বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১১

(সাবধান- নারীদের প্রবেশ নিষেধ)

রান্না করা নারীদের দায়িত্ব কিনা

ইসলামী ফিকাহবিদগণ একটি নাজুক মাসআলা বলেছেন।
যে মাসআলাটি বললে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। মাসআলাটি হলো, ঘরে রান্নাবান্না করা নারীদের জন্য শরয়ী কর্তব্য নয়। অর্থ্যাৎ তাদেরকে রান্নাবান্না করতেই হবে, এটা ফরয, এমন কোন নির্দেশ শরীয়ত দেয়নি। এমনকি ফুকাহায়েকেরাম বলেছেন- মেয়েদের মধ্যে দুটি শ্রেণী আছে। যথা-
এক. যারা পারিবারিকভাবে বাবার সংসারে ঘরকন্যার কাজে অভ্যস্ত।
দুই. যারা পারিবারিকভাবে বাবার সংসারে ঘরকন্যার কাজে অভ্যস্ত নয়। বরং চাকর-নওকরের সাহয্যে তার গৃহস্থলী কাজগুলো করায়।
দ্বিতীয় শ্রেণীর মেয়েদের সম্পর্কে কথা হলো, এরা স্বামীর ঘরে আসার পর রান্না করা তাদের দায়িত্ব বলে বিবেচিত হবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে বিচারের কাঠগড়ায়, চরিত্রের মাপকাঠিতে তথা যে কোন অবস্থাতে এটা তাদের কর্তব্য বলে বিবেচিত হবেনা। বরং স্ত্রী স্বামীকে একথা বলার অধিকার রাখে যে, আমার ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে। রান্নাবান্না করার দায়িত্ব আমার নয়। কাজেই প্রস্তুতকৃত খাবার আমাকে দিতে হবে। ফিকাহবিদগণ লিখেছেন, স্ত্রী যদি এরুপ দাবি করে তাহলে স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীকে প্রস্তুতকৃত খাবার এনে দেয়া। স্বামী এ ব্যাপারে বাধ্য থাকবেন। স্বামী রান্নাবান্নার জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করা বা চাপ প্রয়োগ করতে পারবেন না। তাই তো হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন- স্ত্রীদের প্রতি তোমাদের অধিকার হলো তারা তোমাদের গৃহে অবস্থান করবে। এবং তারা তোমাদের অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারবেনা। এছাড়া শরীয়ত নির্দেশিত কোন অধিকার তোমাদের নেই।
আর মেয়েটি যদি হয় প্রথম শ্রেণীর । অর্থ্যাৎ মেয়েটি পারিবারিকভাবে বাবার সংসারে রান্নাবান্নার কাজে অভ্যস্ত ছিল। তাহলে রান্নাবান্না করা আইনগতভাবে তার কর্তব্য নয়। তবে হ্যাঁ, ধার্মিকতা, দ্বীনদারী এবং মানবিক দৃষ্টিকোণে রান্নাবান্না করা তার উপর অবশ্য কর্তব্য। অর্থ্যাৎ আইনের মাধ্যমে তাকে রান্নাবান্নার জন্য চাপ দেয়া যাবেনা। তবে তার চারিত্রিক দাবি এটাই যে, সে নিজ হাতে নিজের খাবার রান্না করবে। এক্ষেত্রে স্বামীর দায়িত্ব হলো, রান্নাবান্নার যাবতীয় সরঞ্জামাদি জোগাড় করে দেয়া।

অবশিষ্ট থাকল স্বামী ও সন্তানদের খানা রান্না করার ব্যাপার

এটাও কিন্তু স্ত্রীর কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবেনা। আবার স্বামীর নিকট এ দাবীও করতে পারবেনা যে আমাকে প্রস্তুতকৃত বাজারের খাবার এনে দিতে হবে। স্ত্রী রান্না করতে অস্বীকৃতি জানালে আইনের আশ্রয় নিয়ে তাকে বাধ্য করে রান্না করানোও যাবেনা। সার কথা এ সম্পর্কে ফিকাহবিদগণের বিশদ আলোচনা রয়েছে।
আরো জেনে নিন, ছেলের কর্তব্য হলো মা-বাবার সেবা যতœ করা। হবে হ্যাঁ ছেলের বউ যদি শ্বশুর-শ্বাশুরীর খেদমত করে যদি তাদের সেবা যতœ সানন্দে করে তাহলে সেটা তার জন্য এক পরম সৌভাগ্যের বিষয়। তাই বলে স্বামী তার স্ত্রীকে তার মাতা-পিতার খেদমত করতে বাধ্য করতে পারবেনা। এটা স্ত্রীর ইচ্ছা বা খুশীর ব্যাপার। তদ্রুপ শ্বশুর শাশুরীও ছেলে বউকে খেদমত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারবেন না। তবে পরিবারের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য করে, নিজের সৌভাগ্যের বিষয় ও সাওয়াবের আশায় শ্বশুর-শাশুরীর খেদমত করা ছেলের বউয়ের নৈতিক দায়িত্ব। তার কাছে এটা এক প্রত্যাশাও বটে।
গ্রন্থসুত্র: ইসলাহী খুতুবাত- জাস্টিস মাওলানা তাকী উসমানী

বাংলাদেশের রাজধানী কোথায়? ঢাকা উত্তর? নাকি ঢাকা দক্ষিণ?

খুব হাস্যকর যুক্তিতে পৃথিবীতে নজির স্থাপন করার মাধ্যমে ঢাকা দু ভাগে বিভক্ত হল। নাম হল ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ। দু'ঢাকায় দু'জন মেয়র হবেন। দু'ঢাকায় দু'জন উন্নয়ন কাজ করবেন। যে ঢাকায় সরকারী দল ক্ষমতায় থাকবে সে ঢাকায় তখন উন্নয়ন বেশি হবে। যে ঢাকায় বিরোধী দল থাকবে সে ঢাকার উন্নয়ন হবে না। সে ঢাকায় জনভোগান্তি হবে চরম।
যাই হোক, আহাম্মকি সিদ্ধান্তে ঢাকা ভাগ হয়েছে। ভাল কথা। কিন্তু এখন প্রশ্ন, সাধারণ জ্ঞান এর প্রশ্ন যদি আসে, বাংলাদেশের রাজধানী কোথায় অবস্থিত? তবে উত্তর কী হবে?

পালকের নেশা

একদিন খেয়ালিতা উড়ে যেতো
মেঘদলে সুনীলের কাছাকাছি;
হঠাৎ কবেকার অতলান্ত চোখ-
টেনে নিয়ে গেছে জীবন্ত পৃথিবীর সবটুকু
পরিচয়ে জমে গেছে অচিনের কাঁপন
সংশয় আঁচলে জড়িয়ে নেচে ওঠে আহ্লাদী স্বর্ণলতা,
দ্বিধাডোরে পাখাচুপ হয়ে থাকে প্রজাপতি-দিন
আঁধিয়ার টানে সমুদ্রে ডুবে দেখি অধীর সর্বনাশ।

সঙ্গী আস্থার আলাপনে
কিছুদূর চলে গেছে পথ অচিরেই
সোনালুর বনে অথবা জারুলের;
একদিন সেপথ মিলে গেছে অমিলের মোড়ে
এখন বেগুনি হরিদের বুকে বসন্তবিষাদ
ত্রস্ত হড়িয়ালপায়ে জমে গেছে সুধীর চলন,
বকের ডানায় আঁকা আলপনা রাতুল
চঞ্চুজড়তায় অঢেল অতীতের অনীহা।

সুদিনের গান ছিঁড়ে ছিঁড়ে
প্রত্নআঙ্গুলে জেগে ওঠে পালকের নেশা
কতখানি ব্যথা পেলে নৈশব্দ হবে
দাহকালে রুদ্ধব্যাকুল ডাহুকের ডাক!!

তেহরানের ব্রিটিশ দূতাবাসে ইরানি ছাত্রদের হামলা


তেহরানের ব্রিটিশ দূতাবাসে ইরানি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা হামলা চালিয়েছে এবং ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে ফেলেছে। হামলায় ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র অংশ নেয়। তেহরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে ইরান থেকে বহিষ্কারের দাবিতে তারা এ হামলা চালিয়েছে। ব্রিটেনের সঙ্গে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা কমিয়ে আনার বিষয়ে রোববার জাতীয় সংসদে একটি বিল পাস হওয়ার পর এ হামলা হলো। গতকাল ইরানের অভিভাবক পরিষদও বিলটি অনুমোদন করেছে। কিন্তু ছাত্ররা বলছে, এ বিল বাস্তবায়নে সরকার ইতস্তত করছে।
বিল পাসের মাধ্যমে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ডমিনিক জন চিলকোটকে বহিষ্কারের জন্য ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দু'সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। ওই বিল অনুসারে ইরান ব্রিটেনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স পর্যায়ে নামিয়ে আনবে।
২০০৯ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ব্রিটেন হস্তক্ষেপের নীতি নিয়েছিল। নির্বাচনের পর সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি এ বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ নেয়। তবে, সম্প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞায় অংশ নেয়ার পর এ বিল নতুন করে প্রাণ পায় এবং রোববার সংসদে তা পাস হয়। ইরান পরমাণু অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ব্রিটেন তেহরানের ব্যাংক ব্যবস্থা ও জ্বালানি খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

আসুন ফ্রিল্যান্সার হই।

আমি বরাবরই চাকুরি খোজার বিপক্ষে। আমার লেখাপড়া শেষ করে , কত যে চাকুরির চেষ্টা করেছি তা গুনে শেষ করা যাবে না। সেই থেকে চাকুরি খোজার বিপক্ষে। ২০০৬ থেকে ২০০৮ শেষ পর্যন্তু কত যে দরখাস্ত করেছি তা এখন আর মনে করতে পারছি না। বেসরকারি চাকরি পাওয়া যায় সহজেই কিন্তু তারা গাধার মত খাটায়। আর সরকারি চাকরি ? ওরে বাবা! খুবই দুর্লভ। সোনার হরিণের চেয়েও দুর্লভ।

আমার মনে পড়ে, নন ক্যাড়ার কাস্টমস্ পরিদর্শকের চাকরির দরখাস্তের জমা দেওয়ার দিনের কথা। জমা দিতে গেছি সকাল ৭ টায়। আর জমা দিয়ে বেরিয়েছি ৩ টায়। আমার সামনে আরো ২৭৩ জন দাড়িয়েছিল। আর আমার পিছনে কতজন ছিলো গুনিনি। তাও হয়তো ২০০ জন হবে।
যখন আমি দরখাস্ত জমা দিই তখন এক অফিসার (মানে যিনি দরখাস্ত জমা নিচ্ছিলেন তিনি । তার সাথে আরো তিন জন অফিসার ছিলো । তারা জমা নেওয়ার সময়ই একটা ভাইবা নিচ্ছিল। ) আমাকে শেষ প্রশ্ন করলে,
"তোমার আত্মিয়-স্বজ্বনের মধ্যে কোন কেউকেটা গোছের কেউ আছে ?"
আমি না বুঝে বল্লাম " বুঝলাম না" ।
তিনি বল্লেন " তোমার সুপারিস করার মত কেউ আছে? "
আমি বল্লাম "না"।
"১০ লাখ দিতে পারবা? " তিনি বল্লে ।
আমি বল্লাম " দিতে পারলে চাকরি করতে আসতাম না "।
তিনি বল্লেন " যাও। খালি খালি দরখাস্ত দিচ্ছ। কোন কাজে লাগবে না।"
আমি বল্লাম " কম করা যায় না ?"
তিনি বল্লেন " আমি তো তোমার কাছে প্রথম মাসের উপরির টাকার ৪০% চাইছি। দিতে পারলে , বলো । আর না পারলে, যাও।"
আমি মাথা নিচু করে চলে এলাম। আমার আব্বা কোনদিনই আমাকে এত টাকা দেবেন না। তার দেওয়ার সামর্থ নেই।

একবার আর্মিতে একটা ইনটারভিউ বোর্ডে ভাইবা দিচ্ছিলাম । ভাইবা নিচ্ছিলেন মেজর জামাল। সবার ভাইবা নিলেন সব্বের্চো ৫ মিনিট । আর আমার ভাইবা নিলেন প্রায় ৪০ মিনিট। সব শেষে তিনি বল্লেন, কাউকে বাদ দিতে গেলে তার একটা দুর্বলতা দেখিয়ে দিতে হয় । আমি তোমার এই সেক্টোরে দুর্বলতা পেলাম না। দেখো, সরকারী চাকুরি পেতে গেলে ভালো লিংক লাগে। আমার ধারনা, তোমার তা নেই। এ পোষ্টে তোমার চাকরি হবে না। এখানে লোক আগে থেকে নেওয়া হয়ে গেছে। এটা ফরমালিটি মাত্র। এসব চাকরি খোজার চেয়ে তুমি ফ্রিল্যাংসিং করো। ভালো উন্নতি করতে পারবে। আমি অবসর সময়ে ফ্রিল্যাংসিং করি । তোমার কোন সাহায্য লাগলে আমি সাহায্য করতে পারব। এতে নিজের ইনকামের সাথে সাথে দেশেরও সুনাম বাড়াতে পারবে।

তার কথা আমার মনে ধরল। এটা ২০০৮ এর শেষ দিকের কথা। তার কাছ থেকে আমি অনেক সাহয্য পেয়েছি। তিনি আমাকে যেভাবে প্রস্তুত হতে বলেছিলেন আমি তা হয়েছি। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমি ২০০৯ সালের প্রথম দিকে ফ্রিল্যাংসিংয়ে ঢুকি। প্রথম কয়েক মাস বেশ কষ্টে কেটেছে। কিন্তু তার পর থেকে আমাকে আর আল্লাহর অশেষ রহমতে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন আমি স্বচ্ছল ও স্বলম্বি। এটুকু বলতে পারি , একজন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তার থেকে আমার বর্তমান বেতন কম নয়। বরং বেশিই বলা যায়।

প্রথম দিকে আমি ডাটা এন্ট্রির কাজ দিয়ে শুরু করি। আস্তে আস্তে আমি নিজেকে পরিবর্তন করি। এক্ষেত্রে আমি জাকারিয়া (বাংলাদেশের একজন বড় মাপের ফ্রিল্যাংসার) ব্লগ থেকে অনেক দরকারি তথ্য পেয়েছি। তার একটা কথা মনে পড়ে, সময়ের সাথে নিজেকে আপডেট করতে না পারলে এই অনলাইন জগতে টিকে থাকা বড়ই কস্টের।
তার কথা অনুযায়ি আমি নিজেকে আপডেট করতে পেরেছি। ডাটা এন্ট্রি থেকে এস ই ও এক্সপার্ট এবং পরবর্তীতে ওয়েব ডিজাইনার, আর এখন ওয়েভ প্রোগ্রামার হয়েছি।

আমার এই অনলাইন জগতের দুইজন নায়ক, ১. মেজর জামাল আর ২. জাকারিয়া চৌধুরি । এই জগতে টিকে থাকার মুল মন্ত্র হল, হাল ছেড়ে না দেওয়া। এক্ষেত্রে আমার মা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেয়না দিয়েছে। অনেক সময় কাজ পাইনি । হাল ছেড়ে দেওয়ার মত অবস্থা । মা আমাকে সাহস দিয়েছে। এখন আমি অনলাইন কাজ বুঝতে শিখেছি। হাল ছাড়ার মত পরিস্থিতি এখন আর তৈরি হয় না।

আসুন আমরা অনলাইনে কাজ করি। এসব কাজ কিন্তু কঠিন না। একটু মেধা খাটালে আপনিও পারবেন। যেহেতু এই ব্লগে আসতে পেরেছেন, তারমানে আপনি ওয়েব ব্রাইজ করতে পারেন। যেহেতু আপনি গুগলে সার্চ করতে পারেন , তার মানে আপনি ওয়েব রিসার্চ এক্সপার্ট। তার মানে আপনি ডাটা এন্ট্রির কাচের ২য় অবস্থানে আছেন। যেহেতু আপনি লিখতে পারেন আর এই ব্লগে লেখা পোষ্ট করতে পারেন , সেহেতু আপনি ব্লগ পোষ্ট আর ক্রিয়েটও করতে পারেন আর সাথে পারেন কমেন্ট করতে । তাহলে কি দাড়ালো , আপনি অলরেডি একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হয়ে বসে আছেন। তাহলে আর দেরি করে কি করবেন? আসুন ফ্রিল্যান্সিং করি। ঢুকে যান ওডেক্স কিংবা ফ্রিল্যান্সারে অথবা ভিওয়ারকারে। শুরু করুন বিট (দরখাস্ত করা) করা। শুরু করুন অনলাইন জীবন। প্রথমে হয়তো কাজ পেতে দেরি হবে কিন্তু আশা ছাড়বেন না। অবশ্যই কাজ পাবেন। আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করুন। তবে একটা কথা প্রথম দিকে কমরেটে কাজ ধরার চেষ্টা করবেন।

তাহলে আর দেরি করে কি করবেন? আসুন ফ্রিল্যান্সিং করি এবং প্রমান করি আমরা বেকার নই। আমরা নিজের যোগ্যতায় যোগ্যতাবান।
কঠিন কাজ সবাই শিখাতে চায়। কিন্তু সহজ কাজ গুলো কেউই শিখাতে চায় না। মানে পারা কাজ ধরিয়ে দিতে চায় না। সবাই শুধু ডিজাইনার বা প্রগ্রামার বানাতে চায়। আমি বুঝি না যে, কেন সবাই এটা করে। আমার মতে আগে সহজ কাজ, তার পর কঠিন কাজ। আগেতো শুরু করে দেখি , তার পর নয় চিন্তা করব, থাকব না কি চলে যাবো ?

আমার মতে, আগে কনফিডেন্ট লেভেল বাড়াব তার পর কঠিন কাজে হাত দেবো। আসুন আমার সাথে, সমস্ত ভয় আজ ভেঙ্গে দেবো। আমি আপনাদের আজ ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে সহজ কাজ ডাটা এন্ট্রি শিখাব। সরি, শিখাবো না, মনে করিয়ে দেবো। আমি জানি আপনারা সবাই এই কাজ করতে পারেন।

ডাটা এন্ট্রিতে কি কি কাজ থাকে , সেগুলো হল :
১. Data Entry
২. Personal Assistant
৩. Web Research
৪. Email Response Handling
৫. Transcription
৬. Other - Administrative Support

প্রথমে ডাটা এন্ট্রি । এটা শিখানোর কিছুই নেই। শুধু আপনাদের মনে করিয়ে দিই। একটা উদাহরন দেই :

আজকে ওডেক্সে এই কাজটা এসেছে:
Data Entry Assistant:
We are looking for someone to transfer information from scanned business cards into a database csv / excel file. We will email you a document with scanned business cards and would like to receive back a file with each category (first name, last name, company, job title, email and phone numbers) filled in.

দেখুনতো পারেন কিনা? বায়ার কিছু স্ক্যান করা ভিজিটিং কার্ড দেবেন আর আপনাকে তা একটা এক্সেলের সিটে সেভ করতে হবে। আর এক্সেল সিটটা সিএসভি ফরমেটে সেভ করতে হবে। সিটে কি কি ফিল্ড থাকবে তা শেষ লাইনে উল্লেখ করা আছে।

এখন বলুন, এখানে আমি আপনাকে কি শিখাব। আপনিতো শিখেই বসে আছেন। এখন মিলান আমার সাথে, যেহেতু আপনি এই ব্লগে এসছেন, তার মানে আপনি ওয়েব ব্রাউজ করতে পারেন। এটুকু বলতে পারি , ব্রাউজ করার প্রথমেই আপনি ডাউনলোড (যে কোন কিছু) করা শিখেছেন। যেহেতু আপনি এই ব্লগের একজন মেমবার , সেহেতু এখানে একাউন্ট করার আগে মেইল এড্রেস তৈরি করেছেন, সেহেতু কি বলতে পারি? আপনার মেইলে বায়ারের পাঠানো ফাইল আপনি ডাউনলেড করতে পারবেন অনায়েসে। যেহেতু স্ক্যান কপি সেহেতু ফাইল হবে, ছবি ( jpeg, png, gif) ফরমেট বা pdf ফরমেটে। তাহলে কি দাড়ালো? আপনি কাজের জন্য সম্পুর্ন রেডি। এখন এক্সেল খুলুন আর দেখে দেখে টাইপ করুন। কি এখন পারবেন না কাজটা করতে? আমি জানি আপনি কি উত্তর দিচ্ছেন, লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছেন তে ;) ? আর ভাবচ্ছেন এত সহজ কাজ?
হ্যা , ডাটা এন্ট্রি এতই সহজ কাজ।

ডাটা এন্ট্রিতে সাধারনত যে সব কাজ থাকে তা হল : ইমেল একাউন্ট তৈরি, ফেসবুক একাউন্ট তৈরি, ফেসবুক লাইক ক্লিক করা, ক্যাপচা এন্ট্রি, এক্সেল এন্ট্রি, ই-বাই একাউন্ট তৈরি, ইমেজ থেকে টেক্স তৈরি করা ইত্যাদি। মাথা খাটিয়ে দেখুন, এই সবগুলো কাজই আপনি পারেন। এই ডাটা এন্ট্রিতে আপনি ফুলটাইম কাজ করলে আপনি সপ্তাহে ৭০০০+ টাকা ইনকাম করতে পারেন। মানে মাসে ২৮০০০+ টাকা। এটা কি কেরানীর বেতন মনে হচ্ছে?
আমি যখন ডাটা এন্ট্রির কাজ করতাম , আমার মামা একদিন বলেছিলেন, "ইন্টারনেটে কাজ মানে কেরানির কাজ। সারা মাসে ইনকাম করবি ২০০০ টাকা। " আমি ডাটা এন্ট্রির টাকা (এক সপ্তাহের ) দিয়ে মামাকে একটা সুট কিনে দিয়েছিলাম। মামা দেখে বলেছিলেন, এত দামী সুট? কয় মাসের টাকা দিয়ে কিনেছিস? আমি বল্লাম, এক সপ্তাহের। সুটটা ছিল ১২০০০ টাকা দামের। এর পর মামা আর আমাকে কেরানি বলেনি। আমার মামা বি টি আর সিতে চাকুরি করেন। আমার তৈরি করা ওয়েব পেজ এখন তাকে টেষ্ট করতে দেই সবার আগে। তিনি লজ্জায় আমার পেজের ত্রুটি খোজেন। যদিও তার এবিষয়ে কোন অভিজ্ঞাতা নেই।

পারসোনাল এসিস্টেন্ট :
Personal Assistant:
Job Description
We are looking for a company or contractor who is experienced in being a personal assistant.

Jobs that we need help with are (but not limited to):
- Email tracking / handling (Must be famiilar with Gmail)
- Data handling and sorting
- Appointment Setting (must be familiar w/ Google Calendar)
-Task management and followup.

It is important that the contractor have previous experience as a personal assistant. And that experience must be demonstrated through prior odesk work.

Other skills: Excel, Microsoft word, .doc to .pdf conversion

Lower bids get highest consideration.
দেখেছেন কি সহ কাজ। পারসোনাল এসিস্টেন্ট এর ক্ষেত্রে একটু যোগ্যতা বেশি লাগে। কারন বায়ারদের সাথে প্রায়ই কথা বলা লাগে। সব সময় স্কাইপি বা গুগুল টক খুলে রাখা লাগে। এই ধরনের কাজ অনেক দিন করা যায়। বায়ার ইচ্ছা মত কাজ করায় । তবে সবই ডাটা এন্ট্রির কাজ। বিভিন্ন ধরনের কাজ থাকার জন্য এটা এসিস্টেন্ট কাজ। আমার মনে পড়ে আমি বায়ারকে বিভিন্ন ব্যবসার পরমর্শ দিতাম। তিনি পরামর্শ নিতেন। এই কাজটাতে আপনাকে গুগলের প্রডাক্ট সম্পকে ভালো জ্ঞান থাকা লাগবে। এ কাজ করলে আপনার বেতন ৩০,০০০+ থাকবে , এটা সিয়র।

Web Research করার জন্য শুধু গুগলে সার্চ দেওয়ার পদ্ধতি জানতে হবে। আর সার্চ রেজাল্টের বিভিন্ন পেজে যেতে হবে আর ইমেল এড্রেস বা ফোন নম্বর খুজতে হবে । সাধারনত যে কোন পেজের কন্ট্রাক আস পেজে এটা পাওয়া যায়। এই তথ্য গুলো এক্সেলের সিটে সেভ করতে হয় । যেমন :
We currently have a couple of excel spreadsheets that we need completed with companies fax number and email addresses if possible. The job should be fairly straightforward and easy for someone who is qualified at finding information online. The facilities address, name, and phone numbers are provided so it should be easy to match up and complete the spreadsheets. Please contact us for more details and application of this project.


Transcription কাজে বায়ার একটা অডিও ফাইল দেন , আর আপনাকে সেটা শুনে ইংরেজিতে টাইপ করে দিতে হবে (নির্ভুল ভাবে)। যেমন :
Transcription of a 54 minute audio interview between two people to MS Word in US English. Current audio file is in MP3 format.

পরিশেষে কি বলতে পারি? সবই আপনার পারা কাজ। শুধু ভয়ে ভয়ে বসে ছিলেন , তাই তে? ডাটা এন্ট্রির সব গুলো সেক্টোরে কাজ করতে পারলে প্রথম শ্রেনীর অফিসাদের চেয়েও ভালো অবস্থানে থাকবেন। আসুন আজ নিজের জড়তা ভেঙ্গে ভয়কে পদদলিত করে কাজে নেমে পড়ি। আসুন ফ্রিল্যান্সিং করি। :)

১. Email Response Handling
২. Other - Administrative Support

ডাটা এন্ট্রিতে এই দুটো কাজ কম আসে। আর খুবই সহজ কাজ দুটি। নতুন করে বিশেষ কিছু বলার নেই (কারন সবই আপনারা জানেন) । তবুও একটু মনে করিয়ে দেই।

Email Response Handling কাজের জন্য আপনাকে ইমেল সম্পর্কিত ভালো জ্ঞান থাকা লাগবে। বিশেষ করে ইমেল পাঠানো। ;)
ইমেল পাঠাতে কোন যোগ্যতা লাগে না , তাইতো? আমার মতে একটু লাগে। সাধারন ইমেল হলে কোন সমস্যা নেই তবে এইচ টি এম এল ইমেল হলে একটু সমস্যা হয়। html ইমেল গুলো সাধারন ভাবে পাঠানো যায় না। যদি পাঠান, তাহলে এটা গ্রাহকের কাছে html কোড হিসাবে যাবে। যা ইমেল পাঠানের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
html ইমেল পাঠাতে বেসিক মোডে ইমেল অন করে নিতে হয়। অনেক প্রোভাইডাররা আলাদা html মোড দিয়ে দেয়। যারা দেয় না তাদেরটা ব্যাসিক মোডে অন করতে হয়। এটা অন্য ভাবেও করা যায়। আপনার আউট লুক এক্সেপ্রেস দিয়েও করতে পারেন। ওটা শুধু কনফিগার করে নিতে হবে। সাধারনত বিভিন্ন ইমেলের উত্তরে বায়ারের দেওয়া ইমেল টেমপ্লেটটা পাঠাতে হয় (ইমেল এড্রেস সাধারনত বায়ার দেন)। একটা ইমেল পাঠাতে আপনার অনলি ১ মিনিট লাগতে পারে। তবে প্রথম অবস্থায় সময় লাগবে।

Other - Administrative Support সাধারনত বিভিন্ন কাজের সমষ্টি। যেমন , ক্যাপচা এন্ট্রি , কপি পেষ্ট, ইত্যাদি।
ক্যাপচা এন্ট্রি হল একধরনের আকা বাকা সিকুরিটি লেখা যা হুবহু টাইপ করতে হয়। সাধারনত কোথাও কোন একাউন্ট করতে গেলে এই ধরনের আকা বাকা লেখা দেখা যায়।

আশা করি এখন সবাই ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন। আর সাহায্য করার জন্য গুগল সহ আমার মত অনেকই প্রস্তুত আছেন। ভারতের মত আমরাও যদি এই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টোরে আসি, তাহলে আমরাও বেকাকত্বের হাত থেকে রক্ষা পাবো। গত বছর আমাদের দেশ ৭০ লাখ ডলার এই সেক্টর থেকে আয় করেছে (২০১০ সালে)। আশা করা যাচ্ছে এ বছর আরো বেশি আয় করা সম্ভব হবে।

এখনও চিন্তা করছেন , কি করবেন? কিসের এত জড়তা আপনার? এখানে আপনার হারানোর কি আছে ? আছে শুধু প্রাপ্তির । আর দেশের মুখ উজ্জল করা। কেন বেকারত্বর অভিশাপ নিয়ে বসে থাকবেন? আব্বার ঘাড়ে আর কতদিন চেপে বসে থাকবেন? এখন সময় হয়েছে কিছু করে দেখানোর। আপনার হাতের জাদু দেখান। জন্মসুত্রে কেউ প্রতিভাবান বা সাফল্যবান হতে পারে না। নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়। জন্মের সময় আমরা কোটি কোটি টাকা মুল্যের ব্রেন নিয়ে জন্মগ্রহন করি। এটা বিশ্বের সবচেরয় দামি কম্পিউটার। আমরা কেন এটার ব্যবহার করব না?

সাধারন একটা জিনিস চিন্তা করেন, এক খন্ড লোহা ফেলে রাখলে কি হয়? মরিচা ধরে, নষ্ট হয়। কিন্তু ওটা যদি নিয়মিত ব্যবহার করা হয় তাহলে কি হয় বলেন তো? চকচক করে। আপনার হাতের কিবোডের দিতে তাকান। কি দেখছেন? কিছু কি খুবই চকচকে। আর কিছু কি মলিন। বলেনতো কেন? ঐ একই উত্তর, ব্যবহার।

আসুন সমস্ত জডতা ভুলে কাজে হাত লাগাই। আসুন ভয়কে জয় করি। হিসাব করে দেখুন তো সারাদিন কত সময় নষ্ট করছেন? প্রথম দিকে ২ ঘন্টা করে এই কাজে সময় দিন। যদি ভালো লাগে তাহলে লেগে থাকেন। না লাগলেতো পুরাতন রাস্তা খোলাই থাকছে। এখনও চিন্তা করছেন?

গতদিন ডিসকোভারীতে বেয়ার গ্রীল একটা কথা বলেছিলেন, যখন মনে হয় আমি এ কাজ করতে পারব না তখন বার বার মনে মনে বলতে হয় " আমি অবশ্যই এটা পারব। আমি অবশ্যই এটা পারব। " দেখবেন কাজটা সফল হয়েছে।

অচেনা লোককে কেউই কাজ দিতে চায় না। এজন্য প্রথম অবস্থায় কাজ পাওয়া কঠিন। কিন্তু মাত্র এক মাস লেগে থাকেন , সবাই আপনাকে (আপনার নাম) চিনে ফেলবে। তার পর কাজ পাবেন। আমার কাথা একবার পবীক্ষা করে দেখুন।

আমার কথা এখন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? যখন আপনি সফল হবেন , তখন এই অধমকে আপনার মনেও থাকবে না। যাই হোক, সব কথার মদ্দা কথা হচ্ছে লেগে থাকতে হবে। নইলে কিছুই হবে না।

অন্তত এক বার আমার কথা শুনে এই লাইনে আসুন। নিজের বেকারত্ব গোছান। আসুন ফ্রিল্যান্সার হই।

ঢাকা ভাগ কি

ঢাকা ভাগ কি? ঢাকা ভাগ ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ভাগ কি একই কথা। না একই কথা নয়। ঢাকা ভাগ বলতে আমরা রাজধানী ঢাকাকে কে ভাগ করা বুঝাই। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের ভাগ কখনই ঢাকা ভাগ নয়। একটি সেবা সংস্থার ভাগ কখনই রাজধানীর ভাগ বুঝায় না। তাই সংবিধানে যেখানে বলা আছে কোনো ভাবেই রাজধানীর সীমানা পরিবর্তন করা যাবে না। সে প্রশ্ন সিটি কর্পোরেশনের বিকেন্দ্রীকরণে উঠানো যায় না। যদি সে প্রশ্ন কতিপয় সংবিধান বিশেষজ্ঞ সংবিধানের দোহাই দিয়ে বলতে শুরু করেন তবে বলতে হয়। ঢাকার সীমানা বৃদ্ধি করার যে প্রস্তাব করা হচ্ছে, তা সংবিধান বিরোধী। সীমানা বৃদ্ধি একটি পরিবর্তন। সীমানা হ্রাসও একটি পরিবর্তন। এখন সীমানা বৃদ্ধি জনিত পরিবর্তন যদি গ্রহণ যোগ্য হয় তবে সীমানা ছোট করন জনিত পরিবর্তন কেনও গ্রহণ যোগ্য হবে না?

সংবিধান বলছে রাজধানীর সীমানা কোনোভাবে পরিবর্তন করা যাবে না। এর অর্থ দাড়ায় বৃদ্ধি বা হ্রাস কোনোটাই করা যাবে না। কিন্তু রাজধানীর সীমানা পরিবর্তন হয়নি, হয়েছে এর কর্পোরেশনের পরিচিত । এক কথায় বলা যায় নাম পরিচিতির পরিবর্তন।

এ সরকারের আমলে রাজধানীতে অতিরিক্ত কয়েকটি নতুন থানা হয়েছে। কই সেটি নিয়ে তো কেউ হাউকাউ করেনা। সেবার মান তো বাড়েনি। জনগণ নতুন থানা গুলো থেকে কি সেবা পাচ্ছে? সেটা কেউ বলতে পারে না। নতুন কর্পোরেশন হলে ঢাকাবাসী উন্নত সেবা পাবে বা আগের চেয়ে ভালো সেবা পাবে। এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। ক্ষমতাসীন দল ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দখল নেবার জন্যই এ ভাগ আনছেন। এটাই সত্যি। কারণ রাজধানী বাসী এ সরকারকে পছন্দ করে না। লোডশেডিং গ্যাস সংকট ও পানি সংকট এগুলো সহ্য করে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেবে বলে মনে হয় না। বিএনপি থাকলেও যে এসব সমস্যা দূর হবে সেটাও নয়। তারপরও মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একটা আলাদা ইমেজ পুরান ঢাকাতে রয়েছে।

ভাগ করলে যদি সেবার মান বাড়ে তবে ঢাকার দুইভাগ কেনো। চার ভাগে আপত্তি কোথায়? উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম সবদিকের নামে ঢাকার পরিচিতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ুক। কলকাতা সাউথ কলকাতা নর্থ এসব পরিচিতি তো প্রতিবেশী দেশের শহর গুলোতে আছে।

তাই সুশীল দের ঢাকা ভাগ নিয়ে হাউ কাউ ঠিক না।
আপনাকে আমরা সাধারণ জনগন, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম তাদের জীবনের প্রথম ভোট দিয়ে পূনঃনির্বাচিত কুরেছি এই ভেবে যে আপনি বরাবরি সুদূর প্রাসারি চিন্তা-ভাবনা করেন । কিছুদিন পর-পর আপনার বিভিন্নধরনের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দেখে আমরা দেশবাসী পুলকিত হই । আমি আপনার অধিনস্ত একজন নগন্য প্রজা হয়ে আজ আপনাকে একটি প্রস্তাব দিব । প্রথমেই বলে রাখি এই প্রস্তাবে যদি কোন বেয়াদবি হয়ে থাকে নিজগুনে ক্ষমা করে দিবেন ।
বর্তমানে আপনি ঢাকা বিভক্তিকরনের যে মহা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটাকে কিছু পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা উচিত বলে আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্ক জানান দিচ্ছে । আপনি মহান, আপনি মহীয়ষী । আপনার চিন্তাভাবনা কেন শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক হবে? আপনি চিন্তা করবেন বৃহৎ পরিসরে । আসুন দেশ শাসন সুবিধার্থে ঢাকার মতো পুরো দেশকে দুটি ভাগে ভাগ করে দেই । এর একভাগ পেলো স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আর অন্যভাগ জাতিয়তাবাদী দল বিএনপি । আমার ছোট মুখে এই বড় প্রস্তাব শুনে আপনি এই মুহুর্তে নিশ্চই রেগে যাচ্ছেন না । আপনি এই প্রস্তাবের সুবিধা গুলো ভেবে দেখলে নিশ্চই রাগ করার কথা ভাববেনি না । সুবিধাগুলো নিম্নে আপনার আপনার সামনে তুলে ধরা হলো-
• দেশ শাসনের মহান দায়িত্ব নিয়ে আপনারা বড় দুই দলের চিরদিনের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটবে ।
• প্রতি ৫ বছর পর পর নির্বাচনের পরিবর্তে ফুটবল ম্যাচের মতো টস করা হবে শুধু মাত্র প্রান্ত বদল করার জন্য । অর্থাৎ কোন ভাগ কোন্ দল শাসন করবেন তা নির্ধারন করা হবে । এতে করে প্রতিবার নির্বাচন বাবদ বিপুল পরিমানের অর্থের জলাঞ্জলী হবে না । ঐ টাকা দিয়ে গঠনমুলক অনেক কাজ করা যাবে । সেটা জনগণের হোক আর আপনাদেরি হোক তাতে কারো কাছে জবাব দিহি করতে হবে না ।
• দেশে কোন বিরোধিদল থাকবে না তাই হরতালও ডাকা হবে না । এ বাবদ আপনাদের আর এই অভাগা জনগনদের আরো কিছু টাকা বেঁচে যাবে ।
• আপনারা দুই নেত্রীর এখন অনেক বয়েস হয়ে গেছে, একজন আর একজনের সমালোচনা বাবদ যে অমানুষিক মানসিক পরিশ্রম করতে হয় সেটার হাত থেকেও বেঁচে যাবেন ।
• সর্বোপুরি দেশবাসীরা সুখে থাকবে ।
আর একটা কথা, দেশকে সুদীর্ঘ্য চল্লিশ বছরের অশান্তির হাত থেকে রক্ষা করার কারনে আপনার দিকে নোবেল কমিটি নির্ঘাত চোখ তুলে তাকাবে তখন এহেনও সুপরামর্শ দেওয়ার জন্য এই অধমের দিকে একটু সুনজর দিবেন আশাকরি । আর কেউ জানুক আর না জানুক আমরা জানি আপনার আশে-পাশের কেউ কোন দিন আপনাকে সুপরামর্শ দেয় না । ও হ্যা আপনি এই বীল নির্বাচনের আগে পাশ করালেও আপনার জনসাধারন কিছু মনে করব না । তখন দেশের অলিতে-গলিতে কাউন্ট-ডাউন ওয়াচ ফিট করা হবে । যেটাতে সুদিনের ক্ষন গণনা করা হবে ।

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১১

স্বামীকে খুন করে রান্না!

পাকিস্তানের করাচিতে স্বামীকে খুন করার পর রান্না করেছেন এক স্ত্রী। তবে পুলিশ ধারণা করছে, মেয়েকে ধর্ষণ করতে চাওয়ায় মা জয়নাব আহমেদ ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। প্রথমে তিনি তাঁর স্বামীকে অচেতন করেন এবং কেটে টুকরো টুকরো করেন। এমনকি তিনি এর মধ্যে কয়েকটি টুকরো পানিতে সিদ্ধও করেন।

কিন্তু এতেই ফেঁসে যান ওই নারী। কেননা, ওই রান্না থেকে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে এক প্রতিবেশী পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় জয়নাবকে ও তাঁর ভাইয়ের ছেলেকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হবে।

আহারে! উনি ওয়ান ডে দল থেকেও বাদ

undefined

আহারে! উনি ওয়ান ডে দল থেকেও বাদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া মোহাম্মদ আশরাফুল পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলেও সুযোগ পাননি। শুক্রবার ঘোষিত হয়েছে ১৫ সদস্যের দলটি।

একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেও অংশ নেবে এই দলটি। তবে শাহরিয়ার নাফীসকে শুধু ওয়ানডে সিরিজের জন্যই দলে রাখা হয়েছে।

আশরাফুল উপেক্ষিত হলেও তিন বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজা।

গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ৭ উইকেট নেয়া ইলিয়াস সানিও সুযোগ পেয়েছেন এই দলে।

জ্বরের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটিও ম্যাচ খেলতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সুস্থ হয়ে ওঠায় বাংলাদেশের সহ-অধিনায়কও ফিরেছেন দলে।

আশরাফুল ছাড়া বাদ পড়েছেন সোহরাওয়ার্দী শুভ ও শুভাগত হোম চৌধুরী।

বাংলাদেশ দল: মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), মাহমুদুল্ল¬াহ রিয়াদ (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান, অলক কাপালি, নাঈম ইসলাম, নাসির হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, নাজমুল হোসেন, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, ইলিয়াস সানি, ফরহাদ রেজা ও শাহরিয়ার নাফীস।


আজ আমি তীব্র দহনে জীবন্ত অঙ্গার,
আজ আমি পোড়াব প্রতিটি শব্দ,
প্রতিটি রক্ত কণিকা,
প্রতিটি ভেজা সকাল,
প্রতিটি পাখির শিষ,
প্রতিটি ভাস্কর্য,
প্রতিটি অমোঘ জীবন।

আমার অনলে জ্বলবে কাদাকাদা মেঘ,
নিষ্প্রাণ গমের ক্ষেত,
ইটের ভাটা,
শহুরে বস্তি,
কবির কাঁধের ঝোলা,
বৃদ্ধার তসবী।

আমি হারিয়ে যাব,
ধুলি করে দিয়ে যাব সব।
গেরস্তের গোয়াল থেকে
জেলের খুটের বিড়ি,
বিজ্ঞানীর টেলিস্কোপ থেকে
টোকাইয়ের ছেড়া কাগজ
সব মাথা নুয়াবে,
ওই নির্বাক রাজপথের সুড়কী পর্যন্ত।

টিপুকে ওরা ভালবাসে নি,
টিপুকে ওরা ছুঁয়ে দেখে নি,
টিপুকে ওরা স্যালুট দেয় নি,
টিপুকে ওরা নোবাল প্রাইজ দেয় নি,
টিপুকে ওরা নোলা থেকে
একঢোঁক জল দেয় নি।
টিপু চলে গেছে চুপচাপ,
আমাদের কজনকে অঙ্গার করে রেখে।

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১১

ছোট্টনুভূতি


হিম হিম কুয়াশা
ধীরে ধীরে পড়ছে
হালকা হালকা
শীত শীত করছে।
চারিদিকে সুনসান
চুপচাপ আধারে
মৃদু মৃদু বৈছে
শীতবায়ু চারধারে।
একা একা পথে আমি
নীরবেতে চলছি
নিজ মনে ভেবে ভেবে
মন নিয়ে দুলছি।

ছাগু!!!!!













কেউ আগে দেখে থাকলে দুঃখি

খুলনা যাওয়ার পথে পথে রোডমার্চকে বরনের প্রস্তুতি এখন থেকেই.

২৬ তারিখে খুলনা অভিমুখে ৪ দলীয়ে জোটের রোডমার্চ নিয়ে এখনি উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। 

পথের দিশারী

বন্ধু !
‘দুঃখ-কষ্ট’ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ
প্রিয় কোন পার্থিব সম্পদ ;
ও আমার সাত রাজার অমূল্য ধন
তুমি ইচ্ছে করলেই-
এই মূল্যবান সম্পদ অর্জন করতে পারো না,
আবার কখন তোমার সামনে সে আসবে ?
তা-ও বলতে পারো না।
অতএব,যদি কেউ আমাকে
সেই সম্পত্তি উইল করে দেয়,
অথবা আমাকে নিঃশেষে সমর্পন করে-
তবে আমি সৌভাগ্যবানই বটে।
যন্ত্রণাকে দূরে ঠেলে দেবার অভ্যাস
আমার মধ্যে বিন্দুমাত্রও নেই।
কেননা,ওই আমাকে শেখায়
কিভাবে বাঁচতে হয়, কিভাবে চলতে হয় !
ও আমার পথের দিশারী।
যে আমাকে দুঃখ দিতে কৃপণতা করে
তাকে আমি মনে রাখতে পারি না,
ও আমাকে স্বার্থপরতা,আত্মকেন্দ্রিকতা সম্পর্কে
প্রচন্ড অভিজ্ঞ করে তুলেছে !
কেউ আমাকে ঐসব বললে-
মোটেও আমার খারাপ লাগে না,
আমি যা-তাই তো বলে।
বন্ধু,আমি সূর্য হতে চাই ;
দেখো না, তার আলোতে মানুষ কত চঞ্চল,
আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।
অথচ,কে জানে কত কষ্ট তার ?
জন্ম-জন্মান্তরে সে জ্বলেই যাচ্ছে,
কোন অবসর নেই-নেই ছুটি।
সেই অগ্নিকুন্ডলীকে ঘিরেই-
জরাজীর্ণ পৃথিবীর ছুটে চলা,
তবুও সে কাঁদে না !
কাঁদে ঐ সাগর,
ওর কান্নায় প্রায় ডুবে গেছে পৃথিবী !
আমার কলিজার একদম মাঝখানে
সামান্য একটু ফাঁকা জায়গা আছে,
দুঃখগুলো সে অংশ দখল করে ফেলেছে ;
কষ্ট বাড়ে কিন্তু জায়গা বাড়ে না।
চাপাচাপি করে থাকতে হয় বলে
গুঁড়ো কৃমির মত মাঝে মাঝেই
আমাকে সুড়সুড়ি দেয় ;
ঔষধে সাময়িক প্রশমন হলেও
সময় ও কালের ব্যবধানে মাথা চাড়া দেয়।
তাই কষ্ট নামের সেই সম্পদ
আমার চাই-ই-চাই !
বন্ধু !! ওই আমার সবচেয়ে আপন,
আমার কলিজা থেকে ওকে কেড়ে নিও না
ও আমার পরম-আত্মীয়। 

ফেসবুককে রাঙিয়ে দেই লাল-সবুজে




আমরা আমাদের এই ছোট দেশটাকে অনেক ভালবাসি। কিন্তু কজনই বা দেখাতে পারি? যদি বলি আমরা চাইলেই পারি! কিভাবে? খুব ছোট্ট একটা কাজ করে। সেটা হলঃ আগামী ১৫ ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০০ টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর রাত ১২:০০ টা পর্যন্ত আমরা আমাদের ফেসবুক প্রোফাইল এ ব্যক্তিগত ছবির পরিবর্তে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ছবি ব্যবহার করব। দেশকে যে আমরা মায়ের মত ভালোবাসি, আসুন তা বাকী দুনিয়াকে দেখিয়ে দিই।


ভাবুন তো একবার! পুরো ফেসবুকের বাংলাদেশী প্রোফাইল গুলোতে শুধু লাল-আর সবুজে ছেয়ে যাবে! ভাবতেই কেমন লাগছে না??? নিশ্চয়ই বাংলাদেশী হিসেবে নিজের কাছেই গর্বে ফুলে ঊঠবে আপনার বুক?


কিন্তু এজন্য আপনাদের সহযোগীতা প্রয়োজন। আশা করি এই ইভেন্টে আপনারা সবাই যোগ দেবেন, এবং নিজেদের ফ্রেন্ডলিস্টের সকল বন্ধুকে এ ইভেন্ট এ অংশগ্রহন করার জন্য অনুরোধ করবেন।


বাংলাদেশে এখন ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা আনুমানিক ১.৭ মিলিয়ন, আমরা আশা করি অন্তত অর্ধেক সংখ্যক ব্যবহারকারী এই ইভেন্ট এর কথা জানবে এবং এতে অংশগ্রহন করবে। এ জন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা কাম্য।

খালেদার চিঠি ও হাসিনার বিদ্রুপ

হাসিবু বলেছেন, এখন পত্র লেখেন কেন? এটা যে প্রেম পত্র নয় তা হাসিবুও জানেন। বেগম গোলাপজানের চিঠি লেখাটাও দোষের হয়েছে। তিনি যে সাহস করে পত্র লিখেছেন সেটাই বা কম কিসে। তিনি দুই দুইবার ক্ষমতায় থাকা সত্তেও কাজের কাজতো কিছুই করতে পারেননি তো তাতে কি, ভারতে গেলে বাংলাদেশের সমস্ত সমস্যার কথা বলতে পর্যন্ত বেমালুম ভুলে যেতেন। ভাগ্যিস উনত্রিশ সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী হয়েছিলেন বলে আমাদের এ যাত্রায় রক্ষা। তিনি কি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবেন। আপনার না হয় দায় দায়িত্ববোধের প্রচন্ড অভাব, তাই বলে কি গোরাপজানের দায়িত্ববোধ থাকবে না। রাজাকার প্রেমিক ও পাকি পন্থিদের সামনে নিজেকে জাহির না করতে পারলে যে, ওনার মান থাকে না। এই হাসিনা নিম্নী মহিলাটির লজ্জা শরম হায়া কিচ্ছু নাই। দেশটাকে ভরতের করদরাজ্যে পরিনত করেও তার আস মিটে নাই। গতবার ফেনী পর্যন্ত ভারত বানিয়ে ছেড়েছিলেন। হিন্দু গন্ধযুক্ত নাপাক পানি আমদানি করে, সাঈদি ও মোজাহিদির মত ভন্ড ধর্ম ব্যাবসায়ীদের ধর্ম পালনে নানা ভাবে বাধার সৃষ্টি করেছিলেন। যা পরিশুদ্ধ করতে তাদের মতো চিহ্নিত রাজাকারদের তিনি মন্ত্রী বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বলাৎকার করতেও দ্বীধা বোধ করেননি। ২০০১ সালে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সাঈদির মত দেশে মডারেট ইসলাম কায়েম করার সার্থে পাঁচ বছর যে তান্ডব নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন, সবাই তাতে অতিষ্ট হয়ে তাদের চিরতরে পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। ক্ষমতায় আশার স্বপ্ন দেখাটা অন্যায় নয়, এটা বিএনপির গনতান্ত্রিক অধিকার। তবে এই সব চিঠিফিটি লিখে আর ক্ষমতায় ফিরে আসা যাবে বলে মনে হয় না। মানুষ এখন বেশ সচেতন। এসব ফালতু কথায় চিরে ভিজবে না। মমতা বহিন চোখ উল্টে দিতে এক সেকেন্ড সময় নেননি। ভারতীয়রা বাঙ্গালী কম দেশপ্রেমিক বেশী, আর আপনাদের মত ষ্টান্টবাজ নন। যদি সম্ভব হয় ভরতের কাছ থেকে কিছু শিখুন। অন্তত সার্থ রক্ষা করার কায়দাটা যা তারা বরাবর খুবই কৌশলে করে যাচ্ছে আর আমরা পড়ে পড়ে মার খাচ্ছি। চীনারা বা পাকিরা কোন কাজেই আসবে না, যদি নিজের রক্ষা নিজেরা করতে না পারি।

অতএব কথা না বাড়িয়ে দুজনে একত্রে বসে সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসুন। তাহলেই দেশ এগুবে।

কাদের সিদ্দিকী’র ‘দৈত্য’নীতি

'’৭১-এ হানাদার বাহিনীর আতঙ্ক কাদেরিয়া বাহিনী প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একমাত্র বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত। মুক্তিযুদ্ধোত্তর কাদের সিদ্দিকী সম্পর্কে আমরা অনেকটাই জানি। কিঞ্চিৎ জানতাম মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান সম্পর্কে। জানতাম না যুদ্ধের সময় তার দৈত্যনীতি নিয়ে। ৩১ মে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এ তার কলামে (মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি: ধলাপাড়া অভিযান) জানলাম কতটা পাশবিক তিনি ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দ্বৈতনীতি তিনি কিভাবে ধারণ করতেন। আসুন তার সুবিশাল কলামের কয়েকটি লাইনে চোখ বুলাই-

“ধলাপাড়ার রাজাকার কমান্ডার জসিম চৌধুরীর বাড়িতে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান। .......... অত্র এলাকায় চৌধুরীরা খুবই ধনাঢ্য সম্পদশালী পরিবার। .... খবর মতো (ড্যাক্‌সের ভিতর) নির্দিষ্ট স্থানে গুলিসহ রিভলবার এবং অনেক গুলি পাওয়া গেল।... ওই ড্যাক্‌সে নগদ ৮/১০ লাখ টাকা ছিল। সোনার পরিমাণ ৬/৭ মণ। (সেগুলো স্পর্শ না করায় গৃহিনীদের মনোভাব) .... এরা তো ..... শুধু অস্ত্রের জন্য এসেছে! দু’তিন জন মহিলা ... নানা স্থান থেকে গুলি বন্দুক নিয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিল। ..... আপ্যায়নের ধুম পড়ে যায়। ... কারও কিছু খাবার উপায় ছিল না। কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল অভিযানে গিয়ে কারও বাড়িতে কোনো কিছু খাওয়া যাবে না। ....... রিপোর্ট করল, অভিযান সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। ... রিপোর্ট শেষে যোদ্ধাদের চেক করতে গিয়ে দেখা গেল ১৪-১৫ বছরের ছোট একটি ছেলে। তার গায়ে .. একটি শাল ... যার দাম তখন বড় জোর ৭০-৮০ টাকা ছিল। তাকে যেই জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এটা তুমি পেলে কোথায়?’ .... খুব সন্ত্রস্তভাবে বলল, ‘চৌধুরী বাড়িতে।‘-কেন নিয়েছিলে-আর কেনই বা ফেরত দাওনি? .... ‘গেঞ্জি গায়ে ছিলাম। বৃষ্টি হওয়ায় ঠান্ডা লাগছিল ... গায়ে দেয়ার মতো কোনো কাপড় আছে কিনা বললে চাদরটি দিয়েছিলল।... শাল গায়ে সে কখন ফিরে এসেছে, অভিযান সফলতার কারণে হয়তো বুঝতেই পারেনি। ...... এখন কি হবে প্রশ্ন করতে বাবু নামের ছোট্ট ছেলেটি অস্ফুটভাবে বলেছিল, ‘আইনমত আমাকে গুলি থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না’। সত্যিই ... কেউ তাকে বাঁচাতে পারেনি।

পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চলের সমন্বয়ের দায়িত্ব (১০-১১ দিনের জন্য) দেযা হয়েছিল শওকত মোমেন শাহজাহানকে। এরই মধ্যে সে পাহাড় তছনছ করে ফেলেছিল। .. বাড়িঘর ভেঙে খাট-পালঙ্ক, চকি-চৌকাঠ, বিছানাপত্র ক্যাম্পে নিয়ে এসেছিল। নলুয়ায় ৪-৫ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল। ..... সেই সময় যার তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকার উপর চাঁদা নিয়েছিল। না হলেও দেড়-দুইশ’ জনকে গরু-খাসি, ধান-চাল দেওয়ার জন্য হুমকিপত্র দিয়েছিল। .... তবে সে সবসময় একজন নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মী ছিল। ’৭১-এর জুলাই মাসের শেষ দিকে ওইসব অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ... বিচার সভা বসালে তার অপরাধ বিচার বিবেচনা করে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। দন্ড অনুমোদনের জন্যে আমার কাছে এলে সিদ্ধান্তটা বড় কঠোর বলে মনে হয়। .... আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের একজন পুরানো কর্মী। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে চিনি।..... অকপটে স্বীকার করে এবং এও বলে, সে কাজগুলো করেছে তা কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে করেনি। তার দায়িত্ব মনে করেই করেছে। তাই তার মৃত্যুদন্ডের বিষয়টি পুন:বিবেচনা জন্য স্থগিত রাখা হয়।.... শাহজাহানকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়া হয়। ... সেপ্টেম্বরের শেষে ... তাকে হেড কোয়ার্টারের বেসামরিক প্রশাসনে যুক্ত করা হয়। ... স্বাধীনতার পরে যারা আমার সাথে ছায়ার মতো থেকেছে তাদের মধ্যে শওকত মোমেন শাহজাহান একজন। যদিও সে বর্তমাসে সরকারি দলে থেকে আমার চরম বিরোধিতা করে এবং ’৯৯-এ ভোট কারপি করে বিশ্ব রেকর্ড করেছে।”

একটি শালের জন্য ১৪-১৫ বছরের একটি বাচ্চাকে মৃত্যুদন্ড। আর বিশ্বস্ত রাজনৈতিক কর্মী হওয়ায় একজন খুনে-লুটেরা’কে (কমান্ডারদের বিচারে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত) ২ মাসের কারাদন্ড দিয়ে প্রশাসনে যুক্ত করা এবং নিজ ছায়ায় রাখা! মুক্তিযোদ্ধাদের যেখানে পানি পান নিষেধ ছিল (টাগের্ট এরিয়ায়) তখন শান্ত এলকায় লুটপাট আর খুন করা দায়িত্ব মনে করা! কাদের সিদ্দিকী ‘বজ্রকথন’-কে মনে হয় ‘বস্ত্রকথন’। নিজে কতগুলো মহামূল্যের বস্ত্রের যোগ্য আর কার কার (ক্ষমতাবান) বস্ত্র হরণ করা যায়, এসবই তার লেখায় প্রকাশ পায়। 

সেই ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী


সেই ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী [পর্ব ১]

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

স্বাধীনতার পর ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর ছাড়া পাবার বিষয়টি ইদানিং সবত্রই আলোচিত হচ্ছে। একাত্তরের যুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবার পর এমন প্রশ্নও তোলা হচ্ছে যে, ভারতের নিকট আটক থাকা ঐ ১৯৫ জন পাকিস্তানীই ছিল প্রকৃত অপরাধী, এবং তখন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে এখন স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব নয়।
মুলত: কেন এবং কিভাবে সেই ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী ছাড়া পেয়েছিল তা উদ্ঘাটনই এই লেখার উদ্দেশ্য। বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক পত্রিকায় ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে এপ্রিল ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর এবং স্বাক্ষরিত বিভিন্ন চুক্তিপত্র উদ্ধৃত করে মূল ঘটনাপ্রবাহটি তুলে ধরা হয়েছে। লেখাটি তথ্যভিত্তক রাখার জন্য মন্তব্য বা সম্পাদকীয় কলাম যথাসম্ভব পরিহার করে মুলত: খবরাখবরই উদ্ধৃত করা হলো। উল্লিখিত অধিকাংশ খবরই যদিও দেশি-বিদেশি একাধিক পত্রিকাতে ছাপা হয়েছিল, তবু ঘটনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এখানে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর খবরই বেশি উদ্ধৃত করা হয়েছে।
যুদ্ধবন্দী স্থানান্তর
একাত্তরে পাকিস্তানের পরাজয় যখন নিশ্চিত হওয়া শুরু হয়, তখন থেকেই মুক্তিবাহিনী ও গনহত্যার শিকার সাধারন বাঙালীর ক্ষোভ থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়টি পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। যুদ্ধে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহন পরাজিত পাকিস্তানীদের জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দেয়। ভারত যেহেতু আর্ন্তজাতিক জেনেভা কনভেনশনের সদস্য এবং যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনকারী, সেহেতু পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী রক্ষা করার ব্যপারে ভারত আর্ন্তজাতিক ভাবে দায়বদ্ধ।
১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর লে. জেনারেল এএকে নিয়াজীর যুদ্ধবিরতীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জামসেদজি মানেকশ পরের দিনই নিয়াজীকে আত্নসমর্পণ করার যে চরমপত্র দেন, তাতে পাকিস্তানের সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। [১] এরপর ১৬ই ডিসেম্বর নিয়াজী যৌথবাহিনীর নিকট যে আত্নসমর্পন পত্র স্বাক্ষর করেন, তাতে উল্লেখ করা হয় “আত্নসমর্পনকারী সৈন্যদের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী মর্যাদা ও সম্মান প্রদান করা হবে এবং আত্নসমর্পনকারী সকল পাকিস্তানী সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে”। [২]
খুলনায় প্রায় আট হাজার পাকিস্তানী সৈন্যের আত্নসমর্পণ তদারককারী ভারতীয় মেজর জেনারেল দিলবর সিং এক সাক্ষাৎকারে জানান যে যুদ্ধ পরবর্তী সপ্তাহগুলিতে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার এবং পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের ভারতের বিভিন্ন শিবিরে স্থানান্তর করাই ছিল তাদের অন্যতম দ্বায়িত্ব। তিনি আরো বলেন, “যেহেতু স্থানীয় সহযোগীরা (যেমন- রাজাকার) জেনেভা কনভেনশনের অন্তর্ভুক্ত নয়, এরা বাংলাদেশ সরকারের দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়বে”। [৩]
যুদ্ধাপরাধের বিচার
বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম কামরুজ্জামান ২৪শে ডিসেম্বর ১৯৭১ ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশ ইতমধ্যে ৩০ জন শীর্ষস্থানীয় পাকিস্তানী সরকারী কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে এবং গনহত্যায় সহযোগিতার জন্য অচিরেই তাদের বিচার হবে। এর দু’দিন পরই ২৬শে ডিসেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের গনহত্যার শিকার সাতজন বাংলাদেশী কর্মকর্তার পরিবার ভারতের কাছে আবেদন জানান যেন ভারত দোষী পাকিস্তানীদের বিচারে বাংলাদেশকে সহায়তা করে। জবাবে ভারতীয় কুটনীতিক দূর্গা প্রসাদ ধর কিছুটা অনিচ্ছার সাথে শুধু জানান যে “ভারত যুদ্ধবন্দীদের বিষয়ে আর্ন্তজাতিক আইনে তার কী কর্তব্য তা পরীক্ষা করে দেখছে”। [৪]
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কারামুক্তির পর দেশে ফিরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। ২৯শে মার্চ ১৯৭২ নিয়াজী এবং রাও ফরমান আলী-সহ ১১০০ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সরকারী পরিকল্পনা ঘোষনা করা হয়। [৫] সরকার দুইস্তর বিশিষ্ট একটি বিচার পরিকল্পনা পেশ করে যেখানে কিছু শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচারে দেশি-বিদেশি জুরি নিয়োগ; এবং অন্যদের জন্য শুধু দেশীয় জুরি নিয়োগের সীদ্ধান্ত হয়। [৬]
আর্ন্তজাতিক চাপ এড়াতে এসময় ভারত শুধু সেইসব পাকিস্তানী সৈন্যদের হস্তান্তর করতে রাজী হয় যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে ‘প্রাইমা ফেসিই কেস’ (prima facie case) হাজির করতে পারবে। [৭] এরপর বাংলাদেশ সরকারের সংগৃহীত প্রমানের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ১৪ই জুন ভারত সরকার নিয়াজীসহ প্রাথমিকভাবে ১৫০ জন যুদ্ধবন্দীকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের নিকট হস্তান্তরে সম্মত হয়। [৮]
ইন্দীরা গান্ধী ও জুলফিকার আলী ভুট্টর সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ১৯শে জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পুনরায় এই বিচারের কথা স্মরন করিয়ে দেন। ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের ওয়েব সাইটে সিমলার সম্পূর্ণ চুক্তিপত্রটি সংরক্ষিত থাকলেও, এই সিমলা চুক্তিতেই যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে অনেকেই ভুল করে থাকেন। [৯] মুলত কাশ্মীর সীমান্তসহ দ্বিপাক্ষিক কিছু বিষয়েই ২রা জুলাই ১৯৭২ সালে ভারত-পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে যুদ্ধাপরাধী বা বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন বিষয়ই উল্লেখ করা হয়নি। [১০]
পাকিস্তানে বাঙালী নির্যাতন ও জিম্মি
যুদ্ধের সময় যে ৪ লক্ষ বাঙালী পাকিস্তানে আটকা পড়ে, পাকিস্তান সরকার তাদেরকে জিম্মি করে বাংলাদেশের বিচার বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করে। প্রায় ১৬ হাজার বাঙালী সরকারী কর্মকর্তা যারা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকা পড়ে এবং পরবর্তীতে চাকুরিচ্যুত হয়, তাদের পাকিস্তান ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক কর্মকর্তাকে ক্যাম্পে আটক করে রাখার কারনে বাংলাদেশ তখন আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদও জানায়। [১১]
এসময় পাকিস্তান সরকার পলায়নপর বাঙালীদের ধরিয়ে দেবার জন্য মাথাপিছু এক হাজার রুপি পুরষ্কার ঘোষনা করে। [১২] এধরনের ঘোষনার কারনে অনেক পাকিস্তানীই তখন পালানোর মিথ্যে অভিযোগ তুলে প্রতিবেশী বাঙালীদের ধরিয়ে দেয়া শুরু করে। আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটি (আইসিআর)-এর তৎকালীন একটি প্রতিবেদনে পাকিস্তানে জিম্মি বাঙালীদের দুর্বিষহ অবস্থা ফুটে উঠে। রিপোর্টে বলা হয়, শুধু “পাকিস্তান ত্যাগ করতে পারে এই অভিযোগে বাঙালীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে” এবং “হাজার হাজার বাঙালী বিনা বিচারে জেলে আটক আছে”। আন্তর্জাতিক ভাবে প্রচারিত এই রিপোর্টে আরো বলা হয়-
“হয়রানি এবং বৈষম্যমূলক আচরন নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাঙালীদের উপরের শ্রেণীতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি, যাদের এখন “নিগার” বা নিচুজাত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। কিন্তু যারা ইতমধ্যেই বৈষম্যের চুড়ান্ত সীমায় অবস্থার করছে, ঐ সব সাধারনের উপরে যতটুকু অতিরিক্ত বৈষম্য করা হচ্ছে, তার প্রভাবও অনেক বেশি”। [১৩]

নিগ্রহ আর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য শত শত বাঙালী তখন রিক্ত হস্তে আফগানিস্তানের দুর্গম উপজাতি-শাসিত অঞ্চল দিয়ে পালিয়ে বাচার চেষ্টা করে। [১৪]পাকিস্তানে এই বাঙালী নির্যাতন যে শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করার জন্যই, জুলফিকার আলি ভুট্ট পরবর্তীতে তা অংকোচেই প্রকাশ করেছেন।
[চলবে]
তথ্যসূত্র:
১. “Text of Indian Message”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৬/১২/১৯৭১, পৃ- ১৬
২. Reuters, (১৯৭১), “The Surrender Document” দি নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত, ১৭/১২/১৯৭১, পৃ- ১
৩. “Bengalis Hunt Down Biharis, Who Aided Foe”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২২/১২/১৯৭১, পৃ- ১৪
৪. “India Weighs Bengali Plea To Try Pakistani Officials”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৭/১২/১৯৭১, পৃ- ১
৫. “Bangladesh Will Try 1,100 Pakistanis”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৩০/০৩/১৯৭২, পৃ- ৩
৬. প্রাগুক্ত
৭. “India opens way for Dacca trials”. দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৮/০৩/১৯৭২, পৃ- ১
৮. “India to Deliver 150 P.O.W.'s To Bangladesh to Face Trial”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৫/০৬/১৯৭২, পৃ- ১১
৯. দেখুন এসংক্রান্ত প্রথম আলো খবর এখানে: http://prothom-alo.com/detail/news/53366
১০. পূর্ণাঙ্গ চুক্তিপত্রটি দেখুন http://mea.gov.in/jk/sim-ag.htm
১১. “Pakistan Denies Charge”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৭/০৪/১৯৭২, পৃ- ৬
১২. “Official Reports 2,000 Bengalis Held in Pakistani Jails”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৩/১২/১৯৭২, পৃ- ৩
১৩. প্রাগুক্ত
১৪. “Wave of Bengalis fleeing Pakistan”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১২/১১/১৯৭২, পৃ- ১০

সেই ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী [পর্ব ২]

সাঈদ আহমেদ এর ছবি
দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা ও জাতিসংঘে ভেটো
প্রায় ৯০ থেকে ৯৩ হাজার পাকিস্তানী বন্দীর ভরন-পোষণ এবং নিরাপত্তা বিধান ভারতের জন্যও একটি সমস্যা হয়ে ওঠে। ইতমধ্যে ভারতের বন্দি শিবিরগুলিতে একাধিকবার বিদ্রহের ঘটনা ঘটে। [১৫] পাকিস্তান একাধিকবার প্রচেষ্টা চালায় যেন ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক ভাবেই বন্দী মুক্তি সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের বাধার কারনে তা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের যুক্তি ছিল যে, ঐসব পাকিস্তানী সৈন্য ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্নসমর্পণ করেছে এবং বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া ভারত তাদের মুক্ত করতে পারে না। কিন্তু ভুট্ট দাবী করেন যে আটক সৈন্যরা মুলত: ভারতের বন্দী এবং যৌথ বাহিনীর কথা বলে আসলে পাকিস্তানের চোখে ধুলো দেয়া হচ্ছে। [১৬]
এই প্রক্ষিতে ১০ই আগস্ট ১৯৭২ এক সংবাদ সম্মেলনে ভুট্ট বলেন, “বাংলাদেশ ভেবেছে যে আমাদের বন্দীদের মুক্ত করার ব্যপারে তাদের ভেটো ক্ষমতা আছে”, কিন্তু “ভেটো আমাদের হাতেও একটি আছে”। [১৭]
পরবর্তীতে তিনি নিশ্চত করেন যে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ভাবেই চীনকে অনুরোধ করেছে যেন জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য বাংলাদেশের আবেদনে চীন ভেটো দেয়। [১৮] সদ্যস্বাধীন একটি দেশের উন্নয়ন ও বৈদেশিক সহযোগিতা লাভে জাতিসংঘের সদস্যপদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে।
কিন্তু ২৫শে আগস্ট পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশের সদস্যপদের বিপক্ষে চীন নিরাপত্তা পরিষদে তার প্রথম ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে। [১৯] জাতিসংঘের মতন একটি আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে বঞ্চিত হতে হয় মুলত: একটি বর্বর গনহত্যার বিচার দাবী করার কারনে । কিন্তু এত কিছুর পরেও বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে অটল থাকে।
বিচার ও প্রত্যাবাসন অচলাবস্থা
পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীসহ সকল বন্দীর মুক্তির দাবীতে বাংলাদেশে ও পাকিস্তানে আটক উভয় দেশের কয়েক লক্ষ নিরাপরাধ নাগরিকদের প্রত্যাবাসনসহ দ্বিপাক্ষিক অন্যান্য বিষয়েও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ইতমধ্যে বাংলাদেশ আরো ৪৫ জন পাকিস্তানী সৈন্যের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ যোগাড় করায় অভিযুক্ত পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা ১৯৫-এ উপনীত হয়। এসময় স্থানীয় ও পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করন ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ চলতে থাকে।
১৯৭২ সালের নভেম্বরে ভারত আটক পাকিস্তানী সৈন্যদের পরিবারের প্রায় ৬ হাজার সদস্যকে মুক্তি দিলে, পাকিস্তানও আটকে পড়া ১০ হাজার বাঙালী নারী ও শিশুর একটি দলকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসনে সম্মত হয়। [২০] কিন্তু পাকিস্তানে আটক অধিকাংশ বাঙালীর ভাগ্যই অনিশ্চিত থেকে যায়।
অবশেষে এ অচলাবস্থার অবসানের লক্ষ্যে ১৭ই এপ্রিল ১৯৭৩, টানা চার দিনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর, বাংলাদেশ এবং ভারত একটি ‘যুগপৎ প্রত্যাবাসন’ প্রস্তাব দেয় পাকিস্তানকে। এই প্রস্তাব অনুসারে ভারত তার কাছে আটক প্রায় ৯০ হাজার বন্দী পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করবে, এবং বিনিময়ে পাকিস্তান তার কাছে আটক প্রায় দুই লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিককে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসিত করবে। এছাড়া, বাংলাদেশে আটক প্রায় ২৬০ হাজার অবাঙালী (বিহারী)-কেও পাকিস্তান ফেরত নিবে। [২১]
তবে এতকিছুর পরেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে অটল থেকে বাংলাদেশ অভিযুক্ত পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের এই প্রত্যাবাসন প্রস্তাবের বাইরে রাখে। [২২]
নিরাপরাধ বাঙালির বিচার
ভুট্ট যদিও ‘যুগপৎ প্রত্যাবাসন’ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেন, কিন্তু তিনি মাত্র ৫০ হাজার বিহারীকে ফেরত নিতে সম্মত হন এবং বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানী সৈন্যের বিচারের তীব্র প্রতিবাদ করেন। বাংলাদেশ যদি অভিযুক্ত পাকিস্তানীদের বিচার করে, তাহলে তিনি পাকিস্তানে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের একই রকম ট্রাইবুনালে বিচার করবেন বলে হুমকি দেন। ১৯৭৩ সালের ২৭শে মে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে ভুট্ট বলেন-
“(বাঙালীদের)এখানে বিচার করার দাবী জনগন করবে। আমরা জানি বাঙালীরা যুদ্ধের সময় তথ্য পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনিদির্ষ্ট অভিযোগ আনা হবে। কতজনের বিচার করা হবে, তা আমি বলতে পারছি না”। [২৩]

ভুট্ট দাবী করেন যে, বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানীর সৈন্যদের বিচার করে, তাহলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ক্যু’র মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সরকারের পতন ঘটাবে এবং দুই দেশের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে যাবে। তিনি দাবী করেন, এই চক্রান্তের জন্য ইতমধ্যেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। [২৪]
ভুট্টর এ দাবী প্রত্যাখ্যান করে ১৯৭৩ সালের ৭ই জুন এক সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিবর রহমান বলেন-
“মনবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ভোলা সম্ভব নয়, এই হত্যা, ধর্ষণ, লুটের কথা জানতে হবে। যুদ্ধ শেষের মাত্র তিন দিন আগে তারা আমার বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছে। তারা প্রায় ২ লক্ষ নারীকে নির্যাতন করেছে-এমনকি ১৩ বছরের মেয়েকেও। আমি এই বিচার প্রতিশোধের জন্য করছি না, আমি এটা করছি মানবতার জন্য”। [২৫]
তিনি পাকিস্তানে বাঙালীদের বিচারের হুমকির প্রতিবাদে বলেন, “এটা অবিশ্বাস্য… এই মানুষগুলো ডাক্তার, বিজ্ঞানী, সরকারী ও সামরিক কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশে ফেরত আসতে চায়”।
তিনি প্রশ্ন করেন, “এরা কী অপরাধ করেছে? এটা ভুট্টর কী ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণতা?” [২৬]
কিন্তু ভুট্ট যে শুধু হুমকিই দিচ্ছেন না, তা প্রমাণের জন্য পাকিস্তান ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীর ‘বদলি জিম্মি’ হিসেবে ২০৩ জন শীর্ষ বাঙালী কর্মকর্তাকে বিচারের জন্য গ্রেফতার করে। [২৭]
স্থানীয় ও পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু
এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় ও পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য পৃথক প্রক্রিয়া শুরু করে। স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ‘বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইবুন্যাল) অধ্যাদেশ ১৯৭২’ জারি করা হয়।
১৫ই জুলাই ১৯৭৩ বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৭(৩) ধারা সংযুক্ত করা হয় যেখানে “গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক, ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান” অর্ন্তভুক্ত করা হয়।[২৮]
এর মাত্র পাঁচ দিন পরই ২০ জুলাই ঘোষণা করা হয় ‘আর্ন্তজাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ যার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধের জন্য স্থানীয় ও পাকিস্তানী উভয় ধরনের যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পথ সুগম হয়। [২৯]
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনৈতিক ভাষণ [৩০], সংবিধানের ধারা [৩১] ও ট্রাইব্যুনাল আইনে [৩২] আর্ন্তজাতিক ন্যুরেমবার্গ ট্রাইবুনালের ৬(সি) ধারা [৩৩] অনুসরন করে যুদ্ধের সময় সাধারন জনগনের উপর পরিচালিত হত্যা-নির্যাতন বিষয়ক যুদ্ধাপরাধ বোঝাতে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কৌতুহলের বিষয় হলো, পচাঁত্তরের শেষ দিকে দালাল আইন বাতিলসহ অন্যান্য অনেক আইনি এবং সংবিধানিক পরিবর্তন আনা হলেও, কোন সরকারই এ পর্যন্ত সংবিধানের ৪৭(৩) ধারা অথবা ‘আর্ন্তজাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩’ বাতিল করেনি— যা ‘সহায়ক বাহিনীর সদস্য’ অর্থাৎ স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পথ উন্মুক্ত রেখেছে। [চলবে]
তথ্যসূত্র:
১৫. “4 Pakistani Prisoners Slain”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৯/০৬/১৯৭২, পৃ- ৩৯
১৬. “Bangladesh Will Try 1,100 Pakistanis”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৩০/০৩/১৯৭২, পৃ- ৩
১৭. Transcript of President Bhutto's Press Conference on Aug 10, 1972. উদ্ধৃত Burke, S.M. (1971). “The Postwar Diplomacy of the Indo-Pakistani War of 1971”, এশিয়ান সারভে, ভলিউম- ১৩, সংখ্যা ১১, (নভে ১৯৭৩)পৃ-১০৩৯
১৮. Weekly Commentary and Pakistan News Digest, ২৪/১১/১৯৭২. উদ্ধৃত Burke (১৯৭১), প্রাগুক্ত
১৯. “ A Veto By Peking” দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৭/০৮/১৯৭২, পৃ- ই৩
২০. “Pakistan to Allow 10,000 to Return to Bangladesh”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৩/১১/১৯৭২, পৃ- ১৫
২১. “India and Bangladesh Offer Plan For End of Deadlock on Prisoners”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৮/০৪/১৯৭৩, পৃ- ৯৭
২২. প্রাগুক্ত
২৩. “Bhutto Threatens to Try Bengalis Held in Pakistan”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৯/০৫/১৯৭৩, পৃ- ৩
২৪. প্রাগুক্ত
২৫. “Mujib Insists Pakistani P.O.W.'s Will Be Tried”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ০৯/০৬/১৯৭৩, পৃ- ৯
২৬. প্রাগুক্ত
২৭. “India-Pakistan Talks Reach Impasse”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৬/০৮/১৯৭৩, পৃ- ৩
২৮. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, ধারা ৪৭(৩), দেখুন-http://bdlaws.gov.bd/bangla_pdf_part.php?id=957
২৯. The International Crimes (Tribunals) Act, 1973 (ACT NO. XIX OF 1973), ২০ জুলাই ১৯৭৩, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
৩০. “Mujib Insists Pakistani P.O.W.'s Will Be Tried”, প্রাগুক্ত
৩১. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, ধারা ৪৭(৩), প্রাগুক্ত
৩২. The International Crimes (Tribunals) Act, 1973 , প্রাগুক্ত
৩৩. দেখুন http://avalon.law.yale.edu/imt/imtconst.asp#art6

সেই ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী [পর্ব ৩]

সাঈদ আহমেদ এর ছবি
এবার ভারতের উল্টোরথ
ভারতীয় কুটনীতিক দূর্গা প্রসাদ ধরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে আগেই বলা হয়েছে যে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ভারত শুরুতে কিছুটা অনাগ্রহী ছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশের অব্যাহত চাপে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের হস্তান্তরে রাজী হলেও, ধীরে ধীরে ভারত বিচার-বিরোধী অবস্থান প্রকাশ করা শুরু করে।
ইতমধ্যে চিহ্নিত ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বাইরে যেন আর কোন পাকিস্তানী সৈন্যের বিচারে বাংলাদেশ আগ্রহী না হয়, ভারত সেজন্য চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখে। ১৯৭৩ সনের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় বিশেষ কুটনীতিক পি এন হাস্কর যখন ঢাকা সফরে আসেন, তখন ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক ‘দি স্টেটসম্যান’-এর এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, “বাংলাদেশকে যে আরো সহনশীলতা ও রাজনৈতিক নমনীয়তা প্রদর্শন করতে হবে, এই কথাটা যেন হাস্কর সাহেব নম্র কিন্তু জোরালো ভাবে বাংলাদেশকে জানিয়ে দেন”। [৩৪]
বাংলাদেশ সফর শেষ করে পি এন হাস্কর জুলাই এর শেষ সপ্তাহে যখন পাকিস্তান সফর করেন, সেখানেও ওই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি মুল আলোচ্য বিষয় ছিল। [৩৫]
এদিকে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিচারে চীনের অনাগ্রহ ভারতের জন্যও সমস্যার কারন হয়ে দাড়ায়। ফলে আর্ন্তজাতিক ও অভ্যন্তরীণ দাবীর মুখে ভারত দ্রুত পাকিস্তানী বন্দীদের ছেড়ে দেবার জন্য উৎসুক হয়ে ওঠে। এসময় ভারত তার বিচার-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে বাংলাদেশকে জানিয়ে দেয় যে, ‘এই বিচার প্রক্রিয়া উপমহাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে’। [৩৬]
বন্দীত্বের দুইরূপ
উল্লেখ্য, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সনে সিমলা চুক্তির সময় ভুট্টকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পাকিস্তান যে কোন একটি বিষয় প্রাথমিকভাবে ভারতের কাছে ফেরত চাইতে পারে- হয় আটক পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীর মুক্তি, অথবা পশ্চিম পাকিস্তানের কিছু অংশ যা যুদ্ধে ভারতের দখলে চলে গিয়েছিল তার অবমুক্তি। ভুট্ট নির্দিধায় যুদ্ধবন্দীর বদলে ভারতের দখলে থাকা জমি অবমুক্ত করার উপর জোর দেন ফলে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তই সিমলাতে অগ্রাধিকার পায়, যুদ্ধবন্দী নয়। [৩৭]
আপাতদৃষ্টিতে অমানবিক এই সীদ্ধান্তের কারন ভুট্ট সিমলায় তার সঙ্গে থাকা কন্যা বেনজীরকে ব্যাখ্যা করেছিলেন এভাবে- বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবন্দীর খাদ্য, বাসস্থান ও নিরাপত্তা ভারতের জন্য সমস্যা হয়ে দেখা দিবে এবং অনির্দিষ্টকাল এভাবে রাখাটা আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মানবিক হবে না। ফলে ভারতকে যুদ্ধবন্দীদের এমনিতেও ছেড়ে দিতে হবে।[৩৮]
বাংলাদেশের অবস্থান সবসময়ই ছিল অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তিদানের বিপক্ষে, কিন্তু অন্যান্য যুদ্ধবন্দীর প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে নয়। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বাদ দিয়ে যুদ্ধবন্দী প্রত্যাবাসনে ভুট্ট তার আপত্তি বজায় রাখেন। তিনি জানতেন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের ভরন-পোষন ছিল ভারতের জেনেভা কনভেনশনের শর্ত, কিন্তু পাকিস্তানে আটক অধিকাংশ বাঙালীই সাধারন জনগন এবং তারা কোন আনুষ্ঠানিক বা প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা-বঞ্ছিত। ফলে এসব বাঙালীদের নির্যাতনের খবর খুব একটা প্রকাশিত হবে না। অধিকাংশ বাঙালীই যুদ্ধের পর চাকরী হারান এবং বেকার অবস্থায় আটক থাকায় সর্বস্ব বিক্রি করে দিন চালাচ্ছিলেন। [৩৯] এ অবস্থায় আটক বাঙালীদের পক্ষে আর বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব নয় জেনে ৮ মার্চ ১৯৭৩ সনে শেখ মুজিব জাতিসংঘসহ অন্যান্য আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন এ অচলাবস্থার অবসানে এগিয়ে আসার জন্য।[৪০]
অবশেষে প্রত্যাবাসন
অবশেষে দীর্ঘ আলোচনার পর বাংলাদেশ-ভারতের ‘যুগপৎ প্রত্যাবাসন’ প্রস্তাব মেনে নিয়ে পাকিস্তান ২৮শে আগস্ট ১৯৭৩ দিল্লিতে ভারতের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশের সম্মতিতে স্বাক্ষরিত এ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অবশেষে পাকিস্তান ও ভারতে প্রায় দুই বছর ধরে আটক ‘প্রায়’ সকল বাঙালী ও পাকিস্তানী বন্দীর মুক্তি তরান্বিত করে। ১৯৭৩ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর শুরু [৪১] এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার প্রথম সপ্তাহেই ১৪৬৮ জন বাঙালী এবং ১৩০৮ জন পাকিস্তানী সৈন্যের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হয়।[৪২]
তবে বাংলাদেশের আপত্তির মুখে ১৯৫ জন পাকিস্তানীকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়। দিল্লি চুক্তিতে সীদ্ধান্ত নেয়া হয় যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে ১৯৫ জন পাকিস্তানীর বিষয়টির নিষ্পত্তি করবে। [৪৩] তবে পাকিস্তানও তার ১৯৫ জন পাকিস্তানীকে ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত দুইশতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে পণবন্দী হিসেবে এই প্রত্যাবাসনের বাইরে রেখে দেয়।
পাকিস্তানের বিকল্প প্রস্তাব
এক কিছুর পরেও যখন বাংলাদেশ সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানীর বিচারের বিষয়ে অনড় থাকে, তখন ১৯৭৩-এর এপ্রিলে পাকিস্তান সরকার একটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়। পাকিস্তান এ্যাফেয়ার্স পত্রিকার ১৯৭৩ সালের ১ মে প্রকাশিত এই প্রস্তাবে বলা হয়-
অভিযুক্ত অপরাধ যেহেতু পাকিস্তানের একটি অংশেই ঘটেছে, সেহেতু পাকিস্তান তার যে কোন যুদ্ধবন্দীর বিচার ঢাকায় অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে। কিন্তু পাকিস্তান নিজে “জুডিশিয়াল ট্রাইব্যুনাল” গঠন করে এসকল ব্যক্তির বিচারে আগ্রহী যা আর্ন্তজাতিক আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে। [৪৪]
কিন্তু টিক্কাখান পাকিস্তানের সামরিক প্রধান থাকা অবস্থায় পাকিস্তানে এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ভুট্টর প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত সে বিষয়ে বাংলাদেশ সন্দেহ প্রকাশ করে। [৪৫] ইতমধ্যে স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও, পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে করা সম্ভব না-ও হতে পারে, এটা অনুমিত হতে থাকে।
এমতাবস্থায়, যদি পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যাবাসন করতেই হয়, তবে কয়েকটি বিষয় যেন নিশ্চিত করা হয় তাই হয়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এজন্য বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিতে থাকে যেন ভারত হতে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের হস্তান্তরের আগে অন্তত তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা হয়-
১. বাংলাদেশের নিকট যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানের নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা (দু:খ প্রকাশ নয়);
২. ভবিষ্যতে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ খোলা রাখা; এবং
৩. চীনসহ অন্যান্য দেশে পাকিস্তান যে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারনা অব্যাহত রেখেছে, তার অবসান।
[আগামী সংখ্যায় সমাপ্য]
তথ্যসূত্র:
৩৪. “India acts to end p.o.w. deadlock”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ০৪/০৪/১৯৭৩, পৃ- ৭
৩৫. “India and Pakistan Still Differ, Will Resume Talks in New Delhi” , দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ০১/০৮/১৯৭৩, পৃ- ৪
৩৬. প্রাগুক্ত
৩৭. “India to keep PoWs”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৩/০৭/১৯৭২, পৃ- ৩
৩৮. দেখুন বেনজীর ভুট্ট (১৯৮৯) “Daughter of the East”, হ্যামিস-হ্যামিল্টন প্রকাশনি
৩৯. “Bengalis Held in Pakistan Long for Home” , দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ০৫/০৪/১৯৭৩, পৃ- ২
৪০. “Mujib Asks U.N.'s Help on Pakistan Ties” , দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ০৯/০৩/১৯৭৩, পৃ- ১০
৪১. “Bengalis and Pakistanis Begin Exchange Today”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৯/০৯/১৯৭৩, পৃ- ৬
৪২. “600 Bengalis, Pakistanis Freed and Flown Home”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৪/০৯/১৯৭৩, পৃ- ৯
৪৩. “India to release 90,000 Pakistanis in peace accord”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৯/০৮/১৯৭৩, পৃ- ১
৪৪. Pakistan Affairs, ১ মে ১৯৭৩, উদ্ধৃত Burke, S.M. (১৯৭৩). “The Postwar Diplomacy of the Indo-Pakistani War of 1971”, এশিয়ান সারভে, ভলিউম- ১৩, সংখ্যা ১১, (নভে ১৯৭৩)পৃ- ১০৪০
৪৫. “Light in South Asia”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, 27/04/১৯৭৩, পৃ- 36

সেই ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী [শেষ পর্ব]

সাঈদ আহমেদ এর ছবি
বাংলাদেশকে যে কোন দেশের স্বীকৃতিকেই যিনি ‘শত্রুভাবাপন্ন কাজ’ হিসেবে বিবেচনা করতেন, সেই ভুট্টকে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ানোর কাজটি অবশ্যই সহজ ছিল না। পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা, স্বীকৃতি-কূটনীতি আর সেই ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর শেষ পর্যন্ত কী হলো এবং এর সাথে কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়েই এই শেষ পর্ব।
স্বীকৃতি-নাটকের সমাপ্তি
পাকিস্তানের সম্পদ ও দেনার বন্টনসহ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের অমীমাংসীত বিষয়গুলি নিয়ে মুজিব-ভুট্ট বৈঠকে দুই দেশই আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু শেখ মুজিব শর্ত দেন যে, পাকিস্তানের স্বীকৃতি ব্যতীত কোন আলোচনা হবে না। অন্যদিকে ভুট্ট শর্তদেন যে, আলোচনার পর স্বীকৃতি দেয়া হবে। এবিষয়ে ভারত শেখ মুজিবকে রাজি করানোর জন্য উদ্যোগী হলে তিনি বলেন, ‘চীনের ভেটো ব্যবহার করে পাকিস্তান বাংলাদেশকে ব্ল্যাকমেইল করেছে। ফলে স্বীকৃতির বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আরো শক্ত হয়েছে। প্রথমে স্বীকৃতি, তারপর আলোচনা।[৪৬] এদিকে ১০ই জুলাই ১৯৭৩ সনে পাকিস্তানের সংসদ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য ভুট্টকে শর্তসাপেক্ষ ক্ষমতা প্রদান করে। তবে ভুট্ট বলেন, পাকিস্তানী সৈন্যদের বিচারের দাবী ত্যাগ না করা পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিবেন না।[৪৭]
এদিকে তেল ও মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নিয়ে ২২-২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ সনে লাহোরে ইসলামিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের ক্ষণ ধার্য হয়। মুসলিম জনগোষ্ঠীপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অংশগ্রহনে আরব দেশগুলির আগ্রহের প্রেক্ষিতে ভুট্ট শেখ মুজিবর রহমানকে আমন্ত্রণ জানাতে রাজী হন। কিন্তু স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান হিসেবে আমন্ত্রণ না করে, শেখ মুজিবকে পূর্বাঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠীর নেতা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর সীদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ শেখ মুজিবর রহমান এক দলীয় সভায় পাকিস্তানের উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাদের স্বীকৃতির পরোয়া করিনা। তবে সম্মেলনে আগত অধিকাংশ কূটনীতিকদের অভিমত উদ্ধৃতকরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়, সবকিছু বিবেচনা করে বাংলাদেশের পক্ষে এই বিচার করা আর সম্ভব হবে না। [৪৮]
এদিকে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদম মালিক, যিনি বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় ভুমিকা রাখছিলেন, এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন যে, বাংলাদেশ ১৯৫ পাকিস্তানীর একটি ‘সন্তোষজনক’ সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে যা পাকিস্তানের স্বীকৃতি প্রদানকে সহজ করবে। কিন্তু শেখ মুজিব স্বীকৃতির আগে এমন কোন আশ্বাস দেবার কথা প্রত্যাখ্যান করেন।[৪৯] ফলে ভুট্টও বাংলাদশকে আমন্ত্রন জানানো থেকে সরে আসেন।
অবশেষে সম্মেলনের একদিন আগে সম্মেলনের সাধারন সম্পাদক হাসান তোহামিসহ উচ্চপদস্থ একটি প্রতিনিধিদল ১৯৫ পাকিস্তানীর বিষয়ে শেখ মুজিবকে রাজী করানোর জন্য ঢাকায় আসার সীদ্ধান্ত নেয়।[৫০] ২১শে ফেব্রুয়ারী, সম্মেলনের আগের রাতে, প্রতিনিধিদলটি ঢাকার উদ্দেশ্য যাত্রা করেন যেখানে কুয়েত, লেবানন ও সোমালিয়ার তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আলজেরিয়া, সেনেগাল ও প্যালেস্টাইনের প্রতিনিধিবৃন্দ যোগদেন।[৫১] এদিকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রধান দাতা দেশ হিসেবে পরিচিত মিশর, সৌদি আরব এবং ইন্দোনেশিয়া অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় দেশের উপর চাপ প্রয়োগ শুরু করে। ২১শে ফেব্রুয়ারী রাতে ৩৭টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে উভয় দেশকে একটি সমাধানের আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।[৫২] অবশেষে ২২শে ফেব্রুয়ারী সম্মেলনের শুরুতে লাহোরে অবস্থিত টেলিভিশন স্টুডিওতে দেয়া বক্তৃতায় ভুট্ট বলেন-
“আল্লাহর নামে এবং এদেশের জনগনের পক্ষথেকে আমি ঘোষণা করছি যে, আমরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছি।… আমি বলছি না যে এটি আমি পছন্দ করছি, আমি বলছি না যে আমার হৃদয় আনন্দিত। এটি আমার জন্য একটি আনন্দের দিন নয়, কিন্তু বাস্তবতাকে আমরা বদলাতে পারিনা”। [৫৩]
তবে ১৯৫ পাকিস্তানীর বিচার ত্যাগ করার বিষয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত কোন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এমন কোন দাবী করা থেকে তিনি বিরত থাকেন। শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিশ্রুতি ছাড়াই পাকিস্তানের স্বীকৃতি আদায়ে সমর্থ হলেও, বাংলাদেশে ঐ সকল পাকিস্তানীর বিচার হবে না তা সম্মেলনের সকলেই নিশ্চিত হয়ে যান।
অবশেষে চুক্তি
অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপে, পাকিস্তানে জিম্মি অবশিষ্ট বাংলাদেশি নাগরিকদের উদ্ধার, জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ, এবং আর্ন্তজাতিক সাহায্য নিশ্চিতকরনসহ একাধিক কারনে পাকিস্তানীদের বিচারের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। এরই প্রেক্ষিতে ২৪শে মার্চ ১৯৭৪, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের দুই দিন আগে, পাকিস্তানে জিম্মি সর্বশেষ ২০৬ জন বাংলাদেশী নাগরিককে মুক্তি দেয়া হয়।[৫৪]
তবে, পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনাসহ একাধিক কারনে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১৯৫ পাকিস্তানীর প্রত্যাবাসন কিছুদিন আটকে রাখে। সমস্যা সমাধানের সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ১৯৭৪ সনের এপ্রিলে দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের ঘোষনা দেয়া হয়। দি গার্ডিয়ানের এক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ভুট্টকে যে ক্ষমতা দিয়েছিল, তা ছিল শর্তসাপেক্ষ- অর্থাৎ ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর মুক্তির পরই তা দেয়া যাবে। কিন্তু ইসলামী সম্মেলনে যোগদানের সময় পাকিস্তানীদের মুক্তি ছাড়াই বাংলাদেশ স্বীকৃতি আদায় করে নেয়ায় পাকিস্তান জানায় যে, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ১৯৫ পাকিস্তানীর বিচারের বিষয়টিই আগে নিষ্পত্তি করতে হবে। [৫৫]
৫ই এপ্রিল ১৯৭৪ সনে শুরু হওয়া বৈঠকে কামাল হোসেন, আজিজ আহমেদ ও সেরওয়ান সিং যথাক্রমে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ ঘোষনা করে যে, পাকিস্তান যদি তার একত্তরের কৃতকর্মের জন্য জনসম্মুখে ক্ষমাপ্রার্থনা করে’ এবং বিহারি প্রত্যাবাসনসহ পাকিস্তানের সম্পদ বন্টনে রাজি হয়, তাহলেই শুধু ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর উপর আনীত অভিযোগ তুলে নেয়া হবে। জবাবে, পাকিস্তান জানায় যে, ‘সম্পদ বন্টনহলে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আর্ন্তজাতিক দেনাও গ্রহন করতে হবে। ভুট্ট যেহেতু অনানুষ্ঠানিক ভাবে একাধিকবার দু:খ প্রকাশ করেছেন, সেহেতু ক্ষমা চাইবার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে সেজন্য বাংলাদেশকেও মার্চ-পূর্ব কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। তাছাড়া, ফেব্রুয়ারীতে মিশরের রাষ্টপ্রধানের মধ্যস্থতায় যে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল, সেখানে বাংলাদেশ পাকিস্তানী বন্দীদের প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল’।[৫৬]
অবশেষে ১০ই এপ্রিল ১৯৭৪ সনে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন হয় যার মাধ্যমে ১৯৫ পাকিস্তানী বন্দীর বিষয়টি মিমাংসা হয়।
পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা?
ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ১৩ ধারায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয় যে-
“পাকিস্তানের ঐসব বন্দী যে মাত্রাতিরিক্ত ও বহুধা অপরাধ করেছে, তা জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনা এবং আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গনহত্যা হিসেবে চিহ্নত; এবং এই ১৯৫ জন পাকিস্তানী বন্দী যে ধরনের অপরাধ করেছে, সেধরনের অপরাধের অপরাধীদের দায়ী করে আইনের মুখোমুখী করার বিষয়ে সার্বজনীন ঐকমত্য রয়েছে”।[৫৭]
পাকিস্তান তার পূর্বের কথা অনুযায়ী অভিযুক্ত আসামীদের নিজ দেশে বিচার করবে এই প্রত্যাশায় বাংলাদেশ ‘ক্ষমাসুলভ দৃষ্টকোন’ (clemency) থেকে ১৯৫ পাকিস্তানীর বিচার ঢাকাতেই করতে হবে, এমন দাবী থেকে সরে আসে। তবে বাংলাদেশ লিখিত ভাবে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনাও আদায় করে নেয়। ১১ই এপ্রিল দি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ সংক্রান্ত খবরের শিরনাম ছিল “বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমাপ্রার্থনা” (“Pakistan Offers Apology to Bangladesh”)। [৫৮]
ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ১৪ নং ধারায়ও মন্ত্রীদের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়-
“স্বীকৃতিদানের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং অতীতের ত্রুটি ভুলে যাবার জন্য আহ্বান করেছেন (appealed to the people of Bangladesh to forgive and forget)”।[৫৯]
বাংলাদেশ যখন একাত্তরের গনহত্যায় জড়িত স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছিল, এবং পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চেষ্টা করছিল, তখন এভাবেই নিরীহ বাঙালিদের জিম্মিকরে, জাতিসংঘের সদস্যপদ থেকে বঞ্চিত রাখাসহ বাংলাদেশকে বহুমুখী আর্ন্তজাতিক চাপের মধ্যে রেখে পাকিস্তান ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীকে ভারতীয় বন্দীদশা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
কিছু প্রশ্নের উত্তর
ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর পর্যালোচনায় এটি নিশ্চিত ভাবে প্রমাণিত যে, পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি খুব সহজে হয়নি এবং এবিষয়ে বাংলাদেশের সবোর্চ্চ প্রচেষ্টা ছিল। কিন্তু এই লেখাটি শুরু হয়েছিল আরো কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্য—
প্রশ্ন ১. ত্রিপক্ষীয় চুক্তি কি পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছে?
উত্তর:
 

অবশ্যই না। আর্ন্তজাতিক চুক্তির ধারা যা প্রকাশ করে, তাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, এখানে অন্যকিছুও বোঝানো হয়েছে কী-না তা নিয়ে অযথা সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ নেই। ত্রিপক্ষীয় চুক্তির যে ধারায় প্রত্যাবসন নিয়ে বলা হয়েছে, তা নিম্নরূপ—
১৫. আলোচ্য বিষয়ের আলোকে, বিশেষত:, বাংলাদেশের জনগনের কাছে অতীতের সব ত্রুটি ভুলে যাওয়া ও ক্ষমা করে দেবার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর আবেদন বিবেচনা করে, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ সরকার ক্ষমাশীলতার পরিচয় দিয়ে বিচার চালিয়ে না যাওয়ার সীদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্মত হয় যে, ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীকে দিল্লী চুক্তির অধীন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাথে প্রত্যাবাসন করা যেতে পারে। (15. In the light of the foregoing and, in particular, having regard to the appeal of the Prime Minister of Pakistan to the people of Bangladesh to forgive and forget the mistakes of the past, the Foreign Minister of Bangladesh stated that the Government of Bangladesh had decided not to proceed with the trials as an act of clemency. It was agreed that the 195 prisoners of war might be repatriated to Pakistan along with the other prisoners of war now in the process of repatriation under the Delhi Agreement.)[৬০]
এখানে ক্ষমাশীলতা শুধু বাংলাদেশ সরকারের চালুকরা তখনকার বিচার না চালিয়ে যাওয়ার জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু গনহত্যায় তাদের অপরাধের ক্ষমার কথা কোথাও বলা হয়নি, বরং ১৩ ধারায় বাংলাদেশের বক্তব্য উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয়েছে- “পাকিস্তানী বন্দীরা যে ধরনের অপরাধ করেছে, সেধরনের অপরাধের অপরাধীদের দায়ী করে আইনের মুখোমুখী করার বিষয়ে সার্বজনীন ঐকমত্য রয়েছে”।
পাকিস্তানের আদালতে বা আর্ন্তজাতিক আদালতে এদের বিচারকে এই চুক্তি কোন ভাবেই ব্যহত করে না।
তবে পাকিস্তান নিজেও যে এটি জানে, তার সাম্প্রতিক প্রমানও রয়েছে। বাংলাদেশে স্থানীয় যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়া মাত্রই পাকিস্তান তীব্রভাবে এর বিরোধীতা করে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ভুলকরে সিমলা চুক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়টি মিটে গিয়েছে, এমন মন্তব্যও করেন। কিন্তু বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানকে জানায় যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের জন্য পাকিস্তানেরও উচিত একই সাথে নিজেদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা, পাকিস্তান তখন ‘স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলে দ্রুত তার অবস্থান পরিবর্তন করে।[৬১, ৬২]
প্রশ্ন ২. বাংলাদেশ কি হস্তান্তর পরবর্তী বিচারের দাবী করেছিল?
উত্তর:
হ্যা, হস্তান্তরের পরও বাংলাদেশ সরকার ঐ ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবী অব্যাহত রাখে। ২৮শে জুন ১৯৭৪ ভুট্টর বাংলাদেশ সফরের সময় বঙ্গবন্ধু তার কাছে যুদ্ধাপরাধের বেশ কিছু প্রমাণ হাজির করেন। এর মধ্যে রাও ফরমান আলীর স্বহস্তে লিখিত একটি নোটও ছিল, যাতে লেখা ছিল-
“পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ রঙ বদলে লাল করে দিতে হবে” (The green of East Pakistan will have to be painted red) [৬৩]
যুদ্ধের পর পাকিস্তান যে হামুদুর রহমান কমিশন গঠন করে, সেখানেও বাংলাদেশ গনহত্যার প্রমাণাদি সরবরাহ করে। ১৯৭৪ সালের ২৩ অক্টোবর দাখিলকৃত কমিশনের সম্পূরক প্রতিবেদনে এর প্রাপ্তি-স্বীকার রয়েছে।[৬৪]
প্রশ্ন ৩. পাকিস্তান কি তাদের সৈন্যদের বিচারের কোন উদ্যোগ নিয়েছিল?
উত্তর:

হামুদুর রহমান কমিশন প্রতিবেদনের দ্বিতীয় ভাগে পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের এদেশীয় দোসরদের যুদ্ধাপরাধের বিস্তারিত উল্লেখপূর্বক সুপারিশমালায় কর্তব্য অবহেলার কারনে বেশ কিছু সামরিক কর্মকর্তার শাস্তির সুপারিশ করে। কমিশন, মার্চ থেকে ডিসেম্বর ১৯৭১ সময়কালীন পাকিস্তান আর্মির নৃশংসতা (atrocities), অবাধ নিষ্ঠুরতা (wanton cruelty) ও অনৈতিকতা (immorality) তদন্তে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন আদালত অথবা কমিশন গঠনের সুপারিশ করে। এ বিষয় তদন্তের জন্য পর্যাপ্ত প্রমান কমিশনের কাছে আছে বলে জানানো হয়। কমিশন এও সুপারিশ করে যে, যেহেতু বাংলাদেশ সরকারকে পাকিস্তান স্বীকৃতি দিয়েছে, সেহেতু প্রয়োজনীয় প্রমানাদির জন্য ঢাকার সহোযোগিতাও চাওয়া যেতে পারে।[৬৫] উল্লেখ্য, কমিশনের এই সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিল করা হয় ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর প্রত্যাবাসন পরবর্তী অতিরিক্ত তদন্তের পর, যেখানে ওই ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর অনেকের স্বাক্ষাৎকারও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তবে কেন প্রতিশ্রুতি দেবার পর এবং নিজস্ব কমিশনের সুপারিশের পরও পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করেনি, তার ব্যাখ্যা এবং বিচারের দাবী পুনর্ব্যক্ত করার নৈতিক ও আইনি সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের অপরাধ যে ক্ষমা প্রার্থনার ন্যায্যতা প্রতিপন্ন করে তা ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতেই উল্লেখ করা আছে। ফলে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টিও আবার তুলে ধরা যেতে পারে।
প্রশ্ন ৪. পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পযর্ন্ত স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা কি সঙ্গত?
উত্তর:
 ১৯৭২ সন থেকেই পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী আর স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইন, প্রক্রিয়া ও ধারা ভিন্ন রাখা হয়েছে। ভারত থেকে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যাবাসনের পরও স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যহত ছিল। ফলে, এখনও এই বিচার স্বাধীন ভাবে অগ্রসর হতে পারে।
গনহত্যায় পাকিস্তানী এবং স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের সম্মিলিত অংশগ্রহন ছিল। যে অন্যায়ে উভয় পক্ষের অংশগ্রহনই অত্যাবশ্যকীয়, সেসব ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই আলাদাভাবে দোষী স্বাব্যস্ত করা যায়। স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের সহায়তা ছাড়া যেমন পাকিস্তানীদের পক্ষে বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের খুজে বের করা সম্ভব হতো না, তেমনি পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের অবর্তমানে হয়তো স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীরা একাজে অংশ নিত না। কিন্তু এ ধরনের সংঘটনশীল ঘটনার (concurrent case) বিচারে এক অপরাধীর অনুপস্থিতি অন্য অপরাধীর বিচারকে বাধা দেয় না।
যেসকল ক্ষেত্রে উভয় যুদ্ধাপরাধী এক সাথে কোন অপরাধ করেছে, সেসব ক্ষেত্রেও যদি প্রমান করা যায় যে উক্ত অপরাধ এক অন্যের সাহায্য ছাড়াও করতে পারতো, সসব ক্ষেত্রেও (sufficient combined causes) তো অবশ্যই, এমনকি যেসব ক্ষেত্রে পাকিস্তানী অথবা স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীরা স্বাধীন ভাবে হত্যা, ধর্ষন বা অগ্নিসংযোগে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছে (direct causation), সেসব ক্ষেত্রেও যে কোন যুদ্ধাপরাধীর বিচার আলাদা ভাবে করা সম্ভব। ফলে, স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া বা না হওয়ার সাথে সর্ম্পকিত নয়।
ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ প্রমান করে যে, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ নাজুক ছিল এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার মতন অনুকূল পরিস্থিতি বাংলাদেশের ছিল না। নানামুখী বাধার কারনে বাংলাদেশকে তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মুলতবি রাখতে হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যাবসন চুক্তি, স্থানীয় সহোযোগিদের (যুদ্ধাপরাধীদের নয়) শর্তসাপেক্ষ সাধারন ক্ষমা অথবা তাদের বিচারের জন্য সংশোধিত আইন ও সংবিধানে কখোনই ভবিষ্যৎ বিচারের পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়নি। [সমাপ্ত]
ahamed ডট syeed এ্যাট gmail ডট com
তথ্যসূত্র:
[৪৬] “Sheikh Mujib holds out for recognition”, দি গার্ডিয়ান, ১৫/০৯/১৯৭২, পৃ- ৩
[৪৭] “Bhutto Given Authority to Recognize Bangladesh”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১০/০৭/১৯৭৩, পৃ- ৮
[৪৮] “Arabs Come Early to Islamic Parley”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৯/০২/১৯৭৪, পৃ- ৫
[৪৯] “Bhutto's bid to wield the oil”, দি গার্ডিয়ান, ২০/০২/১৯৭৪, পৃ- ১৯
[৫০] “Islamic Mission to Dacca Seeks Bengali-Pakistani Reconciliation”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২২/০২/১৯৭৪, পৃ- ২
[৫১] “Last attempt to coax Mujib”, দি গার্ডিয়ান, ২২/০২/১৯৭৪, পৃ- ৫
[৫২] "Pakistan admits that Bangladesh exists as nation”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৩/০২/১৯৭৪, পৃ- ৬৫
[৫৩] প্রাগুক্ত
[৫৪] “Repatriation Is Completed For Bangladesh Nationals”. দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৫/০৩/১৯৭৪, পৃ- ৮
[৫৫] “Trials of PoWs on agenda”, দি গার্ডিয়ান, ৮/০৩/১৯৭৪, পৃ- ২
[৫৬] “Bangla's had bargain”, দি অবজারভার, ৭/০৪/১৯৭৪, পৃ- ৮
[৫৭] Text of the tri-patriate agreement of Bangladesh-Pakistan-India, ধারা ১৩, দেখুনhttp://www.genocidebangladesh.org/?p=196
[৫৮] “Pakistan Offers Apology to Bangladesh”, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১১/০৪/১৯৭৪, পৃ- ৩
[৫৯] Text of the tri-patriate agreement of Bangladesh-Pakistan-India, ধারা ১৪, প্রাগুক্ত
[৬০] প্রাগুক্ত, ধারা ১৫
[৬১] “Pakistan will not interfere in Bangladesh's war crimes trial”, ৬/৪/২০১০,www.pakistannews.net/story/620495
[৬২] “Pakistan won't interfere in war crimes trial”, বিডিনিউজ, ৬/৪/২০১০
[৬৩] হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট, দ্বিতীয় ভাগ, অধ্যায় ২।
দেখুন http://www.bangla2000.com/bangladesh/independence-war/report-hamoodur-rahman/
[৬৪] প্রাগুক্ত।
[৬৫] প্রাগুক্ত।

পৃষ্ঠাসমূহ