সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১১

পেশাজীবী কনভেনশনে প্রধানমন্ত্রী : বঙ্গবন্ধু আমলে কোনো রিজার্ভ ছিল না, তখন কি দেশ চলেনি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বলা হচ্ছে দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। টাকা নেই, টাকা নেই বলে হাহাকার করা হচ্ছে। কিন্তু কিসের টাকা নেই? চালাতে পারলে ঠিকই চালানো যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় দেশে কোনো রিজার্ভ মানি ছিল না। তখন কি দেশ চলেনি? দেশের অর্থনীতি এবং সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ নিয়ে কিছু ব্যক্তি টকশোসহ বিভিন্ন স্থানে দেশবাসীর মনে হতাশা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে এ নিয়ে হতাশার কিছু নেই। আর সরকারও বসে নেই। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক কনভেনশনে তিনি এসব কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পেশাজীবীদের অধিকার ও রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ এ মহাসমাবেশ ও কনভেনশনের আয়োজন করে। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পেশাজীবী মহাসমাবেশ ও কনভেনশন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক বিচারপতি এএফএম মেসবাহউদ্দিন। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক, কৃষিবিদ ড. এম কামরুজ্জামান, সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত, কৃষিবিদ আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম ও শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ ‘টাকা নেই, টাকা নেই’ বলে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। খাদ্য কেনা, বিদ্যুত্ উত্পাদন, গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজসহ দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করতে গেলে সরকারকে তো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতেই হবে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঘি খাচ্ছে না। ধার করে জনগণের জন্য কাজ করছে। জনগণ যার সুফল পাচ্ছে। 
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, রিজার্ভ মানি রাখা হয় যাতে প্রয়োজন হলে খাদ্য আমদানি করা যায়। যেহেতু প্রচুর খাদ্য রিজার্ভ আছে, সেহেতু দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই। বিশ্বমন্দা মোকাবিলা করেও প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ ভাগে উন্নীত করেছি। মাথাপিছু গড় আয় ৮২৮ ডলারে উন্নীত হয়েছে। মহামন্দার কারণে উন্নত দেশগুলো সামনের দিকে এগোতে না পারলেও আমরা হাঁটি হাঁটি পা পা করে সামনের দিকেই চলেছি। দেশের মানুষের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। পরনির্ভরশীল নয়, আমরা বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলবই।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছেন অভিযোগ তুলে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার রাখঢাক করে নয়, বিরোধীদলীয় নেতা একেবারে খোলামেলাভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চান। এখন প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য পেশাজীবীদের জনমত সৃষ্টি করার কাজে নামার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিথ্যাচার আর বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অগ্রযাত্রার পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে জনগণ শুধু অভিশাপমুক্তই হবে না, শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকেও মুক্তি পাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অচিরেই সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
বেসরকারি খাতে বিদ্যুত্ উত্পাদনে ‘কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ প্লান্ট’ স্থাপনে কিছু মানুষের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের হাহাকার নিয়ে আমরা ক্ষমতা গ্রহণ করেছি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারসহ গত সাত বছরে এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ও উত্পাদন করা হয়নি, বিপরীতে চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। তিনি বলেন, বড় বড় বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনে অনেক সময় ও অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিদ্যুত্ সমস্যা দ্রুত সমাধানে আমরা সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেই। 
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদের মাত্র ৩৪ মাসে ৩৪টি নতুন বিদ্যুত্ প্লান্ট স্থাপন করে নতুন আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এসব উদ্যোগের ফলে বর্তমান সরকারের সময় যখন বিদ্যুতের হাহাকার কমেছে, লোডশেডিং কমেছে—তখন কেউ কেউ বলেন এসবের কী প্রয়োজন ছিল! টাকার জন্য তাদের এখন মায়াকান্না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ