বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১১

জাগো, জাফর স্যার, জামাতিদের নিয়ে আপনারা লিখবেন কিন্তু আমার বোনটিকে যে ওরা বাস থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ধর্ষণ করল, এটা নিয়ে আপনারা কখনোই লিখবেন না

দিনটি ছিলো বুধবার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই যথারীতি নাস্তা খেয়ে ড্রয়িং রুম থেকে পেপার নিয়ে স্টেপ্‌লার মেশিন দিয়ে পেপারটা স্টেপল্‌ করলাম। পুরো পত্রিকা জুড়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের খবর; নির্বাচনের খবর পড়তে আর ভালো লাগে না, তাই এই নিউজগুলো আর পড়লাম না। কিন্তু যখনই ব্যাক পেইজের একটা নিউজ চোখে পড়ল তখনই আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। খবরের শিরোনাম ছিলো এই রকম “ডিবির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণ”। 

খবরটা পড়ার পর আমার রুমে আমি সারা দিন চুপচাপ বসে ছিলাম । পরের দিন প্রায় সবগুলো ব্লগে এই নিয়ে কোনো লেখা আছে কিনা, কেউ কোনো প্রতিবাদ করেছে কিনা জানার চেষ্টা করলাম। কোনো লেখা খুঁজে পেলাম না।

গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাসভর্তি যাত্রীদের মধ্য থেকে একজন স্কুল শিক্ষিকাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ, এটা কিসের আলামত? যে বাসটিতে শিক্ষিকা উঠেছিলেন, সেই বাসের কর্মচারী, সহযাত্রী, কিংবা সাভার বাসস্ট্যান্ডের শত শত মানুষ, কেউই ওই নারীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি; পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ মামলা নিয়েছে। ঘরে-বাইরে, নির্জনে-লোকালয়ে, কোথাও কি তাহলে নারী নিরাপদ নয়(!?) অপরাধী বা অপরাধ দমনকারী(পুলিশ) উভয়ই কি আজ নারীর জন্য হুমকি(!?) 

যাই হোক, আমাদের সমাজে কিছু ট্যাবু আছে; যখন কেউ ধর্ষণের শিকার হয় তখন আমরা সবাই চুপ করে থাকি, এটা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলি না ধর্ষিতার মঙ্গলের কথা চিন্তা করে। কিন্তু এতে ধর্ষিতার কোনো মঙ্গল না হলেও ধর্ষকের মঙ্গল ঠিকই হয়। ধর্ষক তো গ্রেপ্তার হয়ই না, বরং নতুন উদ্যমে আরও সাহসী হয়ে নতুন কাউকে ধর্ষণ করার সুযোগ খুঁজতে থাকে।

১৯৭১ সালেও আমাদের বোনেরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে, এখনও হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা কাগজে-কলমে স্বাধীনতা পেলেও প্রকৃত স্বাধীনতা আমরা কখনোই পাইনি। কিন্তু এক ধরণের বীভৎস, বিকৃত স্বাধীনতা ঠিকই পেয়েছি; মেয়েদেরকে ধর্ষণ করার স্বাধীনতা পেয়েছি; ওদের গায়ে এসিড নিক্ষেপের স্বাধীনতা পেয়েছি; ওদেরকে ধর্ষণ করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার স্বাধীনতা পেয়েছি; বিয়ের পর যৌতুকের জন্য ওদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। এর চেয়ে বেশি স্বাধীনতা কি পৃথিবীর কোনো দেশে মানুষ পেয়ে থাকে(!?) আমার জানা নেই। কিন্তু আমি গর্ব(?) করে বলতে পারি, সব ধরণের জঘন্য কার্য এবং যেকোনো ধরণের গর্হিত অপরাধ করার মত স্বাধীনতা আমাদের দেশের নপুংসকরা পেয়ে থাকে।

আমাদের দেশের অপরাধীরা সব সময় নির্ভয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। এর একটি মূল কারণ হচ্ছে, যখন বড় ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত হয় তখন সাংবাদিকরা আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চায়, ‘দেশের বর্তমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন?’ আর সাথে সাথে উনি তোতা পাখির মত কিছু কন্ঠস্থ বুলি আওড়াতে থাকেন, যেমনঃ “দেশের বর্তমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো’; তার মানে হচ্ছে, বড় ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত হওয়ার পরও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না। যেহেতু, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। 
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-10-26/news/196739

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ