শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১১

রেডি পুলেট:লেয়ার খামারিদের আশার আলো


একদিন থেকে ১৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পালনকৃত একটি মুরগির বাচ্চাকে পুলেট বলে। এ পুলেট অবশ্যই লেয়ার (ডিম উত্পাদনের জন্য ব্যবহূত) এর জন্য ব্যবহার করা হয়। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত একজন লেয়ার খামারি ব্যবহার করত একদিনের মুরগির বাচ্চা। এ জন্য ডিম উত্পাদনের জন্য অপেক্ষা করতে হত ১৮ সপ্তাহ। কিন্তু ডিম উত্পাদনের জন্য এ দীর্ঘ সময় খামারিদের যদি না লাগত অথবা অন্য কোনো উপায়ে একদিনের বাচ্চাটিকে যদি ১৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পালন করা সম্ভব হত এবং সেই পালনকৃত বাচ্চাটি ১৮ সপ্তাহ পর পুলেট হয়ে খামারিদের হাতে পৌঁছাত তবে অনেক লাভবান হত খামারিরা। প্রযুক্তি ও অধিক ডিম উত্পাদনের এমন সুযোগও তৈরি হয়েছে উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশেও। বাজারে আসতে শুরু করেছে ১৮ সপ্তাহ বয়সের রেডি পুলেট, যা লেয়ার খামারিদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনাও বটে। বয়ে আনতে পারে ডিম উত্পাদনের সুখবর।

দেশে ডিম উত্পাদনের জন্য একদিনের বাচ্চা পালন করে লেয়ার তৈরি করা হয়। এ লেয়ার তৈরিতে ১৮ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হয়। একজন খামারি একদিনের বাচ্চাকে লেয়ারে পরিণত করে ঠিকই, কিন্তু তা কতটুকু বিজ্ঞানসম্মত ও কাংখিত উত্পাদনে সহায়ক তা প্রশ্নের বিষয়। কয়েকজন খামারির সাথে সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, পুলেট তৈরি করতে তারা বিভিন্ন কোম্পানির বাচ্চা ও খাদ্য ব্যবহার করে থাকেন। কোম্পানি থেকে খাবার প্রদানের তালিকা প্রদান করা হলেও তা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সুনির্দিষ্টভাবে করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন মানের খাদ্য রয়েছে যা কতটুকু পুষ্টির যোগান দিতে পারে সেটিও দেখার বিষয়। অন্যদিকে ভ্যাকসিন ও মেডিসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা সমস্যা। কখনওবা সময়মত প্রদান করা হয় না ভ্যাকসিন। দক্ষ ভ্যাকসিন দেওয়ার জনবলেরও সমস্যা রয়েছে। ভ্যাকসিন ও মেডিসিন সরবরাহের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে কোল্ড চেইন মেইনটেইনে। পরিমাণমত পানিও সঠিক সময়ে প্রদান করা সম্ভব হয় না। সবচেয়ে বড় বিষয় হল আলোক (লাইটিং প্রোগ্রাম) ব্যবস্থাপনা। লেয়ার তৈরিতে লাইটিং প্রোগ্রাম সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ডিম পাড়ার জন্য সময়মত লাইটিং না দিলে রিপ্রোডাকটিভ অর্গানের পরিপূর্ণতা আসে না। ফলে খোলা বা অর্ধেক খোলা হাউজে লাইটিং প্রোগ্রাম সঠিকভাবে করতে পারে না। এজন্য কখনওবা রিপ্রোডাকটিভ অর্গানের পরিপক্বতা আসে আগে এবং কখনওবা পরে। এতে করে ডিম উত্পাদনে ব্যাঘাত ঘটে। খামারিদের পড়তে হয় আর্থিক ক্ষতিতে। আবার পরিমাণমত খাবার সময়মত না দেওয়ায় মুরগির ওজনও স্টান্ডার্ড ওজনের মত হয় না। এতে করে ডিম উত্পাদনও কাংখিত জায়গায় পৌঁছায় না। কখনওবা ছোট আবার কখনওবা বড় ডিম পাওয়া যায়। সকল ধরনের ভ্যাকসিন ও মেডিসিন না দেওয়ায় কাংখিত সময়ে আগেই ডিম দেয়া কমে যায়। শুধু তাই নয়, কখনও কখনও কাংখিত উত্পাদনের চেয়ে ডিম উত্পাদন অনেক কমে যায়। এতে করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় খামারিদের। অন্যদিকে শীতে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রভাব তো রয়েছেই।...

বর্তমানে দেশে দু-একটি পোল্ট্রি কোম্পানি পুলেট উত্পাদন শুরু করেছে। পুলেট উত্পাদনকারী কোম্পানি সি.পি. বাংলাদেশ লিমিটেড -এর ভালুকা ফার্ম ৭ -এর ম্যানেজার মো. মাহমুদুল হাসান জানান, রেডি পুলেট খামারিদের কাছে ঝুঁকিমুক্ত। কেননা খামারিদের পুলেট তৈরিতে রয়েছে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা। খামারিরা সেডে বাচ্চা তোলার পর নিয়ন্ত্রিত হাউজ না হওয়ায় বাচ্চা মারা যায় অধিক। ঘরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, লাইটিং প্রোগ্রাম, ফিডিং সিস্টেম, ভ্যাকসিনেশন, মেডিকেশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ভালভাবে তারা করতে পারে না। কিন্তু রেডি পুলেট তৈরি করা হচ্ছে সম্পূর্ণ কন্ট্রোল হাউজিং সিস্টেমে। যেখানে উপরের একটি বিষয়ও স্টার্ন্ডাড মানের কম হয় না। তাই এসব পুলেট থেকে ডিম উত্পাদন হচ্ছে অধিক। সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তৈরিকৃত এসব রেডি পুলেটের দাম খামারে উত্পাদিত পুলেটের দামের চেয়ে অনেক কম।

নারায়ণগঞ্জের একজন খামারি জানান, বর্তমানে আমার ফার্মে পুলেট তৈরি করতে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা খরচ পড়ছে। অন্যদিকে বাজারে গুণগতমানসম্পন্ন রেডি পুলেট পাওয়া যাচ্ছে তার চেয়েও কম দামে। আশা করছি এ রেডি পুলেট দিয়ে আমরা লাভবান হতে পারব।

পুলেট ফার্মে তোলা থেকে ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে- প্রথমত, লাইটিং প্রোগ্রাম ঠিকমত হচ্ছে কি না। ঘরের তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা। খাবার প্রদানের সময় সঠিক সময়ে হচ্ছে কিনা। খাদ্যে যে সকল উপাদান আছে তা ঠিক আছে কিনা। মুরগিকে খাবার সঠিকভাবে প্রদান করা হচ্ছে কি না। নিউক্যাসল ও আইবি ডিজিজের জন্য ভ্যাকসিন পরামর্শক্রমে ব্যবহার করতে হবে। এসব বিষয় যদি সঠিকভাবে পালন করা না হয়ে তবে ডিমের ওজন কমে যাবে। তেমনি মুরগির প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য যে ওজন তা আসবে না। এ সময়ের মধ্যে মুরগির সর্বোচ্চ ডিম উত্পাদনের জন্য প্রস্তুত হয়। ডিমের ওজনও পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। সুতরাং পুলেট ফার্মে তোলার পর এ সকল বিষয় গুরুত্বের সাথে পালন করতে হবে। তবেই রেডি পুলেটের লেয়ার থেকে লাভবান হওয়া যাবে।

নানাবিধ কারণে পোল্টিশিল্পের আজ খারাপ অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় লোকসান গুনতে গুনতে খামারিরা বন্ধ করে দিচ্ছে খামার। ঠিক সেই মুর্হূতে এমন একটি সংবাদ সত্যি খামারিদের বুকে আশার সঞ্চার করবে, এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে।

রেডি পুলেটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

ব্রুডিংয়ের সময় বাচ্চার মৃত্যুর হার খুবই কম।

ব্রুডিং ও ব্রুডিংয়ের পর থেকে ১৮ সপ্তাহ পর্যন্ত তাপমাত্রা কন্ট্রোল হাউজে নিয়ন্ত্রিত।

হাউজের আর্দ্রতা (হিউমিডিটি) নিয়ন্ত্রিত।

স্টার্ন্ডাড অনুযায়ী কালিং (বাছাই)।

সুনিয়ন্ত্রিত ফিডিং প্রোগ্রাম।

পরিমাণমত লাইই ইনটেনসিটি

(৫ থেকে ৪০ লাক্স)।

জৈব নিরাপত্তা।

খামারিরা কন্ট্রোল হাইজিং সিস্টেম ব্যবহার না করায় এসব বিষয় স্টার্ন্ডাড অনুযায়ী করা সম্ভব হয় না। এতে করে গুণগত মানসম্পন্ন পুলেট পাওয়া যায় না। ফলে ডিম উত্পাদনও কম হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ