শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১১

আরেকটি পৃথিবীর সন্ধান পেয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা


দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম ডেস্ক
পৃথিবীর মত আর একটি গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। ছয়শ’ আলোকবর্ষ দূরে কেপলার-২২বি নামের গ্রহটি পৃথিবীর মতই বাসযোগ্য বলে ধারণা করছেন তারা। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অনুসন্ধান গবেষণায় কেপলার- ২২বি’র আবিষ্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গত সোমবার নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ পরিচালনার সাথে জড়িত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহটি আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমেই গ্রহটির সন্ধান পান তারা। আর তাদের এই গবেষণা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ প্রকাশিত হতে চলেছে শিগগিরই। আমাদের সৌরজগতের বাইরে বিভিন্ন নক্ষত্রকে ঘিরে প্রদক্ষিণরত ৬শ’রও বেশি গ্রহ এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেছে। এ গ্রহগুলোর মধ্যে উপরিপৃষ্ঠে তরল পানি থাকার মত সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে কেপলার-২২বি গ্রহটি। তরল পানির উপস্থিতি প্রাণ সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে জরুরি। আয়তনে গ্রহটি পৃথিবীর ২ দশমিক ৪ গুণ বড় ও এর গড় তাপমাত্রা প্রায় ২২ সেন্টিগ্রেড, যা পৃথিবীর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের বসন্তকালের তাপমাত্রার মতই। সূর্যের মতোই একটা নক্ষত্রকে ঘিরে অনেক দিন ধরে ঘুরে চলেছে এটি। ঐ গ্রহের এ তাপমাত্রা সেখানে পৃথিবীর মতো প্রাণপ্রাচুর্যের সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে। আমাদের সৌরজগতে পৃথিবীর অবস্থান সূর্য থেকে যে দূরত্বে কেপলার-২২বি গ্রহটি তার সূর্য থেকে এর মাত্র ১৫ শতাংশ কম দূরত্বে অবস্থান করছে। সৌরজগতে পৃথিবীর অবস্থানের এলাকাটি ‘বাসযোগ্য অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত। কেপলার-২২বি’র অবস্থানও তার সৌরজগতের বাসযোগ্য অঞ্চলে। গ্রহটি তার সূর্যকে প্রদক্ষিণে ২৯০ দিন সময় নেয়। গ্রহটির আবিষ্কারক দলের সদস্য নাটালিয়া বাটালহা বলেন, আমরা পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য একটি গ্রহ খুঁজে পেয়েছি। বাটালহা যুক্তরাষ্ট্রের সান জোন্স রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। কেপলার- ২২বি গ্রহটি পৃথিবীর মত কঠিন না নেপচুনের মতো গ্যাসীয় তা এখনো জানা না গেলেও বিষয়টি নিয়ে গবেষণা অব্যাহত আছে। কেপলার-২২বি’ গ্রহটিতে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এর আগেও একাধিকবার ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক নতুন গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে। তাতে প্রাণ থাকার সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু পরে তা নিয়ে আর কোন কথা শোনা যায়নি। এবারে তাই কোনও বিতর্কের অবকাশ রাখতে চাইছে না নাসা। রীতিমতো আটঘাট বেঁধে আসরে নেমেছে তারা। নাসার তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত বছর গ্রহটির প্রথম অস্তিত্ব টের পায় অতি আধুনিক কেপলার দূরবীক্ষণ। আর কেপলারের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিতেই গ্রহটির নাম রাখা হয়েছে কেপলারের নামে। ২০০৯-এর মার্চে প্রায় ৬০ কোটি ডলারের একটি বিশেষ উপগ্রহের সাহায্যে কেপলারকে মহাকাশে পাঠিয়েছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। উদ্দেশ্য পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে প্রাণের সন্ধান করা। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের ছায়াপথে ঘূর্ণায়মান বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সেখানে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ আছে কিনা, তাপমাত্রা খুব ঠান্ডা না খুব গরম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও ছবি পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে। নাসার দাবি, ২০০৯-এর মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৯৪টি নতুন গ্রহের সন্ধান দিয়েছে কেপলার। এদের মধ্যে অন্তত ৪৮টি গ্রহে প্রাণ থাকার পরিবেশ আছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তাহলে নতুন আবিষ্কৃত গ্রহ ‘কেপলার-২২বি’ নিয়ে এত উত্সাহ কেন? নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গ্রহটির অবস্থান আর বাইরের পৃষ্ঠের উষ্ণতা ওই ‘কেপলার-২২বি’-কে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। পৃথিবী থেকে সূর্যের যা দূরত্ব অনেকটা সে রকমই দূরত্ব ‘কেপলার-২২বি’ আর সেটি যে নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে তার মধ্যে। ওই নক্ষত্রটিকে ঘিরে পুরে এক পাক ঘুরতে গ্রহটির সময় লাগে ২৯০ দিন যা অনেকটাই পৃথিবীর কাছাকাছি। ‘কেপলার-২২বি’ এর বাইরের পৃষ্ঠের উষ্ণতা আনুমানিক ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইট! পৃথিবীর সঙ্গে এত সাদৃশ্য থাকায় শুধু জল বা বায়ুমণ্ডল নয় সেই সঙ্গে গ্রহটিতে প্রাণ থাকারও সম্ভাবনা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী বিজ্ঞানীমহল। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ