মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১১

বেকুব হুজুর

আমার কাজের জন্য একদিন একটা নাট বল্টু তৈরি করার জন্য একটি ওয়র্কসপে বসে আছি। সকাল থেকেই দুইজন কর্মী কাজ করছে। আমি বসে বসে দেখছি। এমন সময় একজন মধ্য বয়সের হুজুর সাইকেল নিয়ে ওয়র্কশপে আসলো। এসেই এক কর্মীকে ৫টা টাকা দিয়ে বল্ল আমাকে একটুকো ঝালাই করে দাও তো। তারাতারি আমি নামাজে যাব।

আমি দেখলাম হুজুর একবারও জিজ্ঞাস করলনা যে কর্মিটি ফ্রি আছে কিনা। আমি মনে মনে ভাবলাম কেন সে আগেই ৫টা টাকা দিল। সবসময় তো দেখি কাজ শেষ করেই টাকা দেয়। হুজুর কেন আগেই টাকা দিল? আমি চুপ করে বসে দেখছি।

যেহেতু দুইদিন আগের কাজ,আমি বসে আছে কাজ শেষ হলে নিয়ে যাব তাই কর্মিটি কোন ভাবেই তার কাজ রেখে ঝালাই করতে রাজি হলো না।
শেষে ক্লান্ত হয়ে আমার পাশে এসে বসলো। গায়ে হাত দিয়ে বলল আপনার কাজ করছে বুঝি। জি। কাজটা খুব জরুরি। দুই দিন আগের দেয়া । গতকালই নেয়ার কথা। আজও সকাল থেকে বসে আছি। তার পর কথা হচ্ছে। আমি বল্লাম আপনি তাকে ৫টা টাকা আগে দিতে চেয়ে মনে হয় ভালই করেছেন। আল্লাহ তিনিও আগে বান্দাদের লোভ দেখায়। আপনি তো আল্লার পথই অনুসরণ করেছেন।
তারপর আমতা আমতা করে আমাকে কয়েকটা হাদিস শুনিয়ে বলছে। জানেন মুসলামনা কেন উন্নতি করতে পারে না? আমি জানতে চাইলাম কেন? বলল: এই যে দেখুন আমার এখন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার কথা অথচ পারছিনা। বির্ধমিরা এমন ভাবেই আমাদের পিছনে ফেলছে। আমি বললাম আপনি নামাজটা পড়ে তার পরই আসতে পারতেন। তিনি অন্য দিকে চেয়ে বলল নামাজের চেয়ে কাজ কখনো বড় হতে পারে না। এসব করতে করতে আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। তার নামাজে যাবার কোন তারা দেখছিনা। আমি বললাম আপনার নামাজের কি এখনো আছে? তিনি আমাকে বললেন জামাতে যখন পড়েত পারলামনা তখন পরেই পড়ি। আমি বললাম আচ্ছা।

তাকে জিজ্ঞাস করলাম আপনি ইসলামের কোন দলের লোক? তিনিতো এবার মহা ক্ষেপা। আমি কোন দলেরই না। আমি বিনয়ের সহিত জানতে চাইলাম মানে আপনি কি কাদিয়ান,সুন্নি,ওয়াহিব,শিয়া,মাজার পন্থি,নাকি তাবলিগ পন্থি,জামাতি ইসলামিও তো হৈতে পারেন। তিনি বললেন আললার এবাদত করি, ইসলাম সম্পর্কে আমার তেমন কোন জ্ঞান নেই। তবে সব মানুষের আল্লারে বিশ্বাস করা উচিত। এই পৃথিবীতে থাকতে হলে আল্লারে বিশ্বাস করতে হবে। আমি বললাম কেন করতে হবে? তিনি এবার আমার মুখের দিকে চেয়ে বলে আমি প্রথমই বুচ্ছিলাম আপনি নাস্তিক? আমি বললাম ক্যামনে বুঝলেন?

ততক্ষনে ওয়ার্কশপের মালিক চলে এসেছে। এবার তিনি জয়েন করলেন। যারা বেশি পড়ালেখা করে তারা এমন কথাই কয়। আমার এখানে এক লোক আসে, তিনি নাকি বড় বিজ্ঞানিদের সাথে কাজ করেন। বলে "নামাজ পড়লে আল্লারে পুটকি দেখানো হয়"

এবার আমি উচ্চস্বরে হাসা শুরো করে দিলাম। হুজুর ঠিক করতে পারছেনা ওয়ার্কশপের মালিক কোন দলে, আমার দলে হলে তো মুশকিল, আর তার দলে হলে কিছু কথা বলতে পারবেন। কিছুক্ষন পরেই দেখা গেল মালিক হুজুরের দলে। আমাকে প্যাচাতে শুরো করলো। তার পর গতানোগতিক প্যাচাল। আমি চায়ের আর্ডার দিলাম হুজুর চা খাবেনা। এমন সময় এক দরবেশ (নাকি ফকির) এল তিনি আমার কথা শুনে বলে " তেনায় খুব ভাল কথা কইছে, ভাল মানুষ" আমি আর এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম( এই প্রসংশা শুনে কি চা না খাইয়ে পারা যায়?) তিনি চা খেয়ে প্রস্থান করলেন। তার পর হাদিস নিয়ে আরো কথা হলো। এই হুজুর সারা জীবনে কোন হাদিস গ্রন্থ পরে নাই। কেবল শুনে শুনেই যা শিখেছে। মাথায় টুপি, লম্ভা একটা জুব্বা। আমি অনেক বার জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি করেন? সে বলেনা বলে কিছু করি না।
অদ্ধুত অদ্ধুত কোরানের আয়ত বলে বাংলায়। আমি বলি এটা কোথায় পাইছেন? এরকম নাই। তিতি ততই ক্ষেপেন। হাদিস বলে আমি জিজ্ঞাস করাম এটা কোন হাদিস গন্থথেকে? তিনি জানেন না। আমি বলি এমন হাদিস থাকলে জানতাম(কারন অনেক হাদিসই আমি পড়েছি)। তার পরও যদি না জানি বাসায় গিয়ে দেখবো আপনি বলেন এটা কোন গ্রন্থের হাদিস? আমি জিগাইলাম কোন সাহাবি সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ননা করেছে জানেন? তিনি কিছু বলেন না।

এতক্ষন আলোচনায় যে দুজন কর্মি কাজ করছিল তার মজা পেয়ে গেছে,হুজুর যতই রাগে তারা ততই হাসে। যা হোক আমার কাজ শেষ হলো আমি বিল চাইলাম। মালিক একটা বিল লিখে দিচ্ছে। এবার হুজুর বলে আপনি তো নাস্তিক এবার বিল নেন কেন? আমি বলি বিল নেয়ার সাথে নিস্তিকতার কি সম্পর্ক? তিনি বলে দেখছেন এখন বিল নিচ্ছেন , আল্লা একজন আছেন। বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ