বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১১

ডিসিসি দু’ভাগ: সংসদে বিল উত্থাপিত; আজিমের আপত্তি



সংসদ ভবন থেকে: সিটি কর্পোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগের বিধান ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দু’ভাগ করার বহুল আলোচিত বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।

তবে বিলটি উত্থাপনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য মো. ফজলুল আজিম।

বুধবার স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন)  (সংশোধন) বিল ২০১১ নামের ওই বিলটি উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক।

তিনি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পক্ষে বিলটি উত্থাপন করেন।

প্রতিমন্ত্রী বিলটি উত্থাপনের অনুমতি চাওয়ার পর ফজলুল আজিম বিলটি উত্থাপনের ব্যাপারে আপত্তি জানান।

ফজলুল আজিম বলেন, ‘ঢাকা একটি ঐতিহাসিক নগরী। রাজনৈতিক কারণে এর বিভক্তি করা ঠিক হবে না। সমস্যা অনেক। তবে দ্বি-খণ্ডিত করা কোনও সমাধান নয়। ঢাকাবাসীও এ বিষয়ে বিরোধিতা করছে। আমি এই বিলটি উত্থাপনের উপর আপত্তি জানাচ্ছি।’

এ সময় তিনি মেট্রো সরকার প্রতিষ্ঠা করার দাবি করেন।

জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেবা উন্নত করার জন্যেই এ বিলটি আনা হয়েছে। জনগণের কাছে সিটি কর্পোরেশনের সেবা পৌঁছানোই এ বিলের লক্ষ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘উনি (আজিম) কতজনের সঙ্গে কথা বলেছেন, আমি জানি না। তবে আমি ঢাকার বাসিন্দা, আমার মতামত নিলে উনি বুঝতেন।’

নানক বলেন, ‘বিলটি সংসদীয় কমিটিতে যাওয়ার পর আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ত্রুটি থাকলে সেখানে আলোচনা হবে।’

এরপর স্পিকার আব্দুল হামিদ বিলটি উত্থাপনের বিষয়টি কণ্ঠভোটে দেন। কণ্ঠভোটে বিলটি উত্থাপনের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হওয়ায় বিলটি উত্থাপন করা হয়।

পরে বিলটি আরও যাচাই করে সাত দিনের মধ্যে সংসদে রিপোর্ট দিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলটি পাস হলে বর্তমান ডিসিসি ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন’ এবং ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’ নামে দু’ভাগে বিভক্ত হবে।

একই সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলররাও আর নিজ পদে বহাল থাকতে পারবেন না।

এর ফলে নতুন সিটি করপোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত যে কোনও উপযুক্ত ব্যক্তি কিংবা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাকে নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।

এর আগে ১৭ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় বিলটি নীতিগত অনুমোদন পায়। ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়।

এ অবস্থায় ২২ দিন পর সংসদে বিলটি উত্থাপন করা হলো।

বিলে বলা হয়েছে- ডিসিসির ১ থেকে ২৩, ৩৭ থেকে ৪৭ এবং ৫৪ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন’।

আর ২৪ থেকে ৩৬, ৪৮ থেকে ৫৩ এবং ৫৬ থেকে ৯২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’।

ফলে উত্তরে ৩৬টি এবং দক্ষিণে ৫৬টি ওয়ার্ড থাকছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণে বলা হয়েছে- বর্তমানে ডিসিসির জনসংখ্যা এক কোটিরও বেশি। এর আয়তন প্রায় ১৫০ বর্গকিলোমিটার।এ বৃহৎ মহানগরীর বিপুল জনসংখ্যার কাছে একটি কেন্দ্র থেকে সেবা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। ফলে জনসাধারণ কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সেবা পাচ্ছেন না।

এছাড়া ডিসিসি এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত, সংরক্ষণ, ভৌত অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষনের ক্ষেত্রে বহু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ, জলাবদ্ধতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান কার্যক্রম আশানুরূপ নয়।

আরও বলা হয়েছে, ডিসিসির মোট ওয়ার্ড ৯২টি। মহিলাদের জন্য ৩১টি সংরক্ষিত আসন নিয়ে মোট কাউন্সিলর সংখ্যা ১২৩। নাগরিক সেবা কার্যক্রম আরও সুদৃঢ় ও যথাযথ পর্যায়ে উন্নীত করতে ডিসিসিকে দুটি সিটি করপোরেশনের বিভক্ত করা আবশ্যক।

তাই ডিসিসিকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করে পৃথক দুটি সিটি করপোরেশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ উদ্দেশ্য পূরণে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ (২০০৯ সালের ৬০ নম্বর আইন) এর সংশোধন দরকার।

বিবৃতিতে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন’ এবং ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’ গঠিত হলে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের কাছে দ্রুত সেবা পৌঁছানো, পরিকল্পনা গ্রহণ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজতর হবে।

উত্থাপিত বিলটিতে বলা হয়েছে, ডিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী, সম্পদ, অধিকার, ঋণ, দায়-দায়িত্ব, সুবিধা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংক স্থিতি, সংরক্ষিত সঞ্চিত তহবিল, বিনিয়োগ ও অন্য সকল অধিকার এবং এরূপ সম্পত্তিতে কিংবা এ থেকে উদ্ভূত বা অর্জিত অন্য সকল স্বার্থ ও অধিকার, সকল বই, রেজিস্ট্রার, রেকর্ডপত্র এবং অন্য সকল দলিল-দস্তাবেজ সরকার বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে (বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি আদেশ দ্বারা) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি  করপোরেশনে ক্ষেত্রমতো, হস্তান্তর, ন্যস্ত, স্থানান্তর বা বদলির ব্যবস্থা করবে।

বিলে বলা হয়েছে, ডিসিসি কর্তৃক বা এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা বা কার্যধারা ক্ষেত্রমতো, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক বা এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা বা কার্যধারা বলে গণ্য হবে।

বিলটিতে আরও বলা হয়েছে, ডিসিসি কর্তৃক ইতোপূর্বে জারিকৃত সকল প্রবিধান, উপ-বিধান, আদেশ, প্রজ্ঞাপন, নোটিশ বা আইনের ক্ষমতা সম্পন্ন অন্যান্য দলিল এবং প্রযোজ্য সকল বিধি, ক্ষেত্রমত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি  করপোরেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া ডিসিসি কর্তৃক প্রদত্ত সকল লাইসেন্স, অনুমতি, আরোপিত কর, ইত্যাদি ক্ষেত্রমত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি  করপোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত, মঞ্জুরীকৃত বা আরোপিত বলে গণ্য হবে।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ (২০০৯ সালের ৬০ নম্বর আইন)- এর ধারা ২ এর দফা (১) এর ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’র সংজ্ঞায় সংশোধনী এনে বিলটিতে প্রস্তাব করা হয়, ‘বাংলাদেশ রাইফেলস, কোস্টগার্ড বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহ’ এর পরিবর্তে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং কোস্টগার্ড বাহিনী’ শব্দ প্রতিস্থাপিত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ