সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১১

অলস ভাবনা

সে এক মহা সুখের দেশ, মধুদেশ, রাজা তার সুখ বিলাশ। মহারাজ সুখ বিলাশের একমাত্র সন্তান মৌ সুখ, যেমন তার রূপ তেমনই তার কোমলতা। হাজার সখি সবসময় তাকে ঘিরে রাখে, যাতে ফুলের টোকাটিও তার গায়ে না লাগে। খাবারের সময় কোন সখি তার গালে ১দানা মোলায়েম ভাত তুলে দেয়, আর কেউ বা ছিরে দেয় ১ কোষ গোশত, যাতে রাজকুমারীর খেতে কষ্ট না হয়। আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাজকুমারীকে বাতাস করা হয়। 
একদিন রাজকুমারীর সখ হল রাজকানন ভ্রমনের, হাজার সখি নিয়ে রাজকুমারী ফুল-পাতা দেখতে গেলো। পথে সখিদের ফাক গলে কিভাবে যেনো রাজকুমারীর চোখে বাতাসের ঝাপটা লাগলো আর তাতে রাজকুমারীর চোখের যন্ত্রনায় আরম্ভ হল। রাজ্যের বড় বড় সব নেত্রবিষারদ হাজীর হলেন কিন্তু কেউই সমাধান দিতে পারলেন না। সবই ছুটলো রাজ্য গুরুর মন্দিরে। রাজ্য গুরু বললেন সহস্রদলের প্রথন ফুলের প্রথম পাপড়ি রাজকুমারীর চোখে ছোয়ালেই এ রোগ সেরে যাবে, কিন্তু অন্য কোন পাপড়ি লাগলে মৌ সুখ হবে চির অন্ধ।
রাজা ঘোষনা করলেন যে সহস্রদলের প্রথন ফুলের প্রথম পাপড়ি এনে দেবে তাকে রাজবাহিনির মেজর করা হবে। রাজবাহিনির মেজর! রাজ্যের সকল তরুন ছুটলো সহস্রদলের প্রথন ফুলের প্রথম পাপড়ির খোজে। সবাই সহস্রদল খুজে পায় কিন্তু প্রথম ফুলের প্রথম পাপড়ি আর চিনতে পারে না। আর সবংশে গর্দান যাওয়ার ভয়ে কেউ ফুলও নিয়ে আসে না। রাজকুমারীর দুঃখে রাজ্যের পাখি কাদে, ফুল কাদে, চোখের জলে রাজ্য বন্যা দেখা দিলো। এই দেখে রাজা হুকুম করলো সবার সব কাজ বন্ধ, আগে ফুল। সবাই ছুটলো রাজার আদেশ পালন করতে।
সেই দেশের রাজবাহিনির প্রধান ছিলো কর্নেল বিজয় শ্রম, যেমন তার সাহস তেমনই তার কৌশল। রাজার আদেশ পেয়ে সেও ছুটলো সহস্রদলের প্রথন ফুলের প্রথম পাপড়ির খোজে। সে কিন্তু অন্যদের মত নয়। সে তার বাগানের সরোবর থেকে ফুল হয়েছে এমন সব সহস্রদল উপরে ফেললো। রাখলো কেবল ৩টা তরুন লতা, যাতে এখনও ফুল হয়নি। তারপর শুধু পাহারা ৩১ দিন পরে ২টি লতায় কলি আসলো, পরের দিন ভোর রাতে বাগানে গিয়ে দেখে একটা সহস্রদল ফুটে আছে, গাছের প্রথম ফুল, কিন্তু প্রথম পাপড়ি কোনটা? বিজয় শ্রমের মাথায় হাত। তার পরের রাতে সে আর ঘুমালোই না, সারা রাত জেগে রইলো। ভোরের আলোর সাদা রেখা পুব আকাশে জেগে উঠার সাথেসাথে সহস্রদলের কলির একটা খোলস খুলে গেলো, আর তার ভেতর থেকে লাফিয়ে বের হল সহস্রদলের প্রথম পাপড়ির। সেই পাপড়ি নিয়ে বিজয় শ্রম ছুটলো রাজ বাড়িতে। রাত পোহানোর আগেই ঘুমন্ত রাজকুমারী মৌ সুখের চোখে সহস্রদলের প্রথন ফুলের প্রথম পাপড়ির ছোয়ানো হল। রাজকুমারীর ঘুম ভেংগে গেলো, আনন্দ ঝলমল চোখে বলে উঠলো “আমার চোখের বেদনা ভাল হয়ে গেছে”। 
পরের দিন সকালে বিজয় শ্রমকে রাজ দরবারে ডেকে আনা হল, তাকে দেয়া হল সবচেয়ে বড় সম্মান। রাজকুমারী মৌ সুখও উতলা হয়ে উঠলো, এতদিনে সে তার স্বপ্নের পুরূষের দেখা পেয়েছে। রাজা নিজে জানতে চাইলেন বিজয় শ্রম কি পেলে খুশি হবে, বিজয় শ্রম বললো আপনি আমাকে সবই দিয়েছেন, আমার আছে ২ মেয়ে ১ ছেলে। আমাদের রাজকুমারী সুস্থ হয়েছে এটাই বড় পুরোষ্কার। এদিকে রাজকুমারীর ভাবসাব দেখে রাজরানী মনেমনে প্রমাদ গুনলেন। তিনি বললেন, রাজা আগেই পুরোষ্কার ঘোষনা করে রেখেছেন। তা বিজয় শ্রমকে নিতেই হবে।
তারপর আর কি? বিজয় শ্রমকে রাজবাহিনির প্রধান কর্নেল থেকে মেজর করে সিমান্তে পাঠিয়ে দেয়া হল, আর রাজকুমারী মৌ সুখকে জোড় করে পাশের রাজ্যের রাজা ভোগানন্দের সাথে বিয়ে দেয়া হল। 
বছর না ঘুরতেই সবাই বিজয় শ্রমকে ভুলে গেলো। কেউ আর জানতেও চাইলোনা তার ছেলেটা কিভাবে মারা গেলো, তার মেয়ে ২টি কোথায়, অথবা বিজয় শ্রমেরই বা কি হয়েছে? যে প্রশ্ন করতে পারতো সে তো অনেক আগেই চলে গেছে না ফেরার দেশে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ