সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১১

দেশের মানুষের চোখ কি পকেটে থাকে?

একদিকে নিজেদের একজন সংসদ সদস্যের মান রক্ষার্থে একটি জনপদকে বিরান, অন্যদিকে নিষিদ্ধ এলাকায় চিৎকার করা যাবেনা বলে বিরোধী সংসদ সদস্যকে গণধোলাই দেওয়া হচ্ছে এসব জনগণ দেখেছে। কোন একদিন, কোন এক সময়, কোন এক জায়গায়, কোন এক ব্যক্তিকে খুন করেছেন এই অপরাধে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিকে ফাঁসিতে লটকানোর প্রচেষ্টা হয়। অথচ দলীয় সংসদের নিজের গাড়িতে, নিজেরই পিস্তলের গুলিতে নিষ্ঠাবান ও বিশ্বস্ত দলীয় কর্মী মারা গেলেও সেটা অপরাধ হয়না। বেহেশত থেকে নির্গত মেশক্‌ আম্বরের আবরণে কস্তূরীর ঘ্রাণ যেন তাঁদের দলের সকলকে পাপ শূন্য মাসুম ব্যক্তি বানিয়ে দেয়! তাহলে এটাকে অপশাসন বলা হবেনা তো কাকে বলা হবে? এই শাসন কোন মানদণ্ডে মগের মুল্লুকের চেয়ে সেরা বলে বিবেচিত হয়েছে?


মগের মুল্লুক বলে বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ বহুল প্রচারিত আছে। মগ একটি পাহাড়ি জাতির নাম, মুল্লুক শব্দটি আরবি ভাষা থেকে আগত, যার অর্থ হল রাজ্য। মগেরা তদানীন্তন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বর্তমান মায়ানমার পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। যে কথার উপর ভিত্তি করে মগের মুল্লুক কথাটির জন্ম সেটি আমি বিস্তারিত উদ্ধার করতে পারিনি। তবে মহাকবি আলাওল (১৬৪৫-১৬৫৮খৃ) তিনি তাঁর পুঁথি সাহিত্যে কিছু দুর্ভোগের কথা বলে গিয়েছেন; কিভাবে হার্মাদ জলদস্যুরা তাঁকে অপহরণ করেছেন এবং কিভাবে তাঁকে মগ অধ্যুষিত বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে ইত্যাদি। মহাকবি আলাওলের এসব পড়ে অন্তত সে যুগের কিছু ধারণা পাওয়া যায়। তবে আলাওল সে যুগে অনেক কিছু ভাল ছিল সেটা উল্লেখ করতেও কুণ্ঠিত হননি। উল্লেখ্য মগের মুল্লুকের জনগণ ছিল অন্যায়কারী এবং শাসক ছিল তার নিয়ন্ত্রণকারী। বর্তমানে আমাদের দেশে যা ঘটছে বা ঘটে চলেছে সেগুলো মগের রাজত্বকে হার মানাবে তাতে কোন সন্দেহ নাই! আমরা যাদের মগ বলে ঘৃণা করতাম, তারা এখনও বেঁচে আছে। তবে বর্তমানে মগের রাজত্ব আমাদের রাজত্বের চেয়ে অনেক ভাল, অনেক উন্নত, অনেক সহনশীল। ধরন দেখে মনে হচ্ছে বর্তমানের অপশাসন থেকে বাঁচার জন্য, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অচিরেই বাংলাদেশের মানুষ রাস্তা-ঘাটে এই বলে মিছিল করবে, ‘এই অপশাসন থেকে মুক্তি চাই, প্রয়োজনে মগের শাসন চালু চাই’। আমার এই কথাটি পরিষ্কার করতে কয়েকটি ঘটনার দিকে চোখ বুলানো দরকার বলে মনে করি। 

১. 
গত ১১ই অক্টোবর ২০১০ সিরাজগঞ্জে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জনসমাবেশের উপরে চলন্ত ট্রেন তুলে দিলে পর ৭ জন মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়, আরো বহু মানুষ আহত হয়। শহরের অন্যত্র জনসভার স্থান পূর্বনির্ধারিত ও পূর্বানুমতি প্রাপ্ত থাকলেও সরকার দলীয় সমর্থকেরা হঠাৎ ঘোষণা দেয় একই জায়গায় সমাবেশ করার। ডিজিটাল সরকার দুষ্টের লালন ও শিষ্টের দমন নীতির অজুহাতে সেই স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করে। ফলে বিরোধীদল উপায়ান্তর না পেয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়ে, তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে রেল লাইনের পাশেই সমাবেশ শুরু করে। এই সমাবেশের উপর দিয়েই ধাবমান ট্রেন চলে যায়, ফলে মর্মান্তিক ভাবে সাত জন মানুষ মারা যায়। ট্রেনের ড্রাইভার ট্রেনটিকে জনসভার পাশে রেখেই চম্পট দেন! উত্তেজিত জনতা ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেন। ট্রেন জ্বালানোর অপরাধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সাথে সাথেই ছয়টি মামলা দায়ের করে এবং পুলিশ তড়িৎ গতিতে আশে পাশের কয়েক গ্রামের মানুষদের পাইকারি ভাবে গ্রেফতার করে। সীমাহীন অত্যাচার করে বিএনপি নেতা কর্মীদের দীর্ঘদিন দেশ ছাড়া করে রাখে। মৃত মানুষদের জানাজা নামাজে পর্যন্ত মানুষের অভাব দেখা দেয়। বহুদিন মানুষ গ্রামে ফিরতে পারেনি। সরকারী মন্ত্রীরা দম্ভভরে ঘোষণা করেছিলেন বিনা অনুমতিতে রেল রাস্তার পাশে সমাবেশ করার জন্য খালেদা জিয়াকে শাস্তি পেতে হবে! একটি অন্যায় থেকে আরেকটি অন্যায় শুরু হয়। বিরোধী দল আহুত সমাবেশ স্থলে সরকার দলীয় কর্মীরা সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে একই দিন, একই সময়, একই স্থানে কেন সমাবেশ ডেকেছিল তা তারা উত্তর দেবার গরজ বোধ করেনি। সরকারের ভাবনা অপরের সমাবেশ পণ্ড করা তেমন কোন অন্যায় কাজ নয়, যত অন্যায় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে হয়। এই অন্যায় তারা প্রকাশ্যে করেছেন, টিভিতে গর্ব করে মন্তব্য করেছেন। কেননা তারা ভাবেন জনগণের কপালে কোন চোখ ছিলনা, যাদের চোখ ছিল তারা অন্ধ! সুতরাং জনগণ এসব কিছুই দেখেনি। 

২. 
গত ১লা নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ৮ টায় সরকার সমর্থিত নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হোসেন মুখোশ ধারী সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন এবং রাত ১১ টায় মৃত্যুবরণ করেন। পারদর্শিতায় স্বর্ণ জয়ী ও অসম্ভব জনপ্রিয়তাই তার এই অকাল মৃত্যুর কারণ বলে অনেকে সরাসরি টিভি ক্যামরার সামনে চিল্লায়ে বলছিল। কোন প্রকার রাখ ঢাক ছাড়াই স্থানীয় নেতারা বললেন এটা সরকার দলীয় আন্ত কোন্দল। ভবিষ্যতে এই মেয়র যদি এমপি পদে দাড়িয়ে যায়, বর্তমান মন্ত্রীর সিট হারানোর সম্ভাবনা শতভাগ নিশ্চিত। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সরাসরি মন্ত্রীর ভাইকে দোষ দেওয়া হয়। উত্তেজিত জনতা মন্ত্রীর ব্যবহৃত সার্কিট হাউজ, ভাইয়ের ব্যবহৃত বিভিন্ন স্থান গুড়িয়ে দেয়। স্থানীয় আওয়ামী কর্মীরা স্থানীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিছিল করছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মানুষেরা নিজেরাই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল কার পক্ষে থাকলে তাদের চাকুরী এবং জান দুটোই নিরাপদ থাকবে। এত সব ঘটনা প্রকাশ্যেই হচ্ছিল, টিভিগুলো লাইভ দেখাচ্ছিল, সংবাদ পত্র গুলো রাখঢাক না রেখেই মন্ত্রী ও মন্ত্রীর নাম বলে যাচ্ছিল, বিভিন্ন ব্লগে তড়িৎ কর্মা ব্লগারেরা অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করছিল (যা সংবাদ পত্রে প্রকাশ করা সম্ভব নয়)। এত কিছুর পরও দুই দিন পুলিশের কোন ভূমিকা নাই, মামলা নাই, পুলিশের কোন এ্যাকশন নাই বরং তখনও তারা দলের আভ্যন্তরীণ রি-এ্যাকশন দেখায় ব্যস্ত ছিল। অবশেষে ৫৪ ধারায় ঢাকায় অবস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেফতারের মাধ্যমে শামুকের গতিতে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়! সকলের চোখ কপালে উঠল, বেকুব মানুষ পর্যন্ত বুদ্ধিমান হল। ড. আসিফ নজরুল ৯ তারিখ রাতে বাংলা ভিষণের টক শোতে বলেছেন, ‘এসব নির্লজ্জ, কদাকার আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলোর নাম মোটেই আইনের শাসন নয় বরং জাতির সাথে প্রহসন আর তামাসা করা’! সরকার মনে করেন এসব ঘটনা জনগণ দেখেনি আর যাদের দেখার কথা তাদের চোখ পকেটে ঢুকানো ছিল! 

৩. 
লোকমান হত্যার পরদিন ২রা নভেম্বর ২০১১ তারিখ ছাত্রলীগ; আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল আহবান করেন। সকাল ১০ টার দিকে ঢাকা থেকে আগত কিশোরগঞ্জ গামী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর ট্রেনখানি থামিয়ে হরতাল কারীরা আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ট্রেনের ১১ টি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। কাকতালীয় ভাবে সিরাজগঞ্জেও ১১ টি বগি পুড়ে গিয়েছিল। ট্রেনে আগুন লাগাতে যাওয়া এই সকল জনতার উত্তেজনার পরিমাণ, ধরণ, কারণ, অবস্থান, পরিস্থিতি কোনটাই এক রকম ছিলনা। ঈদে ঘর মুখো মানুষের চরম ভোগান্তি, বাচ্চাদের নিয়ে মারাত্মক জিল্লতী টিভি পর্দায় ভেসে উঠেছিল। সিরাজগঞ্জে ঘটনাস্থলে প্রচুর মানুষ আহত সাত জন নিহত হবার কারণে মারমুখো মানুষ ট্রেন পুড়িয়েছে। সেই অপরাধে পুলিশ যে এ্যাকশন নিয়েছিল। নরসিংদীতে পুলিশকে সে অবস্থায় দেখা যায়নি। অথচ নরসিংদীতে ট্রেন জ্বালানোর ঘটনাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টা পরে, হরতালের আওতায়, পরিকল্পিত ভাবে, ঠাণ্ডা মাথায়, পুলিশ এবং র্যা বের আনাগোনার উপস্থিতিতে ট্রেন জ্বালানো হয়েছে। এর অপরাধ আগের অপরাধের চেয়ে অনেকগুণ বেশী ও দোষী ব্যক্তিরা চরম শাস্তির মুখোমুখি হবার দাবী রাখে। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কোন এ্যাকশনে যেতে দেখিনি, মন্ত্রীদের দম্ভভরে কথা বলতে দেখিনি, অধিকন্তু এই অন্যায়ের প্রশাসনিক সাক্ষী দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলী হতে দেখলাম! অথচ এই দুই কর্মকর্তা হয়ত দোষী সাব্যস্ত হতেন নয়ত অপরাধের সাক্ষী হতেন। দলীয় কর্মীদের রক্ষার জন্য এমন প্রকাশ্য ডিজিটাল নির্লজ্জতা উপহার দিল প্রশাসন যেটা উপরে বর্ণিত মগের মুল্লুককেও হার মানায়। হাজারো প্রশ্নবাণে আক্রান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশেষে জানাতে পারলেন এই মামলায় সন্দেহের বশত গ্রেফতার করা বিএনপি নেতা খোকনের হাড্ডি নরম করার জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। কেননা সরকার ভাবেন এসব কীর্তি দেখার জন্য জনগণের কোন চোখই নাই, থাকলেও ওসব পকেটে লুকানো আছে। 

৪. 
বিগত ১৯ শে সেপ্টেম্বর ২০১১ ঢাকার কাকরাইলে জামায়াতে ইসলামীর মিছিলে পুলিশের হামলায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়। পুলিশ হামলা করতে আসলে জামায়াত কর্মীরাও প্রতিরোধ করে ফলে গণ্ডগোল সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জামায়াত কর্মীরা গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় যার বেশীর ভাগই ছিল পুলিশের। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই সরকার জামায়াতের উপর মরণ কামড় বসিয়েছে। ঢাকার ঘটনায় পুরো দেশ জুড়ে নেতাদের ধরে ধরে জেলে পুরা হল, বিদেশে অবস্থান রত নেতারাও মামলা থেকে বাদ যায়নি। এখনও সেই মামলার সূত্র ধরে গ্রেফতার অভিযান চলছে। পিতার সাথে পুত্রকে, শ্বশুরের সাথে জামাতা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। অনেকের বাড়ী ঘরের মালামাল ক্রোক করা হয়েছে। অবিবাহিত ছেলের মাল ক্রোক করতে গিয়ে পিতার মাল টানাটানির ঘটনা হয়েছে। সরকার ঘোষণা করেছে জামায়াত কে আর রাজনীতি করতে দেবেনা। তাই সর্বশক্তি দিয়ে এদের দমন করার জন্য এই অভিযান! জামায়াত-বিএনপির ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বুঝা যায় বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনী নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার একটি সক্রিয় বাহিনী আছে! এক গণ্ডগোলের অপরাধে সরকার একটি বৈধ রাজনৈতিক দলকে মাঠে পর্যন্ত নামতে পর্যন্ত দিচ্ছেনা। দেখা গেছে নরসিংদীতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার মানুষ নাই, জামায়াত অফিসের সামনে ঈদের দিন কোন্‌ গরীব মিসকিন কোথায় রুটি খাচ্ছে সেটা ভণ্ডুল করার জন্য প্রচুর পুলিশ তৎপর! সেদিন জামায়াতের মিছিলকে নিরাপত্তা দেবার জন্য রায়ট গাড়ী, জল কামান, প্রিজন ভ্যান, প্রচুর মানুষ গ্রেফতার করে বাধার মত বান্ডিলে বান্ডিলে রসি, গাড়ি ভরা কাঁদানে কার্তুজ বহন করা কি শান্তি প্রতিষ্ঠার নমুনা! গণ্ডগোল যখন শুরু হল তখন পুলিশ সকল গাড়ী গুলো মিছিল কারীদের সামনে রেখে একটি গাড়িও না নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল! যাতে জামায়াত কর্মীরা মনের সুখে আগুন জ্বালাতে পারে! এসব আইনের শাসন নাকি জনগণের জান-মাল নিরাপদ রাখার আধুনিক কৌশল! জনগণ এসব তাকিয়ে দেখেছে, যদিও সরকার ভেবে রেখেছেন জনগনের কপালের চোখ তাদের পকেটেই ঢুকিয়ে রেখেছে! 

একদিকে নিজেদের একজন সংসদ সদস্যের মান রক্ষার্থে একটি জনপদকে বিরান, অন্যদিকে নিষিদ্ধ এলাকায় চিৎকার করা যাবেনা বলে বিরোধী সংসদ সদস্যকে গণধোলাই দেওয়া হচ্ছে এসব জনগণ দেখেছে। কোন একদিন, কোন এক সময়, কোন এক জায়গায়, কোন এক ব্যক্তিকে খুন করেছেন এই অপরাধে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিকে ফাঁসিতে লটকানোর প্রচেষ্টা হয়। অথচ দলীয় সংসদের নিজের গাড়িতে, নিজেরই পিস্তলের গুলিতে নিষ্ঠাবান ও বিশ্বস্ত দলীয় কর্মী মারা গেলেও সেটা অপরাধ হয়না। বেহেশত থেকে নির্গত মেশক্‌ আম্বরের আবরণে কস্তূরীর ঘ্রাণ যেন তাঁদের দলের সকলকে পাপ শূন্য মাসুম ব্যক্তি বানিয়ে দেয়! তাহলে এটাকে অপশাসন বলা হবেনা তো কাকে বলা হবে? এই শাসন কোন মানদণ্ডে মগের মুল্লুকের চেয়ে সেরা বলে বিবেচিত হয়েছে? 

মানুষ যখন আদালত থেকে সুবিচার না পেয়ে ফিরে আসে, প্রশাসন থেকে ন্যায় পরায়ণ আচরণ না পায়, নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতকে যখন অনিরাপদ মনে করে, তখনই মানুষ নিজের দায়িত্বে বাচতে চায়। মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠে, প্রশাসনের কাছে তার আচরণ অন্যায় হলেও তার নিজের বেচে থাকার জন্য সেটাই একমাত্র বৈধ উপায় হয়ে দাড়ায়। নিজেরাই আইনকে হাতে তুলে নেয়, সরকারী আইনকে অবজ্ঞা করে, প্রতিটি সরকারী কর্মচারীকে তাদের অস্তিত্বের দুষমন মনে করে। ফলে খুন খারাবী বেড়ে যায় এবং দেশে অরাজকতা দেখা দেয়। দেশে একবার অরাজকতা সৃষ্টি হলে সেটি সহজে বন্ধ করা যায়না। দেশের অবকাটামো ভেঙ্গে পরে, কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চায়না, জনগণ নেতাদেরকে বিশ্বাসঘাতক ভাবতে থাকে এবং গৃহযুদ্ধ আর লুটপাট হই সেই জাতীর নিয়তি। রাষ্ট্র শক্তির এ সমস্ত আচরণের কারণেই সন্ত্রাস বাদ, জঙ্গি বাদ (সরকারী ভাষা) এর জন্ম হয়। আমাদের পুরো জাতি এখন এই পরিস্থিতির প্রায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এত সব মতবাদ সৃষ্টি হবার জন্য মূলত সরকার ব্যবস্থাই বহুলাংশে দায়ী থাকে। 

আমাদের দেশে সকল সরকার গুলোর মাঝেই আছে উপরে বর্ণিত সেই প্রবণতা। আওয়ামীলীগ সরকারের আগের আমল ১৯৯৬-২০০১ টি উত্তম বলে স্বীকৃত নয়, যার ফলে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। বলা হয় বর্তমান সরকারকে মানুষ ভোট দিয়েছে বিএনপির দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে। জনগণ ভেবেছিল বর্তমান সরকার অতীতের সরকারের ভুলগুলো বিচক্ষণতার সহিত বিশ্লেষণ করে নতুন কিছু উপহার দিবে। তবে জনগণ হ্যাঁ করে তাকিয়ে দেখল অন্যের অযোগ্যতার মাশুল হিসেবে যাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে সে আরো অন্যায় কারী। বরং তারা এই বলে দর্প করে ওদের আমলে আমাদের চেয়ে বেশী খুন হয়েছে! অথচ তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল খুন একটিও না হবার জন্য, সেই কথাটিই তারা ভুলে গিয়েছে। পরবর্তী যে সরকার আসুক তারা যদি বর্তমান সরকারের অনুরূপ আচরণ করে, তাহলে জাতীর কি দশা হবে ভাবতেই আশ্চর্য হতে হয়। সরকার যদিও ভাবছে জনগণের চোখ পকেটে। তবে জনগণের চোখ যখন যথাস্থানে বসবে তখনই সরকার বুঝতে পারবে এ সমস্ত আনাড়ি সিদ্ধান্তে দলের কি সর্বনাশ তারা করেছেন। বড় সংশয়ের কথা হল তখন জনগণের চোখ কপালের কোটরে সঠিক স্থানে থাকলেও কোন লাভ হবেনা কেননা যত সর্বনাশ হবার তা আগেই হয়ে যাবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ