সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১১

বগুড়ায় ঘরে আবদ্ধ মা ও দুই ছেলেকে ১০ বছর পর উদ্ধার


১০ বছর এক ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় ছিল মা ও দুই ছেলে। বাইরের আলো-বাতাস থেকে তারা ছিল বঞ্চিত। অবশেষে এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছে। তবে দুই ছেলে হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে চাইলেও মা এ সেবা নিতে রাজি নন। তাই তাকে ওই বাড়িতেই চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি ঘটেছে বগুড়া শহরের মালতিনগরের চানমারি ঘাট এলাকায়। চিকিত্সকরা বলছেন তারা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। যথাযথ চিকিত্সা পেলে সুস্থ হয়ে উঠবে তারা।
এলাকাবাসী জানায়, ওই এলাকার আবদুল লতিফ মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫০), দুই ছেলে ফজলুল করিম মানিক (৩২) ও নুুরুন্নবী রতন (২৮) দীর্ঘদিন বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় তারা ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা গতকাল তাদের উদ্ধার করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাড়ির গৃহকর্তা হয়তো বা তাদের ঘরে জোর করে আটকে রেখেছে। ফলে তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
আবদ্ধ অবস্থায় মানিক ও রতনের মুখে দাড়ি-গোঁফ ও মাথার চুল লম্বা এবং শরীর রোগাটে হয়ে গেছে। মা ফাতেমা বেগমেরও একই অবস্থা। বাড়ির বাইরে কেউ আসতে চাচ্ছে না। ছবি তুলতে গেলে মারতে উদ্যত হচ্ছে তারা। কথার উত্তর না দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকছে তারা। এক প্রকার জোর করে তাদের বাড়ির বাইরে নেয়া হয়।
বনানী পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই মিজানুর রহমান জানান, ফাতেমা বেগম মানসিক রোগী হওয়ায় ঘরে আবদ্ধ থাকতেন। এ অবস্থায় ছোট ছেলে নুরুন্নবী রতনের পায়ে ১৯৯৯ সালে গজাল বিঁধলে তাকে এক কবিরাজের কাছে চিকিত্সা করানো হয়। কবিরাজ তাকে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেন। এমনকি পানিও না খেতে উপদেশ দেন। এ কারণে সে ঘর থেকে বের হয় না, পানিও খায় না। তার বাবা মাঝে-মধ্যে এক প্রকার জোর করে জুস খাওয়াতেন। এমতাবস্থায় ২০০৫ সালে এ ঘটনাটি প্রকাশিত হলে মানুষ পাগল বলে ডাকতে পারে এ আশঙ্কা থেকে বড় ছেলে ফজলুল করিম মানিকও ঘর থেকে আর বের হয় না। তখন থেকেই মা ও দুই ছেলে ঘরের মধ্যে জীবনযাপন করতে থাকে।
আবদুল লতিফ জানান, ফুড অফিসে চাকরি করতেন তিনি। বছর কয়েক আগে অবসরে গেছেন। বাড়ি সারিয়াকান্দিতে, পরে চানমারি ঘাট এলাকায় জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন। স্ত্রী ফাতেমা বেগম আগে থেকেই একটু মানসিক রোগে ভুগছিলেন। ছোট ছেলে রতনের পায়ে গজাল (লোহা) ঢুকলে কবিরাজের কথামত সে ঘরে আবদ্ধ থাকে। বড় ছেলে মানিক লোকলজ্জার ভয়ে পাগল বলে ডাকা থেকে রেহাই পেতে সেও ঘরে আবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাদের কেউ জোর করে ঘরে আবদ্ধ রাখেনি বলে লতিফ জানান।
সদর থানার ওসি একেএম খালেকুজ্জামান জানান, তাদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ