বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১১

টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ না হলে মহাদুর্যোগ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী মেঘনাকে বাঁচাতে সরকারকে অবিলম্বে উদ্যোগ নেবার আহ্বান জানিয়েছেন, পরিবেশবিদ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন মহল। তারা বলছেন, ভারতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করা হলে মেঘনা নদী নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পড়বে। মেঘনার সাথে সরাসরি জড়িত সুরমা-কুশিয়ারার পানিও শুষ্ক মৌসুমে শতকরা ৬০ ভাগ ও ভরা মৌসুমে ১২ ভাগ হ্রাস পাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মেঘনার মুখে বাঁধ নির্মিত হলে ভারত জলবিদ্যুৎ পাবে, অন্যদিকে এদেশের কোটি কোটি মানুষ, পরিবেশ, জলবায়ু এবং জীব বৈচিত্র্যে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে। তারা বলছেন, ভারত ধীরে ধীরে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের কাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে শক্ত প্রতিবাদ করা না হলে পরবর্তীতে আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না। এ বিষয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান প্রতিবেদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক নাজমুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী বলেছেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ নিয়ে ভারতকে ক্ষ্যাপানো ঠিক হবে না। তিনি বলেন, বাঁধ নির্মিত হলে আমাদের দেশের যে ক্ষতি হবে সেটি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনুধাবন করতে পারছেন না। তিনি আরো বলেন, আমরা সব সময়ই আমাদের নদীর উৎস স্থলে ভারতের বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু ভারত আমাদের সে সব প্রতিবাদ উপেক্ষা করেই বাঁধ নির্মাণ করেছে। তারপরও আমরা মনে করি, সরকারের উচিত টিপাইমুখে যাতে ভারত বাঁধ নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য প্রতিবাদ জানানো। বিশ্লেষকরা বলছেন, টিপাইমুখে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হলে নিয়ন্ত্রিত পানি প্রবাহের ফলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পানি ছাড়া হবে। এতে করে শুষ্ক মৌসুমে কিছু পানির সরবরাহ থাকবে। এছাড়াও ধীরে ধীরে পানি ছাড়ার ফলে মাটির ভেতর দিয়ে পানির প্রবাহ প্রক্রিয়া একইভাবে পরিবর্তিত হবে। তারা বলছেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ফলে যদি শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, তবে এসময় নিচু ভূমিতে জলাবদ্ধতা তৈরী হতে পারে। সেই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলের পানি সহজে নামতে না পারার কারণে নিচু বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ বোরো ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিবে এটাই জনগণ আশা করে। অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, আমাদের নদীর উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ অব্যাহত রাখলে সরকার আন্তর্জাতিক মহলে তা উত্থাপন করতে পারে। সেই সাথে ভারতের উপর চাপ প্রয়োগের কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ আমাদের জন্য কতো বড় ক্ষতির তা তুলে ধরতে সরকার প্রয়োজনে নদী, পরিবেশ ও পানি বিশ্লেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে পারে। তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা ব্যারেজ ও তিস্তা নদীতে গজলডোবা ব্যারেজ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে জীব বৈচিত্র্যের অপরিসীম ক্ষতি সাধন করে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ, আর্থ-সামাজিক এবং জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে পিছিয়ে দিয়েছে । টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষতির বিষয়ে সরকার সচেতনভাবে পদক্ষেপ নিবেন এটাই সবার প্রত্যাশা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ