বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১১

ছাত্রলীগের ২১৯ সদস্যের কমিটিতে ১১৯ জনই অবৈধ

ছাত্রলীগের সদ্যঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির ২১৯ জনের মধ্যে ১১৯ জনের নিয়োগ দেয়া হয়েছে গঠনতন্ত্র অমান্য করে। 


সর্বশেষ মুদ্রিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ হবে ২০১ সদস্যের। ২০১ জনের মধ্যে ১১১ জন হবেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তবে এবারের কমিটি মোট ২১৯ জনের হলেও একজনকেও সদস্যপদ দেয়া হয়নি। ১৯ এর সঙ্গে ১১টি যোগ করে মোট সম্পাদকীয় পদ করা হয়েছে ৩০টি। প্রতি সম্পাদকীয় পদে একজন করে উপসম্পাদক করার নিয়মটিও মানেনি সোহাগ-নাজমুল কমিটি। গঠনতন্ত্রকে লংঘন করে গঠিত এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।



ছাত্রলীগের ২৭তম কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় চারমাস পর গত সোমবার রাতে ছাত্রলীগের ২১৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন সংগঠনের বর্তমান ও সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক । তাদের এই কমিটিতে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের বাইরেও অনেকে পদ পেয়েছেন।



সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন এবং সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার রোটন স্বাক্ষরিত সর্বশেষ মুদ্রিত গঠনতন্ত্রের ১১ (ক) ধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ২০১ সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হবে। কমিটিতে একজন করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকবেন। সহ-সভাপতি থাকবেন ২১ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থাকবেন ৭ জন। সাংগঠনিক সম্পাদক থাকবেন ৭ জন। এছাড়া মোট ১৯টি সম্পাদকীয় পদে একজন করে সম্পাদক এবং উপসম্পাদক থাকবেন । এদের সঙ্গে যোগ হবেন ১৫ জন সহ-সম্পাদক এবং ১১১ জন সদস্য।



ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রকে লঙ্ঘন করে এবারের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ দেয়া হয়েছে ৪১ জনকে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ১০ জন করে নিয়োগ পেয়েছেন। ৩০টি বিভাগে ৩০ জন সম্পাদক এবং ১০৯ জনকে উপসম্পাদক করা হয়েছে। সহ-সম্পাদক করা হয়েছে ১৭ জনকে। ১১১ জন কেন্দ্রীয় সদস্য করার কথা থাকলেও একজনকেও একজনকেও তা করা হয়নি।



সংবিধান লঙ্ঘন করে ছাত্রলীগের এই কমিটিতে ১১৯ জনকে অতিরিক্ত নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিভাবে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন বলেন, “ছাত্রলীগ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ইচ্ছা করলেই এটা করতে পারেন।”



এ বছরের ১০ জুলাই সর্বশেষ মুদ্রিত গঠনতন্ত্রের পর এখনো পর্যন্ত কোনো সংশোধনী আনা হয়নি বলেও নিশ্চিত করেন রোটন।



এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, “ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সকল জেলা ইউনিটকে ডেকে একটি বর্ধিত সভার মাধ্যমে ঘোষিত কমিটি অনুমোদন করিয়ে নেয়া হবে। একই সময় গঠনতন্ত্রের সংশোধনীও আনা হবে।”



ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এখনো অসমাপ্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখনো ৩০ জনকে বিভিন্ন পদে এবং ১১১ জনকে সদস্যপদে নেয়া হবে।”



এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা যা করছি সবকিছুই প্রকাশ্যে করছি। কোনো লুকোচুরি নেই আমাদের কমিটিতে। আমাদের আগে সাবেকরা যে ভুলগুলো করে গিয়েছেন আমরা সেই ভুলগুলো করতে চাচ্ছি না।”



বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার গঠনতন্ত্র বহির্ভূত ছাত্রলীগের কমিটি সর্ম্পকে বলেন, “আমার জানামতে রিপন-রোটন কমিটির সময়ই সম্পাদকীয় পদ ছিল ২৯টি। নতুন কমিটিতে কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক পদ তৈরি করা হয়েছে। আমার মনে হয় এটা সময়ের দাবি।”



কিন্তু রিপন-রোটনের স্বাক্ষরিত সর্বশেষ গঠনতন্ত্রে ২৯টি নয় ১৯টি সম্পাদকীয় পদ উল্লেখ রয়েছে জানালে লিয়াকত শিকদার বলেন, “আমি এ বিষয়ে সঠিক কিছু বলতে পারছি না। ব্যাপারটি আমার জানা নেই।”



ছাত্রলীগের এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন লিয়াকত শিকদারের কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু। ছাত্রলীগ এখন ‘একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি’তে পরিণত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের এই কমিটি যারা দিয়েছে তারা অসভ্যদের মতো আচরণ করেছে। আমি এই কমিটিকে লজ্জাকর, হাস্যকর এবং ঘৃণিত কমিটি হিসেবে চিহ্নিত করছি।”



ছাত্রলীগ তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে গঠনতন্ত্রকে লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনার সন্মান ভুলুণ্ঠিত করছে বলেও অভিযোগ করেন আড়াইহাজারের এই সংসদ সদস্য।



গঠনতন্ত্রের কারণে বেড়াজালে আটকে গেছেন যেসব নেতা

সহ-সভাপতি: নাজমুল হুদা চঞ্চল, সাজ্জাদ রায়হান, মাহফুজল আলম রিজভী, মাহমুদুল হাসান মারুফ, ইমরান সিরাজ সম্রাট, জিয়াউল হক জিয়া, মহসীন কবির রিয়েল, মিজানুর রহমান ‍মিজান, মোখলেছুর রহমান সুমন, মেহেদি হাসান মিজান, রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ, সাইফুদ্দিন, জাহাঙ্গীর হোসেন, নাইম হাসান, রেজওয়ানুল হক শুভ্র, মোর্শেদুল আলম চৌধুরী, রকিবুল ইসলাম শাওন, শাহ এমরান সোহাগ, মাসুদ হাসান তূর্ণ ও রেজাউল করিম রাসেল।



যুগ্ম সম্পাদক: আব্দুর রহমান জীবন, নবিরুজ্জামান বাবু ও শারমিন সুলতানা লিলি। সাংগঠনিক সম্পাদক: মাহমুদুল আলম টিটু, আল মাহমুদ তারেক ও আফরীন নূসরাত। উপ-প্রচার সম্পাদক: দেবপ্রত দাস দেবু, আমিন কতোয়াল ও বাহারুল হোসেন অর্ণব। উপ-দফতর সম্পাদক: রাশেদুজ্জামান ও তারেক রায়হান। উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক: নুরুন নবী ও শাহজাহান সুমন।



উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদকরা হলেন- সরিয়তুল্লাহ লিটন ও নুরুল ইসলাম বাদশা। উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক সম্পাদকরা হলেন- শাহীন আহম্মেদ, মিঠু (চারুকলা) ও শেখ আসমান। উপ-সমাজ সেবা সম্পাদকরা হলেন- আহসান হাবিব রানা ও ফরহাদুল ইসলাম চৌধুরী। উপ-ক্রীড়া সম্পাদকরা হলেন- গোলাম বাকী চৌধুরী ও হাসান মুরাদ।



উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদকরা হলেন- গিয়াস উদ্দিন মিনহাজ ও আসাদুজ্জামান খান টুটুল (ঢাকা কলেজ.)। উপ-পাঠাগার সম্পাদকরা হলেন- মিন্টু লাল দাস ও আব্দুল বাসেদ গালিব (ঢাকা কলেজ)। উপ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকরা হলেন- আওলাদ হোসেন সবুজ, জামিল আহমেদ (ঢাকা কলেজ) ও ইমরান।



উপ-অর্থ সম্পাদকরা হলেন- রাসেল মিয়া ও শোয়েব আব্দুল্লাহ। উপ-আইন সম্পাদকরা হলেন- রুবেল (জহুরুল হক হল) ও রাসেল (স্টামফোর্ড) । উপ-পরিবেশ সম্পাদকরা হলেন- আজিজ এফ আর ও আব্দুর রহিম জিল্লো।



বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক মো. জাবেদ । উপ-সম্পাদকরা হলেন- এস এম রহিম তুহিন, আসাদুজ্জামান রন, মাজহারুল হক, কাজী মেহেদী হাসান দিপু, নেসার উদ্দিন তপু, আসিফ জামান রূপম, রকি খান ও জহিরুল আলম মামুন। উপ-স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদকরা হলেন- নজরুল ইসলাম শান্ত, সালমান, রাজেস চন্দ্র সিংহ, আল আমিন, তাহের, আবু জাহিদ রিপন ও লাবীব।



উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদকরা হলেন- ইসমাঈল হোসেন সুমন (একুশে হল), মোস্তাকিন মোর্শেদ লিমন। উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকরা হলেন- গৌতম দাস, রানু, নিউটন দাস, নিকি রোয়াজা ও পেরুরা (জগন্নাথ হল)।



উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকরা হলেন- দেবাশিষ আইচ, মাহমুদুল হাসান রাসেল, ফাতেমা ইসরাত জাহান বাধন, হুমায়ন কবির ও সজিব সরদার। উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদকরা হলেন- গাফফার (জবি) ও বক্তগোপাল রাজবংশী পিন্টু। উপ- স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সম্পাদক হলেন- ডা. চয়ন।



সাহিত্য সম্পাদক শাফায়েত। উপ-সম্পাদকরা হলেন-সুমাইয়া সুলতানা টুপুন, তরিকুল ইসলাম বাবু ও শহীদুল্লাহ মামুন। নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন রাজন। উপ-সম্পাদকরা হলেন- এটিএম সায়েম লিয়ন, বাবর ও আমজাদ হোসেন সবুজ।



তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক মারুফ। উপ-সম্পাদকরা হলেন- রনক ও জয়দেব দাস। মানব সম্পাদ উন্নয়ন সম্পাদক শাহ নেওয়াজ প্রধান। উপ-সম্পাদকরা হলেন- নাসিম আম্মান অংকুর, কফিল হালদার সজল (ঢাকা কলেজ) ও লোকমান হোসেন পলাশ।



গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান জয়। উপ-সম্পাদকরা হলেন- সাহাবুদ্দিন চঞ্চল, দেবু কুমার ভট্টাচার্য ও সুমন তালুকদার। কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাহুল পাটোয়ারী। উপ-সম্পাদকরা হলেন- উজ্জ্ল সরকার, এজাজ আহাম্মেদ সোহাগ ও সেলিম।



আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক জাবেদ ইকবাল। উপ-সম্পাদকরা হলেন-লিটন মাহমুদ, মশিউর রহমান সুমন ও মহসিন আলম। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো. আলামিন জামিল (জহরুল হল), উপ-সম্পাদকরা হলেন- ইলিয়াস (শেকৃবি) ও রাজীব দাস।



ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক কামরুল (সূর্যসেন হল)। উপ-সম্পাদকরা হলেন- ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পি, রাসেল ইবনে মান্নান (ঢাকা কলেজ), বাদল (মহসিন হল), তরিকুল ইসলাম, শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন লিংকন (ঢাকা দক্ষিণ), ওয়ালিউর রহমান বিপুল (জহুরুল হক হল) ও আরিফ (শহীদুল্লাহ হল)।



কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রইসুল ইসলাম জুয়েল। উপ-সম্পাদকরা হলেন- রেদোয়ান উল হাসান ও বাবলুর রহমান বাবলু। সহ-সম্পাদকরা হলেন ডা. মিঠু ও আসাদুজ্জামান। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ