মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১১

বি এন পি কে সত্যিকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

১৯৭২ সালে দালাল আইনে যে বিচার হয়, সেই বিচারের যিনি চিপ পসিকিউটর তিনি বলছেন বর্তমানে যাদের কে অভিযুক্ত করে আটক রাখা হয়েছে তারা কেউ ঐ বিচারে অভিযুক্ত ছিলেন না।

তাহলে কি বুঝা যাচ্ছে না, বর্তমানে যে বিচার হচ্ছে তাকে কতটুকু রাজনৈতিক করণ করা হয়েছে?

আমরা সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, তবে তা বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণ যোগ্য বিচার হতে হবে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্যে সর্ব প্রথম একটা সর্বদলিয় কমিটি চাই। 
যে কমিটি প্রথম সকল ইউনিয়ন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা করবে। এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত এবং নিহিতদের তালিকা তৈরি করবে। সাথে সাথে সঠিক মুক্তিযুদ্ধাদের ও তালিকা করবে।

আমরা চাইনা যারাই নতুন করে সরকার গঠন করে তারাই নতুন তালিকা তৈরি করুক।
আমরা চাইনা আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত একটা বিষয়কে বিতর্কিত করতে।
আমরা চাইনা যুদ্ধাপরাধের বিচার হাস্যকর ভাবে উপস্থাপন করে কেউ রাজনৈতিক পায়দা লুটুক।

বর্তমানে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার হচ্ছে, তা দেখে মনেহয় যুদ্ধাপরাধের মত একটা গুরুত্বপুর্ণ বিষয় কে মিথ্যা এবং হাস্যকর ভাবে, ইচ্ছাকিত বিতর্কিত করা হচ্ছে।
আমাদের বর্তমান মন্ত্রিরা বলেন এটি যুদ্ধাপরাধের বিচার নয় এটি মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার।
আবার যারা বিচারের পক্ষের আইনজিবিরা বলেন, এই বিচার আমাদের দেশিয় আইনে হচ্ছে এটি কোন মতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যেই খানে বিচার হচ্ছে তার নামআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ।

সর্বপ্রথম এই ট্রাইবুনাল যার বিচার শুরু করেছে, আমরা যদি খেয়াল করি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদি জামায়াত ইসলামের বর্তমান বড় নেতা হলেও যুদ্ধকালিন সময়ে তেমন গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তি ছিলেন না। এক জন সাধারণ মুদি দোকানের কর্মচারি ছিলেন মাত্র। তাহলে সহজেই বুঝা যায় যুদ্ধাপরাধের বিচার কোথায় থেকে শুরু করা হলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পরিচিত যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের কে দিয়েও এই বিচার শুরু হতে পারত।

মিথ্যার মাধ্যমে কেন যুদ্ধাপরাধের মত একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়কে হাস্যকর করা হচ্ছে.........
স্বাধীনতার পর সাঈদী নিজের অপরাধ আড়াল করতে অস্ত্রসহ যশোরের মোঃ রওশন আলীর বাড়িতে আত্মগোপন করেন। অনেকদিন পর মুক্তিযুদ্ধে তার কর্মকাণ্ড জানাজানি হলে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যান সাঈদী। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তিনি প্রকাশ্যে আসেন এবং ভুয়া মাওলানা পরিচয়ে ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরে ওয়াজ মাহফিল শুরু করেন।" 

বিষয়টি আসলে কতটুকু সত্য? 
মাওলানা সাঈদীকে ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর নির্দেশে খুলনার এক মাহফিলে করা মুনাজাতকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। কয়েকমাস কারাগারে থাকার পর আদালতের নির্দেশে তিনি মুক্তি পান। যতটুকু জানা যায় মাওলানা সাঈদী ১৯৭২ সাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাহফিল করে আসছেন। ইউটিউবে ১৯৮০ সালের দিকে করা অনেক মাহফিলের ভিডিও পাওয়া যায়। 

যাদেরকে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের পক্ষের উকিলরাই সত্য মিথ্যা প্রমান করবেন। কিন্তু কথা হচ্ছে যে বিষয় গুলো সাধারণ মানুষ জানে এবং দেখেই বুঝতে পারে কথাটি মিথ্যা এবং হাস্যকর সে বিষয় গুলো দেখে শুনে উপস্থাপন করলে ভাল হতো না।

সূচনা বক্তব্যে প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদী বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহম্মেদ ও ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের পিতা এসডিপিও ফয়জুর রহমানকে চিঠি দিয়ে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এর পাশাপাশি সাঈদী ও তার রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা শেফালী ঘরামী, ভানু সাহা, কমলা রানী, মহামায়াসহ অসংখ্য যুবতী নারীকে অপহরণ করে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের ধর্ষণ করা হয়। সাঈদী মুক্তিযুদ্ধকালে পাড়েরহাট বন্দরের বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে নিয়মিত যৌন নিযর্াতন করতেন। বিপদ সাহার বাড়িতেই আটকে রেখে অন্যান্য রাজাকারসহ ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। একসময় ভানু সাহা দেশত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। 

হুমায়ুন আহম্মেদের মা তার আত্মজীবনি লিখেছেন, সে খানে সাঈদির নাম আসেনি এবং যুদ্ধের পরে হুমায়ুন আহম্মেদের মা তার স্বামীর খুনের বিচারের জন্যে মামলা করেছেন সে খানেও সাঈদির নাম না থাকায় বিষয়টিও বিতর্কিত বলে মনেহচ্ছে, তবে তা সাঈদির আইন জিবিরা আদালতে প্রমান করবেন আশা করি।
ভানু সাহা যেহেতু জীবিত তাকে দেশে এনে বিকটিম হিসেবে তার জবান বন্ধি নেয়া বর্তমান সরকারের জন্যে কঠিন কাজ নয়। এবং সাথে সাথে ভানু সাহার মেয়েকে ও আনতে হবে এবং মেয়ের ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমে যদি সাঈদির বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে সাঈদির বিচার করা আরো সহজ হবে। 


সোজা কথা ... দল মত নির্বিশেষে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের সত্যিকার বিচার চাই। এবং আগামীতে যেহেতু বিএনপি সরকারে আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে সুতারং তাদের কে ও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে তারা সর্ব দলীয় কমিটি করে।
১। মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা করবে। ২। মুক্তিযুদ্ধে নিহত এবং আহতদের তালিকা করবে। ৩। মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিতদের তালিকা করবে। ৪। মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা তৈরি করবে। ৫। জীবিত যুদ্ধাপরাধীদের আন্তর্জাতিক মানের বিচার করবেন। এই সবের মাধ্যমে আমরা সকলের কাছে গ্রহন যোগ্য আমাদের গৌরব গাথা মুক্তিযুদ্ধের একটি ইতিহাস সংরক্ষন করে রাখতে পারবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ