শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১১

আনুষ্ঠানিক টেলিট্রানজিট পাচ্ছে ভারত টেলিকম খাতে অনিয়ম

আনুষ্ঠানিকভাবে টেলিট্রানজিট পেতে যাচ্ছে ভারত। বাংলাদেশ বিটিআরসি যে ছয়টি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলের লাইসেন্স দেবে বলে চূড়ান্ত করেছে, এতে তারা অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের মাধ্যমে ভারতের টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সাথে সংযুক্ত হয়ে বিকল্প ব্যবস'ায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস'ার সাথে যুক্ত করতে পারবে। এ জন্য ইতোমধ্যে লাইসেন্স পেতে চূড়ান্ত করা হয়েছে এমন সব প্রতিষ্ঠান সমঝোতা চুক্তি সই করেছে। এর অন্যতম সামিট কমিউনিকেশন্স। তারা ব্যান্ডউইথ কেনা ও সংযুক্তির জন্য ভারতের টাটা ও এয়ারটেলের সাথে সমঝোতা চুক্তি সই করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ আল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ভারতের এয়ারটেল ও টাটার সাথে সমঝোতা চুক্তি সই করেছি। আশা করছি লাইসেন্স পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়েই সেবা দিতে পারব। প্রথম দিকে তারা বেনাপোলে ল্যান্ডিং স্টেশন করবেন বলে জানিয়েছেন।
ভারত সঞ্চার নিগমের সাথে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের সাথে এখনই একটি টেরিস্ট্রিয়াল ফাইবার লিঙ্ক রয়েছে। সেখানে বেসরকারি উদ্যোগে এসব লিঙ্ক দেশের নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
নিয়ম ভেঙে ছয়টি কোম্পানিকে ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে এখানে কোনো রকমের অনিয়ম হয়নি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এটি সহায়ক হবে।
তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের দাবি- মূলত এর মধ্য দিয়েই ভারত টেলিট্রানজিটের সূচনা করছে। এ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বরের একটি প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ওই প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দুই দেশের মধ্যকার টেলিট্রানজিট হতে যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএসএনএল বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা ভারতের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলকে বহির্বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করতে চায়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ দিন ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় তারবিহীন দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা ওয়াইম্যাক্স উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএসএনএলের জিএম দেবকুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা এ বিষয়ে আগরতলা থেকে বাংলাদেশের সীমান- শহর আখাউড়া পর্যন- জরিপের কাজ সম্পন্ন করেছি। এখন চট্টগ্রাম থেকে আশুগঞ্জ পর্যন- বাংলাদেশের অপটিক্যাল ফাইবার লিঙ্কের মাঠপর্যায়ের সামগ্রিক অবস'া মূল্যায়ন চলছে। এ কাজ চলতি বছরই শেষ হবে। এরপর আমরা সরকারের কাছে আমাদের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিবেদন দেবো। কাজ শুরু করব ঢাকা ও দিল্লি থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি পাওয়ার পর।
সূত্র মতে, ভারতের সাথে বাংলাদেশের অপটিক্যাল ফাইবারে সংযুক্ত হওয়ার জন্য সর্বশেষ অনুমতি দেয়ার আগে চারবার আপত্তি জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিটিসিএল ব্যবস'াপনা পরিচালক জানিয়েছেন, এটি হবে ২৪ কোরের সমন্বিত একটি ফাইবার। এটা আপাতত নিজেদের ব্যাকআপ এবং একই সাথে ভারতের সাথে কম মূল্যে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, ভারতের সাথে ফাইবার অপটিক্যাল লিঙ্কে যুক্ত হতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড বিটিসিএল এবং ভারতের সরকারি মালিকানাধীন ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড একটি চুক্তি করে গেল বছরের ৯ নভেম্বর।
বিটিসিএল এমডি বলেছেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিডিআর)সহ বিভিন্নপর্যায়ের মতামত সংগ্রহ করে এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত বাংলাদেশের অপটিক্যাল ফাইবারে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে অনাপত্তি দিয়েছে।
আপাতত বিএসএনএল’র সাথে চুক্তি হলেও ভারতের ভেতরে বাংলাদেশ ফাইবার অপটিক সংযোগ দেয়ানেয়া, ব্যাকআপ তৈরির জন্য ভারতীয় এয়ারটেলের নিজস্ব ক্যাবল কোম্পানি আইটুআই’র সাথে যুক্ত হবে। বাংলাদেশে ভারতীয় এয়ারটেলের ব্যবসায় রয়েছে। তারা ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়ে ব্যবসায় করছে। ভারত সরকার চাইছে তাদের আইটুআইয়ের সাথে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল লিঙ্কে সংযুক্তির মাধ্যমে সেভেন সিস্টারভুক্ত রাজ্যগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে টেলি ও ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য।
এ দিকে বিটিসিএল’র একজন পরিচালক বলেছেন, ভারতের সাথে ফাইবার অপটিক্যাল লিঙ্কে যুক্ত হওয়ার কারণে তা মূলত বাংলাদেশের দুর্যোগকালীন ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করবে। এর বাইরে আর অন্য কোনো কাজ নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ