মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১১

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় সেই শিক্ষকের দুটি কোর্স বন্ধ

সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ একটি নিবন্ধ লেখার পর যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুব্রামনিয়াম স্বামীর দুটি কোর্স বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সুব্রামনিয়াম স্বামী ভারতের সাবেক মন্ত্রী এবং জনতা পার্টির সভাপতি। গত জুলাইয়ে তিনি লিখেছিলেন, ভারতে সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করতে হলে ‘অবৈধভাবে’ ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের বিতাড়ন করতে হবে। ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ অনুপাতের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সিলেট থেকে খুলনা অঞ্চল পর্যন্ত এলাকা দখল করে নিয়ে সেখানে তাদের পুনর্বাসন করা যেতে পারে।
ওই লেখার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানান এবং এ নিয়ে জোর সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও বিজ্ঞান অনুষদ গত ৬ ডিসেম্বর চলতি বছর হার্ভার্ড সামার স্কুল থেকে সুব্রামনিয়ামের দুটি কোর্স বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ‘কোয়ান্টিটেটিভ মেথড ইন ইকোনমিকস’ ও ‘ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইস্ট এশিয়া’ নামের দুটি কোর্স পড়াতেন অর্থনীতির অধ্যাপক সুব্রামনিয়াম। তিনি ১৯৯০-১৯৯১ সালে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন।
চলতি বছরের ১৩ জুলাই ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইতে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়। ওই ঘটনার পরদিন ১৪ জুলাই মুম্বাই থেকে প্রকাশিত ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস পত্রিকায় সুব্রামনিয়ামের একটি মতামতধর্মী লেখা প্রকাশিত হয়। লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘মুসলিম জঙ্গিদের কীভাবে বিতাড়ন করতে হবে’ (হাউ টু ওয়াইপ আউট ইসলামিক টেরর)।
সুব্রামনিয়াম তাঁর নিবন্ধে ভারতে অধিকাংশ সন্ত্রাসী ঘটনা ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের জন্য মুসলিমদের দায়ী করেন। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে, সে কৌশল উল্লেখ করেন।
সুব্রামনিয়াম লেখেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য মাওবাদীদের সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করলেও আমার মতে ইসলামি সন্ত্রাসবাদই সবচেয়ে বড় হুমকি।’
ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে কেন সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করেন, সে ব্যাখ্যা তিনি দেন এভাবে, ‘উগ্র মুসলিমরা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতকে তাদের বিজয়ের অসমাপ্ত অধ্যায় বলে মনে করে। আমি স্মরণ করতে পারি, মুসলিমরা যত দেশ জয় করেছে, সবখানে আগ্রাসনের দুই দশকের মধ্যে দেশটিকে পুরোপুরি শতভাগ ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম ভারত।’
সুব্রামনিয়াম বলেন, ২০১২ সাল নাগাদ পাকিস্তান দখল করে নেবে তালেবান এবং মার্কিনরা আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে যাবে। এর পরই মুসলিমরা তাদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লাগবে।
এই পরিস্থিতি ও ইসলামি সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলায় ভারতের জন্য করণীয় নির্ধারণ করেন সুব্রামনিয়াম। তিনি বলেন, ভারতে একটি খাঁটি হিন্দুত্ববাদী দল গঠন করতে হবে। ভারতের অর্ধেক হিন্দুও যদি তাদের জাতি ও ভাষার বিভেদ ভুলে একটি সাচ্চা হিন্দুত্ববাদী দলকে ভোট দেয়, তাহলে সেই দলটি পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।
সুব্রামনিয়াম প্রস্তাব করেন, ভারতের মুসলিমদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে হবে। কেননা তারা স্বীকার করে না যে তাদের সবার পূর্বপুরুষ হিন্দু ছিল। এ দেশে থাকতে হলে তাদের প্রথমেই এটা স্বীকার করে নিতে হবে এবং তাহলেই তারা ভোট দিতে পারবে।
সুব্রামনিয়াম বলেন, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা ও ‘বন্দে মাতরম’ গাওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এ ছাড়া হিন্দুধর্ম থেকে অন্য ধর্ম গ্রহণ নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রস্তাব করেন সুব্রামনিয়াম। একই সঙ্গে যারা হিন্দুধর্ম ছেড়ে গেছে, তাদের আবার ফিরে আসার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
এসব প্রস্তাব গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা সমাধান হবে বলে মনে করেন সুব্রামনিয়াম।
সুব্রামনিয়ামের এই লেখার প্রতিবাদ জানিয়ে হার্ভার্ডের ৪৫০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড্রিউ জি ফোস্টকে একটি স্মারকলিপি দেন। দ্য হার্ভার্ড ক্রিমসন পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয় সুব্রামনিয়ামের বক্তব্যের প্রতিবাদে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের শিক্ষক ডায়না এ ইক বলেন, ‘যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে বিষোদগার করে, তাদের হার্ভার্ড থেকে দূরে রাখা কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব।’
তবে সুব্রামনিয়াম বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত তাঁর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ভয়ংকর লঙ্ঘন।’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ভারতে কেবল বামপন্থীরা ছাড়া কেউ তাঁর লেখায় নাখোশ হয়নি এবং সবাই তাঁকে সমর্থন করে। সূত্র: দ্য হার্ভার্ড ক্রিমসন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ