বাবা-মা ভাই-বোনের মৃত্যুর খবর জানে না সুমন
বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ বেঁচে নেই। কিন্তু সে কথা জানে
না সুমন (১৭)। অচেতন অবস্থায় সে পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
বার্ন ইউনিটের ৪র্থ তলায়। সর্বনাশা গ্যাসলাইন কেড়ে নিয়েছে তার পরিবারের
বাকি সবাইকে। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৩টায় গ্যাসের রাইজার থেকে
আগুন লেগে ঝলসে যান সুমনের পরিবারের ৫ সদস্য। ঘটনাটি ঘটে গাজীপুরের
কোনাবাড়ীর শফিপুর বাজারের পাশে আবুল মিয়ার বাড়িতে। ওইই বাড়ির মালিক সেদিন
গ্যাসের রাইজার বসান তার বাড়িতে। তিনতলা বিল্ডিংয়ের নিচতলায় থাকতো সুমনের
পরিবার। দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল সুভাষ সাহার (৫০)।
পারিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভাল না থাকায় দুই ছেলেকে নিয়ে শফিপুর
বাজারে পানের ব্যবসা করতেন। আর স্ত্রী রিনা সাহা ছিলেন গৃহিণী। মেয়েকেও
পড়ালেখা করাতে পারেননি আর্থিক সঙ্গতির কারণে। পরিকল্পনা ছিল তাদের যে আয় হয়
তা থেকে মেয়েটাকে যাতে কোনভাবে বিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু তা আর হলো না।
মেয়েটাকেও বাঁচানো গেলো না। একে একে সবাই চলে গেলেন। শুধু বেঁচে আছে সুমন।
কি নিয়ে কার কাছে থাকবে এই চিন্তুা করছেন তার প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা।
অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর তাদেরকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে। সেখানে
তাদের পাশে ছিলেন তাদের নিকটাত্মীয়। তারা সবাই এখন সুমনের পাশে। কেউ
কান্নাও করতে পারছেন না। সুমন যদি জেনে যায় এই ভেবে। চিকিৎসা চলাকালে
মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে প্রথমেই মারা যান বাবা সুভাষ সাহা (৫০)। যার মুখাগ্নি
করার কথা ছিল বড় ছেলের। সেই ছেলে বাবার শেষ মুখটাও দেখতে পারেনি। তার
স্ত্রীও জেনে যেতে পারেননি যে তার স্বামী আর নেই। এর আগেই তিনি মারা যান।
পরে তার মেয়ে ও বড় ছেলে একে একে মারা যান। যে ভাইয়ের সঙ্গে সুমনের ছিল
বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেও চলে গেছে। ৩০শে সেপ্টেম্বর ভোর রাতে তাদের ঘরে
আগুন লাগে। তখন পরিবারের সকল সদস্য ঘুমে ছিলেন। সেই আগুনে রিনা সাহা ও তার
মেয়ে রুমকি সাহাসহ স্বামী ও দুই ছেলে অগ্নিদগ্ধ হন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক
অবস্থায় ছিল রিনা ও রুমকির। মধ্যরাত ৩টার দিকে সুভাষ সাহা বাথরুমে
যাওয়ার জন্য উঠেছিলেন। চোখ খুলেই বুঝতে পেরেছিলেন সারা ঘরে গ্যাসের গন্ধ।
সেই সময় তিনি তার স্ত্রীকে বলেছিলেন যে ঘরে গ্যাসের গন্ধ আছে। তবে কোথা
থেকে তা আসছে কেউই তা বুঝতে পারেননি। তখন দরজা জানালা খুলে দিয়েছিলেন তার
স্ত্রী রিনা সাহা। ওই সময় সুভাষ সাহা সিগারেট ধরানোর জন্য ম্যাচের কাটি
জ্বালান সঙ্গে সঙ্গে সারা ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত সেই সিগারেটের
আগুনই কেড়ে নিলো পরিবারের ৪ সদস্যের প্রাণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন