সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১১

মিথ্যাবাদী নেতানিয়াহু বললেন : ইরান পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট সার্কোযি মিথ্যাবাদী বলেছেন বেশিদিন হয়নি।



'বাপের ব্যাটা'খ্যাত ইরাকের সাবেক শাসক সাদ্দামকে উৎখাত করা হয়েছিল এক চরম মিথ্যাচারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। সাদ্দামের কাছে গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এবং তা ধ্বংস করতে হবে- এই ছিল ইরাকের ওপর ইঙ্গোমার্কিন হামলার প্রধান অজুহাত। কিন্তু ইরাক দখলের পর সেখানে কোন গণবিধ্বংসী অস্ত্র তো দুরের কথা এ সংক্রান্ত কোন সরঞ্জামও পাওয়া যায়নি। তাহলে ওই চরম মিথ্যা কথাটি তৈরি করা হয়েছিল কোথায়? আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে যারা মাথা ঘামান তারা একবাক্যে স্বীকার করবেন সে মিথ্যা কথাটি তৈরি হয়েছিল তেলআবিবে। 

যুক্তরাষ্ট্রকে চালায় ইসরাইল। এটিও সবার কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ইসরাইলের সমর্থন ছাড়া কোন ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারে না। আর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবির বিপরীতে ইসরাইলের অন্যায় দাবির কাছে নতি স্বীকার করা হয়ে যায় প্রধান কর্তব্য। বারাক ওবামা ঠিক এ কারণেই 'পরিবর্তন' এর শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসে আগের শাসকদের চেয়েও বেশি মাত্রায় ইসরাইল তোষণ নীতি অনুসরণ করছেন। 

তাহলে দেখা যাচ্ছে, নিজের আগ্রাসী নীতি বাস্তবায়নের জন্য হেন মিথ্যা কথা নেই যা ইসরাইল তৈরি করে না। আর ইসরাইলি নেতারা যে মিথ্যা কথা বলে,তা বিশ্বের সাধারণ মানুষ যতটা না জানে তার চেয়ে বেশি জানেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপীয় নেতারাও তা হাড়ে হাড়ে টের পান। ইরাক ধ্বংসের পর এখন তেলআবিব লেগেছে ইরানের বিরুদ্ধে। ইরান যখন বলছে, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে তার পরমাণু কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে, তখন ইসরাইল দাবি করছে, ইরান পরমাণু বোমা বানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও 'জো হুকুম জাহাপনা' স্টাইলে একই কথা বলছে। পশ্চিমা মিডিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের মিডিয়ায়ও সেই একই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। 

কিন্তু ইসরাইলি অন্য সব নেতার মতো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও যে মিথ্যাবাদী তা এবার ইরান নয়, বলেছে ফ্রান্স। ফরাসি প্রেসিডেন্ট সার্কোজি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বলেছেন : নেতানিয়াহু মিথ্যাবাদী। সাক্ষাতে ওবামাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি প্রতিদিন এই লোকটির সঙ্গে দেন-দরবার করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

 
শালা মিথ্যাবাদী!
সেই নেতানিয়াহু আজ বলেছেন, ইরান পরমাণু বোমা প্রায় তৈরি করে ফেলেছে। 
জেরুজালেম, নভেম্বর ১৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- ইরান পরমাণু বোমা বানানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। 

তিনি বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সম্পূর্ণ চিত্র প্রকাশ হয়নি। ওই প্রতিবেদনে ইরান পরমাণু বোমার নকশার ওপর কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে। 

রোববার ইসরায়েলের মন্ত্রী পরিষদে নেতানিয়াহু একথা বলেন। গত সপ্তাহে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থা (আইএইএ)'র প্রতিবেদনের ওপরই মন্ত্রি পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়। 

নেতানিয়াহুর উদ্ধৃতি দিয়ে তার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, "যা ভাবা হয়, পরমাণু বোমা তৈরিতে ইরান তার চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে শুধু সেধরনের তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে যা প্রমাণ করা যাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা আরো অনেক কিছু দেখতে পাই।" 

তবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে অতিরিক্ত আর কি তথ্য আছে তা নিশ্চিত করে বলেননি নেতানিয়াহু। 

অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই ইরানের পরমাণু অস্ত্রের আকাঙ্খা বন্ধের জন্য বৈঠকের শুরুতে নেতানিয়াহু বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান। 

আইএইএ'র প্রতিবেদন প্রকাশের আগে থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো অভিযোগ করে আসছিল, পরমাণু অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। 

ইরান বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবী করছে, পরমাণু অস্ত্র তৈরি নয় বরং বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করছে তারা। 

আইএইএ'র প্রকাশিত প্রতিবেদনকে 'বৈষম্যমূলক' এবং 'রাজনৈতিক' উদ্দেশ্যপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেছে ইরান। 

জাতিসংঘের পরমাণু তদারকি সংস্থা আইএইএ'র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ইরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তেহরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কর্মকর্তারা আইএইএ'র প্রতিবেদনটি তৈরি করে দিয়েছে। সংস্থাটির কাছে এ সংক্রান্ত বাস্তবসম্মত কোন প্রমাণ নেই বলে তেহরান উল্লেখ করেছে।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, আইএই্‌এ'কে দিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করার পরও নেতানিয়াহুর অন্তর্জ্বালা মিটছে না। তিনি বলেছেন, "যা ভাবা হয়, পরমাণু বোমা তৈরিতে ইরান তার চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে শুধু সেধরনের তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে যা প্রমাণ করা যাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা আরো অনেক কিছু দেখতে পাই।"

আরে নেতানিয়াহু, তোর মতো মিথ্যবাদীর কথা বিশ্বের আর কে বিশ্বাস করবে বল? ফ্রান্স তো বিশ্বাস করবে না। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা বলে দিয়েছেন, তিনি বাধ্য হয়ে তোর কথা শোনেন। যেদিন তোর প্রয়োজন মিটবে, সেদিন ওয়াশিংটনও তোর কথা বিশ্বাস করবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ