন্বর ঢাকার ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালত প্রাইম ইউনিভার্সিটির উত্তরা শাখাকে বৈধ ঘোষণা করে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। প্রাইম ইউনিভার্সিটির সাব-রেজিস্ট্রি দলিল, প্রাইম ফাউন্ডেশনের সংঘ স্মারক এবং প্রাইম ইউনিভার্সিটির হেড অফিস ও মেইন ক্যাম্পাস  মিরপুর থেকে উত্তরায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণার দাবিতে মিরপুর ক্যাম্পাসের সাজ্জাতুজ জুম্মা ও সাহাবুদ্দিন গং বাদী হয়ে দায়ের করা দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ৫৪৩/২০১২ এর প্রেক্ষিতে ২৫শে আগস্ট উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানিতে ওই আদেশ  প্রদান করেন। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রয়েছে তীব্র দ্বন্দ্ব। সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা এ বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইবাইস ইউনিভার্সিটি ও বিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। রয়েছে মামলা। এ ছাড়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি, পিপলস ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, বিজি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ও আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে একাধিক অবৈধ ক্যাম্পাস। কোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছে কুইন্স ইউনিভার্সিটি। এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে গণবিজ্ঞপ্তি জারির আলোচনা চলছে। একাধিকবার সতর্ক করলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) শর্ত পূরণ করতে পারেনি। মালিকানার দ্বন্দ্ব নিরসনে একাধিকবার চিঠি দিলেও তারা উদ্যোগ নেয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে বাড়ছে মামলার সংখ্যা। ইউজিসি এমনকি মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করে মামলা ও উকিল  নোটিস দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর হয়ে গেছে ৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। বর্তমান সরকার ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে দুটি শুরু থেকেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এক বছরের সময় দিয়ে বলা হয়- নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের পর আর শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। এর চার মাস পর ২০১২ সালের জানুয়ারিতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও এক বছর সময় দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সময়ও পার হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। আইনানুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা। ইউজিসির সদস্য (প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মালিকানার দ্বন্দ্ব নিরসন ও অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধ করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে চ্যান্সেলরের সহায়তা চাওয়া হবে। এ বিষয়ে ইউজিসি  চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বাণিজ্য করছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আমরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে সময় দিয়েছি। অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা দ্বন্দ্ব নিরসন ও অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে শেষ পর্যন্ত আমরা প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ