শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১১

দৃষ্টান্ত

জনসেবা করার জন্যই জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারছিলেন না তিনি। এ নিয়ে দুঃখবোধ, হতাশা ও ক্ষোভ থেকে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন তিনি।
আত্মহননকারী এই জনপ্রতিনিধির নাম খগেন্দ্রনাথ মণ্ডল (৩৮)। তিনি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার ট্যাংরামারী গ্রামের একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
কালীগঞ্জ উপজেলা দুর্নীতিবিরোধী কমিটির সভাপতি ট্যাংরামারী গ্রামের বাসিন্দা শেখ আবদুর রউফ বলেন, ‘খগেন্দ্রনাথ এলাকায় খুব জনপ্রিয় ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।’ তিনি জানান, খগেন্দ্রনাথ সরাসরি কোনো দলের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
খগেন্দ্রনাথের ছেলে রতন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে তাঁর বাবা এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর সীমাবদ্ধতা ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে জনপ্রত্যাশা পূরণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। এ অবস্থায় শুক্রবার গভীর রাতে তিনি বাড়ির পেছনের একটি গাছের ডালে দড়ি বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। চিরকুটটি খগেন্দ্রনাথের লেখা বলে ছেলে রতন মণ্ডল নিশ্চিত করেন।
খগেন্দ্রনাথের স্ত্রী হেমলতা মণ্ডল বলেন, এলাকার মানুষের জন্য আশানুরূপ কাজ করতে পারছিলেন না বলে কয়েক দিন ধরে তিনি হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন।
খগেন্দ্রনাথের ছোট ভাই সুখেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, তাঁর ভাইয়ের জামার পকেটে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘সেবা করার জন্য জনগণ আমাকে ভোটে নির্বাচিত করেছিল। অথচ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। এ জন্য আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলাম। আমার মৃত্যুর জন্য আমার পরিবারের সদস্য বা অন্য কেউ দায়ী নয়।’
রতনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিরকুটটি আমি দেখেছি। এটি খগেন্দ্রনাথেরই লেখা। খুব আবেগপ্রবণ লোক ছিলেন তিনি। কিন্তু আত্মহত্যা কেন করলেন তা বুঝতে পারছি না।’
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ফরিদউদ্দিন মৃতের জামার পকেট থেকে একটি চিরকুট উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেন। খগেন্দ্রনাথ আত্মহত্যা করেছেন বলে সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ওসি জানান, ময়নাতদন্তের পর খগেন্দ্রনাথের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় সুখেন্দ্রনাথ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ