শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১১

তিতাস খুন হয়ে গেছে- বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আপনাদের নিকট একটি ফরিয়াদ

ট্রানজিটের বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে তিতাসের বুকে। এবার এর বিষক্রিয়া দেখুন

নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ হ্রাস।
নদী আর নদী নেই , হয়ে গেছে খাল।
নদীর কোনো প্রবাহমান স্রোত থাকবেনা।
দুই পাশের পানির উচ্চতার তারতম্য হবে।
মৎস্য চাষে ব্যাগাত ঘটবে, মানুষ হবে কর্মহীন।
নৌ চলাচলে ব্যাপক ক্ষতি।যোগাযোগ ব্যবস্থার ভয়াবহ পরিণতি।
নদীর এক পাশে জলাবদ্ধতা আর অন্য পাশে সেচের জলের অভাব।
কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হবে, ফল্য শস্য উৎপাদন কমবে।
প্রকৃতির নিজস্ব ভারসাম্যহীন্যতা তৈরি হবে। 

কেন করা হলো- লাভ কার।
ভারতের ত্রিপুরার পালাটানায় ৭২৬ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন হবে।
ভারী ভারী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রায় ১০০ টি মতো দানবাকৃতি কার্গোর মাধ্যমে তা নিয়ে যাওয়া হবে পশ্চিমবাংলার রায়মংগল থেকে ভারতের ত্রিপুরায়।
যাত্রাপথ হবে সাতক্ষীরা হয়ে আশুগন্জ হয়ে তারপর ত্রিপুরা।
কোনো প্রকার ট্রানজিট ফি নেই। 
তিতাস নদীর ওপর যে ব্রীজ রয়েছে তা লরি চলাচলের উপযোগি নয়। কিন্তু তাই বলে তো বন্ধুত্ব হত্যা করা যায়না। তাই নদী খুন করা হলো ।
প্রতিটি লরির ওজন প্রায় ৩২৫ টন এবং ১২০ ফুট লম্বা। 

লাভ : এগুলো এবার দানবের মতো মহা উল্লাসে তিতাসকে ধর্ষন করে ভারতের অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালাবে। আর এ দেশেরই সন্তান অন্ধকারেই পিদিম জ্বালিয়ে তিতাসের ইতিহাস পড়বে।

কোন চুক্তির মাধ্যমে করা হলোঃ
৩০ শে নভেম্বর ২০১০ সালে সম্পাদিত ভারত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন চুক্তি। আর ১৯৭২ সালের চুক্তি অনুসারে কোন ট্রানজিট ফি বাংলাদেশকে দিতে হবে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্টানঃ এবিসি-ভারতের আসাম বেংগল কেরিয়ার আর তাদের পার্টনার ভারতের পা চাটা দালাল এজেন্ট বাংলাদেশের গালফ ওরিয়েন্ট কোম্পানি।

কোথায় বাঁধ দেয়া হয়েছেঃ আখাউড়া পৌরসভার কড্ডা নামক স্থানে । এখানে রয়েছে একটি সড়ক ব্রীজ ও রেল ব্রিজ। ঠিক এ দুটো ব্রীজের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে এ রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।পৃথিবীর ইতিহাসে এভাবে নদী হত্যার মতো অভিশপ্ত কীর্তি হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। 

ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাঃ রামরাইল, সুলতানপুর , কড্ডা, পইরতাল, আমরা ঘাটুরা,আব্দুল্লাহপুরু, কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর ইত্যাদী গ্রামের হাজারো অধিবাসি। এ সকল মানুষের মতে ইহা ওদের ভাগ্যকে লরির নীচে পিষে ফেলার সমান। তিতাস নদীর ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা জেলেদের মতে বিগত মৌসুমে তারা তিন লাখ টাকার মাছ ধরতে পারলেও এবার ৩০ হাজার টাকার মাছও ধরতে পারেন নি।
আর কৃষকেরা সেচের পানির অভাবে আবাদি ভূমি শুকিয়ে যাওয়ার আগে নিজেদের কলিজাও বিরান হয়ে যাচ্ছে। 
আপনাদের কাছে ফরীয়াদঃ
ভাই/বোনেরা, আজকে সব কিছু বাদ দেন। হয়তো আমরা আওয়ামীলীগ করি, বিএনপি করি।কেউ আস্তিক কেউ নাস্তিক। কেউ প্রগতিবাদি, কেউ সুশীল। কেউ হিন্দু,কেউ বৌদ্ধ, খ্রীস্টান কিংবা মুসলমান। কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা সবাই এক মায়ের সন্তান।
ভাইয়ে ভাইয়ে যতই মারামারি হোক, দলাদলি হোক, লাঠালাঠি হোক। কিন্তু মায়ের জীবন যখন বিপন্ন। নদী যেখানে মৃত্যুর মুখে। কৃষকের বুক যেখানে বিরান হয়ে যাচ্ছে , জেলে যেখানে হাহাকার করছে সেখানে আমাদের একি প্লাটফর্মে আসতে হবেরে ভাই। মায়ের আঁচল আর দেশের পতাকার চেয়ে গৌরবের আর কিছুই নাই।

তাই আসুন একবার মরীয়া হয়ে আওয়াজ তুলি। বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে যাই।
আমার বিশ্বাস ,আমি বুকের মাঝখান থেকে শুনতে পাই আজ যদি ৫২ এর সালাম , বরকত, রফিক, শফিক জব্বার বেঁচে থাকতো, যদি ফিরে আসতো সেই রক্তাক্ত লাল শার্ট পরা ৬৯ এর আসাদ, ৭১ এর অুকুতোভয় মহান বীরেরা যদি আজ থাকতেন, যদি থাকতেন ভাসানী তবে এই বাঁধ আজ বালির বাঁধের ন্যায় ভেসে যেতো রক্তের স্রোত ধারায়। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ