সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১১

যন্ত্রমানবের মত পাঁচ বেলা জায়নামাজে মাথা ঠেকানোয় প্রকৃত পুণ্য বা শান্তি অর্জন সম্ভব নয়-

 কোন মহৎ কাজের জন্য আহ্বান জানিয়ে তাতে সাড়া না পেলে মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। একটা সময় ছিল যখন আমারও এমনটি হতো। কিন্তু যখন ধীরে ধীরে জানলাম ইসলামে আর্ত-পীড়িত, দুস্থ ও গরীবেরও হক নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে এবং ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নয় বরং যে যার অবস্থানে থেকে সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, তখন থেকে ইসলামের প্রতি আমার আকর্ষণ ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকল। নিজের নাম কামানো নয়, বরং যে যত চুপিসারে মানবতার কর্মটি যত বেশি বেশি করবে আল্লাহতায়ালার কাছে তা ততটাই গ্রহণযোগ্য এবং প্রিয় বলে বিবেচিত হবে। তাই অনেক মুসলমান ভাই আছেন যারা প্রতিবছর দুস্থদের সেবায় সম্পদের একটা বড় অংশ বরাদ্দ রাখেন এবং সাধ্যমত তাদের পাশে দাঁড়ান। প্রচার বিমুখতার কারনেই হয়ত তাদের সৎকর্মগুলো, যারা প্রচার করেন তাদের তুলনায় কমই চোখে পড়ে।

এদেশের সরকার এসব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না আর ঘামালেও সরকারী সাহায্যের কতটুকু অংশ থেকে প্রকৃত ভুক্তভোগীরা উপকৃত হন তা সবারই জানা। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণ যদি না এগিয়ে আসত তবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের কোটি কোটি শীতার্ত মানুষের কি দশা হতো তা ভেবে দেখুন তো। যেহেতু আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই সাধ্যমত এ সেবায় অংশ নিচ্ছি তাই হয়ত অনেক সময় সবার আহ্বানে সাড়া দেবার প্রয়োজন বোধ করিনা। তবে আমাদের হাতকে আরো প্রসারিত করা প্রয়োজন। আপনিও আপনার আশেপাশে যারা আছেন তাদের সাথে নিয়ে সাধ্যমত শীতার্ত ও দুস্থদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। যদি কাউকে সাথে না পান তবে নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করে যান। মহান আল্লাহতায়ালা এমনটিই চান। কেননা এটা ইবাদতেরই একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধুমাত্র যন্ত্র-মানবের মত পাঁচ বেলা জায়নামাজে মাথা ঠেকানোয় প্রকৃত পূণ্য বা শান্তি অর্জন সম্ভব নয়।

আসুন প্রতিবারের মত এই শীত মৌসুমেও যে যেভাবে পারি সাধ্যমত শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন-
সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)-
(০২:১৭৭) সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রাসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতিম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেজগার।

হাদিছ গ্রন্থ থেকে-
'Good Manners and Form (Al-Adab)' of Sahih Bukhari. 
35: Narrated Safwan bin Salim: The Prophet said "The one who looks after and works for a widow and for a poor person, is like a warrior fighting for Allah's Cause or like a person who fasts during the day and prays all the night." Narrated Abu Huraira that the Prophet said as above. 
41: Narrated Anas bin Malik: The Prophet said, "If any Muslim plants any plant and a human being or an animal eats of it, he will be rewarded as if he had given that much in charity." 

বান্দার হক ঠিকমত আদায় না করে পরম দয়ালু মহান আল্লাহতায়ালাকে পাওয়ার কথা চিন্তা করা আর মরীচিকার পেছনে ছুটে চলা একই কথা। আল্লাহতায়ালার হক আদায় এবং বান্দার হক আদায়- এই দুটি কর্ম পরিচ্ছন্নভাবে পালনের মধ্য দিয়েই প্রকৃত শান্তি মেলে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ