শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১১

একজন বাবা (সমস্ত সন্তান দের প্রতি উৎসর্গীকৃত )

সুন্দর সকাল।অগ্নিদেব মাত্রই আকাশ চিরে বের হয়েছেন।চারপাশ যথেস্টই নীরব।বাড়ির সামনের ছোট্ট বাগানটিতে জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছান বৃদ্ধ পিতা,আর জীবনের সদ্য যৌবনে পৌছা অতি ব্যস্ত পুত্র বসে আছে।বৃদ্ধ পিতা চারপাশের দৃশ্য দেখে বরাবরের মতই বলে উঠলেন কি সুন্দর!কি সুন্দর!যেন এমন দৃশ্য তিনি আর দেখেন নি।অতি ব্যস্ত ছেলে পত্রিকা থেকে মুখ তুলে অত্যন্ত বিরক্তির সাথে তাঁর বাবাকে দেখল।চারপাশের দৃশ্য এমন কি যা দেখে এমন চিৎকার করতে হবে?এমন তো না যে ইনি এখানে কোনদিন আসেন নি।প্রতিদিন এখানে এসে বসা তাঁর নিত্য দিনের কর্ম।বাবার কি হচ্ছে কে জানে?কে বলবে এই লোকটি একজীবনে অনেক বড় একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন।চারপাশের নীরবতা কে হঠাৎ করেই ভেংগে দিয়ে একটি পাখি ডানা ঝাপটিয়ে উঠল।বৃদ্ধ পিতা সকৌতুকে পুত্রকে জিজ্ঞেস করল,এটা কি?পুত্র পত্রিকা থেকে মুখ তুলে ভ্রু কুঞ্চিত করে উত্তর দিল এটা শালিক।কিছুক্ষন পর পাখিটি উড়ে গাছের ডালে গিয়ে বসল।পিতা পুত্রকে উদ্দেশ্য করে বলল এটা কি?ছেলে আগের চেয়ে কণ্ঠ চরিয়ে বলল এটা শা-লি-ক।পুত্রের বিস্ময়ের সীমা রইল না।একজন মানুষ এভাবে বিরক্ত করতে পারে আরেকজনকে!এই লোক কি করে অতবড় সরকারী অফিসের দায়িত্ব পালন করত কে জানে?পাখিটি এবার একটা জলাধারের কাছে গিয়ে ডানা ঝাপটাতে লাগল।বৃদ্ধ পিতা ছেলেকে আবার জিজ্ঞেস করল,এটা কি?এবার পুত্রের ধৈর্যচ্যুতি ঘটল,সে পত্রিকা ছুরে ফেলে গলা সপ্তম আকাশে উঠিয়ে বলল তুমি আমার স্ংগে ফাজলামি করছ?তোমাকে কতবার বলছি এটা শালিক।তালব্য শ আ কার-ল ই-ক......শালিক।যতদিন যাচ্ছে তত তোমার বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে,তত তুমি বিরক্তিকর একজন মানুষে পরিণত হচ্ছ।তুমি যে একজন মানসিক রোগীর মত আচরণ করছ তা কি তুমি বুঝতে পারছ?একটা শালিকের নাম তুমি মনে রাখতে পারছ না!তোমার চিকিৎসার প্রয়োজন। বৃদ্ধ পিতা ছেলের এই আকস্মিক অগ্নিমূর্তি দেখে কিছুক্ষন ভাবলেশহীন তাকিয়ে রইলেন।তিনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না এই রাগের কারন।তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দারালেন।ছেলে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাচ্ছ?পিতা বললেন শান্ত হয়ে বস আমি আসছি।কিছুক্ষন পর পিতা একটা পুরনো ডায়েরী নিয়ে পুত্রের পাশে বসলেন।পুত্র দেখল ডায়েরী টা ২০ বছরের পুরনো।পুত্র পুরপুরি নিশ্চিত হল তাঁর বাবার মাথা সত্যি গেছে,নইলে এই সকালে কেউ পুরনো ডায়েরী ঘাটে।বৃদ্ধ পিতা ডায়েরী থেকে একটি পৃশঠা বের করে পুত্রকে পরতে দিলেন।পুত্র পড়ছে আর তাঁর চোখের পানি বাধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত উপচে পরে ডায়েরীর পাতার উপর টপটপ করে পড়ছে।আশ্চর্য হলেও সত্যি তাঁর কাদতে খারাপ লাগছে না......।মনে হচ্ছে আরও কাঁদে।
ডায়েরীর পাতা
২০/০২/১৯৮৮
০৮০০hrs
আজ আমার ছোট খোকার বয়স তিন বছর হল।ওকে নিয়ে এই সকালে তাই ঠিক করলাম আমার সব প্রিয় জিনিস গুলো করব আমার প্রিয় সন্তানের উদ্দ্যেশ্যে।আমার প্রিয় জিনিসের মধ্যে এই বাগান টিও আমার অসম্ভব প্রিয়।তাই সকালে খোকাকে নিয়ে এই বাগানে বেড়াতে গিয়েছিলাম।খোকা একটি শালিক পাখি কে দেখে জিজ্ঞেস করল এটা কি?আমি বললাম শালিক।খোকা আবার জিজ্ঞেস করল এটা কি?আমি আমার ছোট্ট সোনা কে কোলে তুলে নিয়ে বললাম এটা শালিক।ও এভাবে ২১ বার আমাকে জিজ্ঞেস করল বাবা এটা কি?আমি প্রতি বার ই আমার খোকনকে বুকে জড়িয়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বললাম এটা শালিক।খোকা প্রতিবার প্রশ্ন করছে আর দুষ্টুমি ভরা দৃশটিতে আমার দিকে তাকাচ্ছে।এই যে নরম রোদ,খোকা,আমি ঐ শালিক পাখি,খোকার দুষ্টুমি এর থেকেও কি জীবন সুন্দর হতে পারে?আচ্ছা এই যে শুনি স্বর্গের জীবন নাকি এর থেকেও সুন্দর হয়...!তাও কি সম্ভব?.................................




এই পর্যন্ত পড়ে অতি উত্তেজিত পুত্র বাবাকে জড়িয়ে ধরে ব্যকুল হৃদয়ে কাদতে লাগল।পিতার চোখও ঝাপসা হয়ে উঠছে।হঠাৎ পিতার কাছে মনে হল স্বর্গ কখনই এর থেকে সুন্দর হতে পারে না.........।

http://www.youtube.com/watch?v=2kpLDkWg5DA&feature=feedlik

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ