মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১

ঢাবি ‘গ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা : এবার ১০টি প্রশ্নে ভুল : প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ


প্রশ্নপত্রে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে ২৫টি প্রশ্ন ছিল। এর মধ্যে ৮টিতে ভুল পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়—১ নম্বর সেটের অ্যাকাউন্টিং অংশের ৩ নম্বর প্রশ্ন ছিল : একটি হিসাবকালে নিট বিক্রয়ের পরিমাণ ৭,৮০,০০ টাকা, মোট লাভের হার ৪০%, নিট লাভের হার ২৫%। ওই হিসাবকালের ব্যবসায়ের পরিচালন খরচ কত? এমসিকিউ পদ্ধতিতে উত্তর করার ক্ষেত্রে ৫টি অপশন ছিল : (অ) ৩,১২,০০০ টাকা, (ই) ১,১৭,০০০ টাকা, (ঈ) ১,৯৫.০০০ টাকা, (উ) ৫,০৭,০০০ টাকা, (ঊ) ৪,২৯,০০০ টাকা। তবে প্রশ্ন অনুযায়ী এর কোনোটিই সঠিক ছিল না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক উত্তর হওয়ার কথা ছিল ১১,৭০০ টাকা। 
৩ নম্বর প্রশ্ন : চলতি দায় পরিশোধ করার ক্ষমতা কোনটি দিয়ে পরিমাপ করা যায়? লেখক কিশোওয়েনারের অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে মৌলিক বই অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তরের অ, ই ও ঈ তিনটি উত্তরই সঠিক। অর্থাত্ প্রশ্নে একক কোনো উত্তর ছিল না। 
৯ নম্বর প্রশ্ন : ইতঃপূর্বে অপলোপিত একটি কুঋণ থেকে যখন অপ্রত্যাশিতভাবে নগদ পাওয়া যায়, তখন (অ) দেনাদার একই থাকে, (ই) দেনাদার কমে, (ঈ) খরচ বাড়ে, (উ) নগদ একই থাকে, (ঊ) বিক্রয় বাট্টা বাড়ে। তবে এসব উত্তরের কোনোটিই সঠিক ছিল না। সঠিক উত্তর হওয়ার কথা ছিল : নগদ বাড়ে। 
১৩ নম্বর প্রশ্ন : চলতি নয়—এমন সম্পত্তির উপর বাত্সরিক অবচিতি ধার্য করার ভিত্তিমূল্য হলো (অ) সম্পত্তির ক্রয় মূল্য, (ই) সম্পত্তির পুনঃস্থাপন মূল্য, (ঈ) সম্পত্তির আদায়যোগ্য মূল্য, (উ) সম্পত্তি কেনার সময় পরিশোধিত অথবা পরিশোধের জন্য দায়ের পরিমাণ, (ঊ) সম্পত্তিটি যে উদ্দেশ্যে কেনা হয়েছে—তার জন্য মোট ত্যাগকৃত সম্পদ। প্রশ্নের এসব উত্তরের মধ্যে উ ও ঊ—এ দুটি উত্তরই সঠিক ছিল। 
১৫ নম্বর প্রশ্ন : কালান্তিক মজুদ পদ্ধতি ব্যবহার করে—এমন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের রেওয়ামিলে কোন হিসাবটি পাওয়া যাবে না? এ প্রশ্নে কোন ধরনের রেওয়ামিল—তা উল্লেখ ছিল না। আর এ কারণে সঠিক উত্তর নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। 
১৬ নম্বর প্রশ্ন : অর্থসংস্থান বিল লেখা হয় (অ) দেনাদারের প্রাপ্য মেটানোর জন্য, (ই) মূল্যবান প্রতিদানের বিপরীতে অর্থ উত্তোলনের জন্য, (ঈ) ধারে ব্যবসায় করার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য, (উ) কোনো প্রতিদান ছাড়া অর্থ উত্তোলনের জন্য, (ঊ) মেয়াদান্ত পর্যন্ত ধরে রাখার জন্য। তবে এর মধ্যে কোনোটিই সঠিক উত্তর নয়। 
২১ নম্বর প্রশ্ন : বোনাস শেয়ার প্রদান করা হলে শেয়ারহোল্ডারদের স্বত্বে দেখানো হয়। এ প্রশ্নটির গঠনগত ত্রুটি ছিল। শুদ্ধ প্রশ্ন হওয়ার কথা ছিল—বোনাস শেয়ার প্রদান করা হলে শেয়ারহোল্ডারদের স্বত্বে গঠন দেখানো হয়। প্রশ্নে ত্রুটি থাকায় সঠিক উত্তর নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। 
২২ নম্বর প্রশ্ন : হিসাব তত্ত্বের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী কে? এ প্রশ্নটিও শুদ্ধ ছিল না। শুদ্ধ প্রশ্ন হওয়ার কথা ছিল—হিসাব তথ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী কে? তাই প্রশ্নে ত্রুটি থাকায় সঠিক উত্তর নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। 
প্রিন্সিপাল অব বিজনেস বিষয়ে ২৫টি প্রশ্নের মধ্যে দুটি প্রশ্নে ভুল পাওয়া গেছে। ৩ নম্বর সেটের ৬ নম্বর প্রশ্ন : কোন মন্ত্রণালয় বীমা ব্যবসায় পরিচালনা করে? মূলত এ প্রশ্নটি গঠনে ত্রুটি ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মন্ত্রণালয় বীমা ব্যবসা পরিচালনা করে না। মন্ত্রণালয় বীমা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। শুদ্ধ প্রশ্ন হবে—কোন মন্ত্রণালয় বীমা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে? 
৯ নম্বর প্রশ্ন ছিল : ব্যবস্থাপনার জনক কে? (অ) হেনরি মিন্জবার্গ, (ই) এফডব্লিউ টেলর, (ঈ) ডগলার ম্যাকগ্রেগর, (উ) হেনরি ফেয়ল, (ঊ) ম্যাক্স ওয়েবারম। মূলত এ প্রশ্নটিও শুদ্ধ ছিল না। বিশেষজ্ঞদের দেয়া মতামত অনুযায়ী প্রশ্নে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক চাওয়া হলে উত্তর হতো (উ) হেনরি ফেয়ল। আর বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক চাওয়া হলে উত্তর হতো (ই) এফডব্লিউ টেলর। 
বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা আরও বলেছেন, অনেক আগ থেকে ‘গ’ ইউনিটের প্রশ্ন ও উত্তর বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভার্সন ছিল। এবার শুধু বাংলা ভার্সনে প্রশ্ন হয়। এতে ভর্তিচ্ছুদের উত্তর নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। 
ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস : ডিজিটাল পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস করে একটি চক্র জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। চক্রের ১৩ ছাত্র ওই জালিয়াতির মাধ্যমে মেধা তালিকার প্রথম সারিতে স্থান করে নেয়। মোবাইলে এসএমএসে জালিয়াতি করার সময় শেখ বোরহানুদ্দিন কলেজ থেকে এক শিক্ষার্থীকে আটকও করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ইডেন কলেজ কেন্দ্র থেকে এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন জব্দ ও পরীক্ষা বাতিল করা হয়। অথচ এদের অনেকেই প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণই হতে পারেনি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষার সময় ইডেন কলেজ, শেখ বোরহানুদ্দিন কলেজসহ আরও কয়েকটি কেন্দ্রে ডিজিটাল জালিয়াতি হয়। এর সঙ্গে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের ক’জন শিক্ষকও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 
সূত্র জানায়, ইডেন কলেজ কেন্দ্রের ভবন-২-এর ২২৬ ও ৩০৪ নম্বর কক্ষের বেশ কয়েক শিক্ষার্থীর জালিয়াতির মাধ্যমে মেধা তালিকায় স্থান পায়। এই কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর অর্থাত্ ৩টার দিকে কলেজ গেটের দারোয়ানকে দিয়ে চারটি মোবাইল সেট ওইসব কক্ষে পৌঁছে দেয় সিন্ডিকেট চক্র। এজন্য দারোয়ানকে নগদ অর্থ উেকাচ দেয়া হয়। প্রশ্নের সেট অনুযায়ী ওই সেটে সব প্রশ্নের উত্তর ছিল। ২২৬ নম্বর কক্ষে ৩২৬৩৫৭ নম্বর রোলধারী মোবাইল ফোন থেকে উত্তরপত্রে উত্তর করছিল। এসময় কক্ষে থাকা পরিদর্শক ওই মোবাইল সেটটি জব্দ করে তার পরীক্ষা বাতিল করেন। সূত্র জানায়, এসময় ৩০৪ নম্বর কক্ষে একই সিন্ডিকেটের ৩২৬৩৩৬সহ একাধিক জালিয়াতি করা শিক্ষার্থী বাইরে থেকে আসা মোবাইল সেটে পাওয়া উত্তর থেকে উত্তরপত্র পূরণ করে পরীক্ষা দেয়। সন্দেহ করা হয়, ওই চক্রে ৩২৬৩৭৫ রোলধারীও ওই জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। তবে তাদের শনাক্ত করতে পারেননি কক্ষ পরিদর্শকরা। পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, ৩২৬৩৩৬ রোল নম্বরধারী মেধা তালিকায় ১৫তম এবং ৩২৬৩৭৫ রোল নম্বরধারী ৭ম স্থান অধিকার করে। এরা দুজনেই পরীক্ষা যথাক্রমে ৯১ দশমিক ২০ এবং ৮৯ দশমিক ২৮ নম্বর পেয়েছে। এর মধ্যে ৩২৬৩৭৫ নম্বর রোলধারী প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছিল। সূত্র জানায়, পরীক্ষার আগ মুহূর্তে প্রশ্ন পেয়ে খুব দ্রুত তার উত্তর মোবাইল ফোনে তা পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেয় চক্রটি। এ চক্রের কাছ থেকে অন্তত ১৩ জন সুবিধা নিয়েছে এবং মেধা তালিকায় তারা ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে সূত্র জানায়। 
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক দায় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, পরীক্ষা কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন প্রো-ভিসি। তিনিই এর জবাব দিতে পারবেন। তবে প্রো-ভিসি হারুন অর রশীদ প্রশ্নে ভুলের বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখছেন। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্রে দু’একটা যে টাইপিং ভুল হয়—তা ফল প্রকাশের আগেই বিবেচনায় আনা হয় এবং সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সমন্বয় করে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবারের ফল প্রকাশ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। অন্তত ১০টি প্রশ্নে ভুলের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। ডিজিটাল জালিয়াতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ নিয়ে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, তা তদন্ত করা হচ্ছে। 
প্রসঙ্গত, প্রথমবার ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ অক্টোবর ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। প্রশ্ন ও প্রশ্নের উত্তরপত্রে একাধিক ভুলের কারণে ওই ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল। এরপর বিষয়টি আদালতে গড়ালে আদালতের এক নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ২০ ডিসেম্বর ফের ভর্তি পরীক্ষা নেয় কর্তৃপক্ষ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ