সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১১

বিকল্পের খোঁজে



সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু। সেই ঘরটি টেকসই হোক। সবাই চায় সেটা। তাই আজকাল মাটি, বাঁশ, টিন, কাঠ ছেড়ে মানুষ বেশী ঝুঁকেছে ইটের দিকে। শুধু শহরে নয় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দ্রুতবেগে বেড়ে উঠছে পাকা ইটের দালান। মসজিদ, মন্দির, গীর্জাই শুধু নয়। বসত ভিটার ঘর, মার্কেট, কারখানা থেকে শুরু করে বিশাল সাইজের সরকারী হাসপাতাল, প্রশাসনিক কার্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কবরস্তান। কী না নির্মাণ হচ্ছে ইট দিয়ে? সুতরাং ইটের চাহিদা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এটা দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ মাত্রই বোঝেন। তবে যে বিষয়টি শেয়ার করতে আজকের এ লেখার শুরু সেটা হচ্ছে সাধারণ জনতার দ্বিধার জায়গাটা শনাক্ত করা। এর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা।

ঘর তৈরি করব, ইট আমার চাইই চাই। তা সেটা যত চড়া দামেই হোক না কেন। এটা যেমন সবার ক্ষেত্রে সঠিক। আবার সেই সাথে পরিবেশ দূষণ বাড়িয়ে আমারই জমি, ফসল, খাল-বিল আর শ্বাসের বাতাসে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে ইটের ভাটা। এর জন্য আমি মানব বন্ধন করছি। লিখছি প্রচুর, খাটছি খুব। ফল হচ্ছে অতি অল্প। সংবাদপত্রের নিউজ, টিভি নিউজ দেখে পরিবেশবিদেরা যাচ্ছেন ইটের ভাটায়। তারা সতর্ক করছেন ইট ভাটা মালিকদের। তাদের সতর্কতা মেনে চলছে ইট ভাটা। অনিয়ম হলেই গুনতে হচ্ছে জরিমানা। জরিমানার ক্ষতি পুষতে ভাটা মালিক বিক্রীর সময় ইটের দাম ধরছেন বেশী। বাড়তি টাকা দিয়েই বাধ্য হয়ে ইট কিনে ঘর বাঁধছে মানুষ। কিন্ত জনগণের লাভ কী হচ্ছে? যে জনগণ দূষণের শিকার, তারাই আবার বাড়তি টাকায় ইট কিনছে। একই সমস্যা হচ্ছে চাঁদাবাজির বেলাতেও। আগের দিনে ইটভাটায় গাছের গুড়ি, কাঠের চেলার ট্রাক ছুটে চলেছে আর পথে পথে হয়েছে চাঁদাবাজি। কার কাঠ, কে কিনেছে, কোথায় যাচ্ছে এসবের বালাই নেই। ট্রাক আটকালেই চাঁদা দিতে হবে। এই ঘাটতিও মেটাতে হয়েছে ভাটার মালিককে। বর্তমান সময়ে কয়লা আর গ্যাসে ইট পোড়ালেও সেই আগের অভ্যাস থেকে বেড়িয়ে আসেনি চাঁদাবাজেরা। তারা এখন ভাটায় না গিয়েই মোবাইলে চাঁদা দাবী করে। নামে, বেনামে, সরাকারী দলের তল্পিবাহকের ভূমিকায় অথবা লাইসেন্সধারী চাঁদাবাজ, অনেক অনেক লোক এভাবে আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছেন নিমিষেই। বিত্তশালী, মধ্যবিত্ত কিংবা খেটে খাওয়া কুলি মজুর সবার কষ্টোর্জিত টাকাই চলে যাচ্ছে সমাজ কীটদের পকেটে।

আজ সকালে সংবাদপত্র খুললাম। কালের কন্ঠ, পাতা-২২, প্রিয় দেশ। এর নিচ দিকে দুটি পাশাপাশি সংবাদ। একটি ‘‘ফসলের মাঠে ইটখোলা! (গৌরনদীতে)’’ অপরটি ‘‘সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, ফরিদপুরে অবৈধ একটি ইটখোলা বন্ধের নির্দেশ”। প্রথম খবরে বলা হয়েছে- ‘ইট পোড়ানো শুরু হলে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ; ইটখোলার ধোঁয়া ও আগুনের তাপে ফসল বিনষ্টের শঙ্কা কৃষকদের’। দ্বিতীয় খবরে বলা হয়েছে-‘ফরিদপুর জেলা সদরে অবৈধভাবে ইটখোলা স্থাপন ও পরিচালনা করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানোর অপরাধে রবিবার মেসার্স লুৎফুন্নেসা ব্রিক্স নামের একটি ইটখোলার মালিককে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে’। এখানে তৈরি হয় আরেক সমস্যা কোন একটি ইটখোলা বন্ধ হলে সাথে সাথেই এর আশে পাশের অন্য ইটভাটার ইটের দাম যায় বেড়ে। এতে খদ্দেরকে পড়তে মহা ফ্যাসাদে। এই দামটা আবার বাড়ে চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য রক্ষার খাতিরেই। সেই সাথে অ্যাডাম স্মিথের অদৃশ্য হাতের কারসাজিতো রয়েছেই। ব্যস এবার ঠেলা সামলাও পাবলিক। নো চিন্তা, ভাটার মালিক। নো চিন্তা, সরকার। 

এখানে সমাধানের পথ খুব বেশী খোলা নেই। তবে ইটের বিকল্প ব্যবহার করতে পারলে অবস্থা ধীরে ধীরে পাল্টে যাবে বলে বিশ্বাস করা যায়। ভবন নিমার্ণে স্টিল স্ট্রাকচার ব্যবাহারে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। এতে অনেক সুবিধা। প্রয়োজনে এই স্ট্রাকচার যে কোন স্থানে সরিয়ে নেয়া যায়। এছাড়া জং ধরেনা বলে টেকসই হয়। এই স্ট্রাকচারের ফ্রেমের ওজন হয় কম। তাই বহুতল ভবনেও ভূগর্ভে চাপ সহনীয় পর্যায়ে থাকে। সেই সাথে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পে এই স্ট্রাকচারের তৈরি ভবনে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা ইটের তৈরি ভবনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের ‘হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনিস্টিটিউট, এর উদ্ভাবিত কিছু ভবন নির্মাণ উপকরণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি রয়েছে ইটের বিকল্প। যা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যের এবং টেকসই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:- বালি-সিমেন্ট হলো ব্লক, ফেরো সিমেন্ট ব্লক, প্রিস্ট্রেড প্রিকাস্ট কংক্রিট মাইক্রো পাইল, ফেরো সিমেন্ট চ্যানেল, ছাদের রাফটার, পারলিনসহ অনেকগুলো উপকরণ। আরও কয়েকটি ইটের বিকল্প উপাদান তাদের পরীক্ষাধীন রয়েছে। আশা করছি শিগগিরই আমরা আরও ভালো উপাদান পেয়ে যাব। তখন একাধারে বাঁচবে আমাদের কৃষি জমির মাটি সেই সাথে পরিবেশ থাকবে নির্মল, সুশীতল। আর আমরা তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাব। যেমনটা এখন হচ্ছে। আগে ঢাকা শহরে চলতে গেলে থ্রি স্ট্রোক ইঞ্জিন চালিত বেবী ট্যাক্সির নির্গত কালো ধোঁয়ার সিসায় চোখ জ্বালা করত। সরকার এটাকে নিষিদ্ধ করে ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট সিএনজি অটো রিক্সা চালু করল। ব্যস, এবার চোখ জ্বালা বন্ধ। নিরাপদে রাস্তায় রাস্তায় চলতে-ফিরতে পারছি। এবার তাই চাওয়া ইটের বিকল্প। যে গুলো দিয়ে তৈরি হবে ভবন। সেই সুদিনের প্রত্যাশায় চেয়ে রই সারাক্ষন। 









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ