মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১১

হেপাটাইটিস যার পরিনতি মৃত্যু (যারা এই রোগে ভুগছেন যারা তাদের জন্য...)

হেপাটাইটিস সম্পর্কে কে কতটুকু জানেন? এই জানাটা কি যথেষ্ট? যারা এই রোগে ভুগছেন তারা কেমন আছেন?

গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের সেরা এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম হেপাটাটোলজিষ্ট এর চেম্বারে আমার যাওয়া আসা। অবাক হয়েছি এটা দেখে যে সেখানে রোগীদের ভিড় যে কোন বেসরকারী ক্লিনিকের চাইতেও বেশী। অথচ সেখানে একজনই ডাক্তার!

অবাক হওয়ার কিছুই নেই যদি আপনি এই রোগের বিস্তার এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে জানেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৮ জুলাই কে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসেবে ঘোষনা করেছে। অনেকে এটাকে খুব সাধারণ একটা রোগ হিসেবে ভেবে থাকেন। এমনকি যারা এই রোগে ভুগছেন এবং এর পরিনতি সম্পর্কে জানেন, তারাও বিষয়টাকে প্রকাশ্যে তেমন গুরুত্ব দিতে চান না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রত্যেকেই উপলব্ধি করেন কতটা অসহায়ত্ব আর অনিশ্চয়তায় প্রতিনিয়ত ধুকে ধুকে মরছেন।

সেদিন সেই চেম্বারে বসেছিলাম ওয়েটিং রুমে, সেখানে একজন সেনা কর্মকর্তা ডিএনএ টেষ্ট রিপোর্ট নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন, পাশে আর একজন ও ডিএনএ টেষ্ট রিপোর্ট জমা দিচ্ছেন কাউন্টারে, সেনা কর্মকর্তা অন্যজনের ডিএনএ কাউন্ট দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন, জানতে চাইলেন কতদিন ধরে আপনি এই রোগে ভুগছেন? অন্যজন জানালেন ৫ বছর। সেনা কর্মকর্তা বললেন আপনার ডিএনএ কাউন্ট'টা অনেক বেশী। উত্তরে অন্য রোগী বললেন ব্যাপার না। আপনার কত? আমার অনেক কম। আপনার প্রায় ২৭ লাখ সে তুলনায় আমার কিছুই না, মাত্র ৭ হাজার আমি প্রায় ১৫ বছর ধরে ভুগছি। (উল্লেখ্য, ডিএনএ কপি ১ লাখের উপর উঠলেই সেটাকে সিগনিফিকেন্ট চেঞ্জ বলে ধরে নেয়া হয়। তার মানে ভাইরাস অনেক বেশী ষ্ট্রং এবং লিভার, পেনক্রিয়াস স্পিলেন কে অকার্যকর করে দিতে প্রস্তুত ) আশেপাশের অনেকেই এসব কথা শুনছিলেন। এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বললেন তিনি প্রায় ১৫ বছর আগে হেপাটাইটিস এর টিকা নিয়েছিলেন কিন্তু তার নিজের সন্তানকে তিনি টিকা দেননি। বর্তমানে তার মেয়ে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। পরে দেখলাম তার মেয়ে একটু ওপাশেই নিশ্চুপ বসে রয়েছে। সে বর্তমানে রংপুর মেডিকেল এ পড়ছে। লোকটি নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য বার বার নিজেকে দায়ী করছিল। কিন্তু তিনি জানেন কিছুই করার নেই এখন আশা এই যে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উপর আস্থা রাখা এবং শেষ পর্যন্ত চেষ্ট করে যাওয়া। তিনি অল্পবয়সী একজনকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, "তোমরা ভেতরে ভেতরে অনেক দুর্বল আমি বুঝি, পাখি যে সময় উড়তে শিখবে সে সময় যদি তার ডানা ভেঙে যায় তাহলে আর বাকি কি থাকে জীবনের!" 

একথা সত্যি। যে যত আত্মবিশ্বাস নিয়ে এই বাস্তবতাকে মেতে নিতে চেষ্টা করুন না কেন ভেতরে ভেতরে প্রত্যেকেই মানসিক বিপর্যয়ের শিকার। এদের পাশে না আছে পরিবার (তার কারণ অজ্ঞতা) না আছে বন্ধু সমাজ (অজ্ঞতা আর কুসংষ্কার) ফলে একধরণের অসামাজিক জীবন-যাপন করতে তারা বাধ্য হন। তার ওপর রয়েছে ভয়াবহ ভবিষ্যতের আশঙ্কা। লিভারের যে কোন সমস্যার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিপুল ব্যায়ভার অথবা মৃত্যু। এ অবস্থায় হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত রোগী এটাকে গোপন রাখবেন সেটাই স্বাভাবিক। কেননা বিচ্ছিন্ন হয়ে কেউ বাঁচতে পারেনা, কেউ বিচ্ছিন্ন হয়ে বাচতে চায় না। সর্বোপরী সবাই বাঁচতে চায়।

এ অবস্থায় আমার যেটা মনে হয়, যারা হেপাটাইটিস বয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের একটা নিদৃষ্ট প্লাটফরমে এক হওয়া দরকার। নিজেদের অসুস্থতার জন্য পারষ্পরিক সহযোগীতা ছাড়া বেঁচে থাকা কঠিন। কেননা এর চিকিৎসায় বিপুল ব্যায়ভার বহন করা অনেক সময় অসম্ভব আর অনেক সময় অর্থহীনও বটে। অন্যদিকে একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ কখনোই একজন হেপাটাইটিস রোগীর শারীরিক ও মানসিক জটিলতা বুঝতে পারবেন না।


আর যারা এখনও হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হননি তাদের অনুরোধ করবো এখনই ভ্যাক্সিন নিয়ে নিন।

সবাই ভালো থাকবেন।
শুভরাত্রি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ