রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১১

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটাই কি ডিজিটাল বাংলাদেশ ? লোকমান হত্যার আসামী আওয়ামী লীগ নেতা !!

নরসিংদী পৌরসভার জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হতে শুরু করছে। এই হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার সংশ্লিষ্টতার তথ্য বের হয়ে আসছে।

এ ঘটনায় গতকাল রবিবার সেলিম নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী ডিবি পুলিশ। এর আগে গত ৯ নভেম্বর টঙ্গী এলাকা থেকে সেলিমকে নরসিংদীর ডিবি পুলিশ আটক করে। তাকে নরসিংদী নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনি ও পরিকল্পনাকারীর সম্পর্কে সে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে সেলিমের জড়িত থাকার তথ্য পায়। গতকাল সেলিমকে মেয়র লোকমান হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এই মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নরসিংদীর ডিবির ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ মণ্ডল ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। সেলিমকে রিমান্ডে এনে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর নরসিংদী ডিবি পুলিশ গোপালগঞ্জস্থ গোপীনাথপুর থেকে লোকমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পেশাদার কিলার টিপ্পন কাজীকে গ্রেফতার করে। সে নরসিংদী পৌর এলাকার কুমিল্লা কলোনীতে থাকে। হত্যাকাণ্ডের পর পলাতক ছিল।

সেলিম এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নরসিংদী পৌর এলাকার আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন মোবার ভাইঝি জামাই। মোবারকের মোবাইল ফোনের কললিস্ট থেকে পুলিশ টঙ্গী থেকে সেলিমকে আটক করে। সে নিজেকে একজন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়।

মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডে নরসিংদী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে মোবা ও নূরুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। ঘটনার এক মাস আগে তারা দেশ ত্যাগ করেন। নরসিংদীর প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নেতা নূরুল ইসলাম নরসিংদীতে অস্ত্রবাজি ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ আছে। নরসিংদীর তিনবার বিএনপির এমপি মরহুম শামসুদ্দিন আহমেদ এসহাকের পুত্র মাসুদ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি এই নূরুল ইসলাম। এছাড়া মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারীদেরও একজন নূরুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ নেতা মোবা নরসিংদী মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতিতে তাদের অবস্থান দুই মেরুতে হলেও আসল পেশা হলো নরসিংদীর কোটি কোটি টাকার মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা। কয়েক মাস আগে নরসিংদীর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে ঢুকে মোবা ও তার বন্ধু কবির সরকার টেন্ডারের সিডিউল ছিনিয়ে নেন। এই ঘটনায় মামলা হয়। মোবা ও কবির সরকার গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন। কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্যে মেয়র লোকমানকে হত্যার হুমকি দেন মোবা ও কবির সরকার। কিন্তু এ ব্যাপারে মামলা না করার জন্য মন্ত্রী রাজুর আপনজনের বাধা ছিল। তারপরও মামলা দায়ের হয়।

এই মামলায় মোবা ও কবির সরকার গ্রেফতার হয়। এর পিছনে লোকমানের হাত ছিল বলে মোবা ও কবির সরকার অভিযোগ করেন। নরসিংদী শহর থেকে বড় বড় মাদকের স্পট উচ্ছেদ করে ঈদগাহ্, কবরস্থান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন মেয়র লোকমান। এই বিষয়টি মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী অন্যতম গডফাদার মোবা, নূরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কতিপয় নেতা মেনে নিতে পারেনি বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।

ঢাকা ও নরসিংদীতে একাধিক বৈঠকে

হত্যার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ও নরসিংদীতে একাধিক বৈঠকে মেয়র লোকমানকে হত্যা করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। সেই বৈঠকে পলাতক মোবা, নূরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকারী যোগাড় ও অস্ত্র সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয় মোবা ও নূরুল ইসলামকে। মন্ত্রী রাজুর এক আপনজন ঐ বৈঠকে ছিলেন বলে মেয়র লোকমানের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ