শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১১

একাত্তরের নির্মম গণহত্যার শিকার ইসলামনগরের ৭ নিরীহ মানুষ


জ্যৈষ্ঠের রাত মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ঠাকুরগাঁও ইপিআর ক্যাম্প থেকে আসা পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর একদল সৈন্য সেই রাতে ঘেরাও করেছিল ইসলামনগর মহল্ল­াটি।এরপর সেনা অফিসার একটা তালিকা বের করে কতগুলো নাম পড়ে শোনালো। এদেরকে আগামীকাল সকাল ১০টায় মধ্যে ক্যাম্পে হাজিরা দিতে হবে। নইলে এই মহল্লার সবাইকে মেরে ফেলা হবে বলে শাসিয়ে দিল।

পরদিন সকালে গরুর গাড়িতে করে তালিকাভুক্ত ৭ জনকে ঠাকুরগাঁওয়ের ইপিআর ক্যাম্পে হাজিরা দিতে পাঠানো হলো। এদের মধ্যে খানকা শরীফের পীর সাহেব মরহুম মোঃ শামসুজ্জোহার ছোট ছেলে ও ডাঃ মোস্তফা আহম্মদের ছোট ভাই ছাত্র আহম্মদ হোসেন (১৯) এবং ঠাকুরগাঁও পৌরসভার বর্তমান মেয়র এস.এম.এ মঈন এর পিতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস.এম.এ ইসলামুল হক (৫৫) ছিলেন। আর যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন-মোঃ মাহাদি ওরফে দবিরউদ্দিন (৩২) ব্যবসায়ী, পিতা রসিয়া মোহাম্মদ, সিরাজউদ্দিন আহম্মদ (৫৫) দর্জি, পিতা জহিরউদ্দিন, ইয়াকুব হোসেন (৪৫) ব্যবসায়ী, পিতা মোঃ শরিফুল­াহ, মাজহারুল ইসলাম (৪৫) ব্যবসায়ী, পিতাঃ করিমউদ্দিন সরকার এবং মোঃ নূরুজ্জামান (৩৬) ব্যবসায়ী, পিতাঃ ইমাজউদ্দিন সরকার।

ক্যাম্পে গিয়েছিল ওরা। তারপর কী হয়েছিল কেউ জানতে পারেনি। স্বজনেরা অনেক খোঁজ করেও তাঁদের সন্ধান পায়নি। তবে পরে জানতে পারা যায়, ২৪ মে তারিখে তাদেরকে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় টাঙ্গন নদীর পুরোনো ব্রিজের কাছে এক বধ্যভূমিতে।

সেখানে আরো ৮ জনের সঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁদের। দেয়া হয় মাটি চাপা। লাশ মাটি চাপা দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দু’জনকে। এদের মধ্যে একজন ছিল ঠাকুরগাঁও রোডেরই জুতো সেলাইকারী কারিগর রামচরণ ও অন্যজন আব্দুল হাকিম। ট্রাকের চালক সি এন্ড বি’র আজিমউদ্দিনকেও লাশ মাটি চাপা দিতে বাধ্য করা হয়। রামচরণ ও ট্রাক চালক আজিমউদ্দিনই পরবর্তীতে এই পরিণতির কথা তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসীকে জানান। তারা আরো জানান, এখানে আরো ৮ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে তাদের সঙ্গেই মাটি চাপা দেয়া হয়। এই ৮ জনকে ধরে আনা হয়েছিল বালিয়াডাঙ্গী থেকে। এরা কারা এখনো তাদের পরিচয় জানা যায়নি।

নৃশংসতার স্বাক্ষরবাহী এই গণহত্যার বধ্যভূমিটিকে সংরক্ষণ করা জরুরি। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার বর্তমান মেয়র এস.এম এ মঈনের পিতাকেও এখানে অন্যদের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। তাই পৌরসভার সম্মানিত মেয়রকেই এগিয়ে আসতে হবে এই বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ ও নির্মাণের কাজে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ