বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১১

আর নয় রাজনৈতিক হত্যা, উন্মোচিত হউক সকল হত্যাকারী।আমরা লোকমান হত্যাকারীদের মুখোস খুলে দেবো।

গতকাল পহেলা নভেম্বর সন্ধ্যা আট ঘটিকা দলীয় কার্যালয়ে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন পাঁচ ছয় জনের একটি মুখোসধারী দলের গুলিতে নিহত হন।অফিস কক্ষে বসা থাকা অবস্থায় আততায়ীরা লোকমানকে লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে অনবরত গুলি করতে থাকে ও হত্যা নিশ্চিত করে ফাঁকা গুলি করতে করতে পাশের চায়ের দোকানের পেছন দিয়ে চলে যায়।বুকে চারটি ও হাতে একটি গুলি বিদ্ধ লোকমানকে ঢাকা ম্যেডিক্যাল নেয়ার পথে মারা যায়।ইন্না.....রাজিউন।মরহুমের নামাজে জানাজা আজ দোশরা নভেম্বর বাদ আসর নরসিংদী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।

ঘটনার পর নরসিংদী শহরের পরিস্থিতিঃ লোকমান হত্যার খবর মুহুর্তে শহরে ছড়িয়ে পরে।শহরের লোকজন আতংকিত হয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দিকবেদিক ছুটাছুটি শুরু করে।পরপর দুইবার নির্বাচিত জনপ্রীয় মেয়র লোকমানের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে হাজার হাজার জনগণ নরসিংদীর উপর দিয়ে যাওয়া ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বেশ কিছু গাড়ী ভাংচুর করে।ঢাকার দিকে পাঁচদোনা ও ভৈরবের দিকে ইটখলা নামক স্থানে মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়।মাঝখানের প্রায় বিশ কিলোমিটার রাস্তায় গাড়ি ফেলে টায়ারে আগুন জ্বেলে জনগণ বিক্ষোভ করতে থাকে।ঐ দিকে নরসিংদী শহরের উপর দিয়ে যাওয়া রেল লাইনে গাড়ি গাছ ইত্যাদী ফেলে রেলযোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনগণ নরসিংদী সার্কিট হাউজে ভাঙচুর চালায়।সার্কিট হউজের নীচ তলা ও লনে রাখা একটি সড়কারী গাড়ি ভাঙচুর করে।ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজী উদ্দিন রাজুর ভাই সাত্তারের শহরে অবস্থিত একটি তিনতলা বাড়ি বিক্ষুব্ধ জনগণ ভাংচুর করে আগুন জ্বালীয়ে দেয়।

লোকমান হোসেন ও নরসিংদী পরিচিতিঃ আনুমানিক পঁতাল্লীশ বছর বয়সী লোকমানের নিজ বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার পলাশি ইউনিয়নে।জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে ভৈরবের পাশে মেঘনার বিস্তৃন চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত নরসিংদীর সবচেয়ে দূরবর্তী এই উপজেলাটি বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজি উদ্দিন রাজুর নির্বাচনী এলাকা।তাঁর বাড়ি আদিয়াবাদ।রায়পুরা উপজেলাটি অত্রঅঞ্চলের একটি কুখ্যাত জনপদ হিসাবে পরিচিত ঐতিহাসিক ভাবেই।চব্বিশটি ইউনিয়নের এই বিশাল উপজেলার অধিকাংশ এলাকা দুর্গম চরাঞ্চল হিসাবে ঢাকার আশেপাশের ব্যাপক এলাকা সহ ঢাকা সিলেট মহাসড়কের আন্তজেলা চোর ডাকাতের অভয়আরন্য হিসাবে রায়পুরের পরিচিতি বহু বছরের।স্বাধীনতার পর এ অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল সর্বহারা নেটওয়ার্কের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাটি।রাজনৈতিক হানাহানি, দখলবাজি, দাঙ্গা রায়পুরায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।এখানকার সমাজপতিরা বছরের পর বছর ধরে চরের দরিদ্র রধারন মানুষকে সবসময় খুনাখুনি, রাহাজানি, চুরি ডাকাতি জুয়া ইত্যাদী লাগিয়েই রাখে।নরসিংদীতে কোর্টে রায়পুরার আসামী সাক্ষিরা বাস ভরে ভরে রিজার্ভ নায়ে আসে।এখানকার অধিকাংশ অপরাধের খবর সহসা বাইরে আসে।জাতীয় মাধ্যম দূরে থাক নরসিংদীর স্থানীয় পত্রিকাতেও রায়পুরার খবর কমই আসে।এই অঞ্চলে জন্মগ্রহন করা লোকমান সেখানকার আর দশটা মানুষের মত স্কুল জীবনেই বিভিন্ন অপকর্ম দলাদলি ও মারামারিতে জড়িয়ে পরে।সে সময়ের লোকমানের কুখ্যাতি আজও রায়পুরবার্সির মনে আছে।এসএসসি পাশ করার পর লোকমান নরসিংদী কলেজে ভর্তি হয়।ছাত্র রাজনীতিতে তেমন বড় মাপের নেতা না থাকলেও ক্যাডার হিসেবে লোকমান খ্যাতি বাড়তে থাকে। তখন লোকমানের সাথে সখ্যতা হয় নরসিংদীর এক সময়ের ত্রাস কমিশনার মানিকের সাথে।মানিক ছিল নরসিংদীর কুক্ষ্যাত এক ত্রাসের নাম।আশির দশকে নরসিংদী জেলা ঘোষনা হয়।শহরের আশেপাশের জমির দাম বেড়ে যায় তখন জমি বাড়ি দখল জালিয়াতী ইত্যাদী ছিল মানিকের অন্যতম কাজ।লোকমুখে শোনা যায় মানিক কারও বাড়ি দখল করতে না পরলে বিল্ডিংয়ের ইট হলেও খুলে নিয়ে যেত।মানিক লোকমান গ্রুপের অত্যাচারে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক সহ আশেপাশের এলাকার আতংক।সেবার মানিক শহরের পাশে ব্রিজের নিচে জেলাপরিশদের মাঠে যাত্রাপালার আয়োজন করে।যাত্রা মানে জুয়ার বিশাল আসর।আজও নরসিংদীর মনোহরদি, রায়পুরা, বেলাব সহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিবছর যাত্রা জুয়া কমন ঘটনা।রায়পুরায় মন্ত্রী নিজে যাত্রা চালায়।এছাড়ার সারা বছর গ্রামে গ্রামে জুয়া লেগেই আছে।মনোহরদীর সরকারী দলের এমপির ইউনিয়ন জুয়ার স্বর্গরাজ্য যেখানে র্যাব পুলিশ ঢোকার সাহস পায়না।সেবার যাত্রা কাম জুয়ার টাকা ভাগাভাগির এক ভোরে লোকমান গুলি করে হত্যা করে মানিককে।সেই থেকে পালে হাওয়া লাগে লোকমানের সাফল্যের।

তথ্য সংগ্রহ চলছে।সাথে থাকুন।তথ্য দিন।

আসিতেছেঃ লোকমান অফিস থেকে বের হয়ে কোন গাড়িতে উঠবে সংশ্লিষ্ট ড্রাইভার ছারা কেউ জানতো না।সে হাই লেভেল সিকিউরিটি ম্যান্টেইন করতো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ