সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১১

একটি বাংলাদেশ, তুমি জাগ্রত জনতার ... সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার


২০০৪ সালের ঘটনা । ইউরো ফুটবলের ফাইনালের দিন; পর্তুগাল ভার্সেস গ্রীস । বড় কোন খেলা থাকা মানেই আমাদের বাসায় উৎসব আমেজ ! সবাই এক হয়ে খেলা দেখা । খেলার মাঝে অনেক বিজ্ঞ কমেন্টস করছিলাম, এটা আমার সারা জীবনের অভ্যাস; “ফিগো কি কি ভুল করছে, ডেকো’র এখন কি করা উচিত, রোনালদো’র আজ আমাশয় হইছে” ইত্যাদি টাইপ সব কথা । আমার ফুটবল বিষয়ক জ্ঞানে সবাই মুগ্ধ(!) ! (শুধুমাত্র আউটসাইডার’রা, বাসার সবাই আমার দৌড় জানে; লাস্ট উদাহারন গত পরশুর ম্যাচ, মাদ্রিদ ৪-১ গোলে জিতবে বলে এক মাস ধরে চেচাচ্ছিলাম , ৩-১’এ হারার পর সেজ চাচা; ছোট ফুপি’রা আমার দিকে এমন ভাবে তাকচ্ছিল যেন আমি ভুলবশত প্যান্ট না পড়েই চলে আসছি !) ।

প্রশ্নকর্তা আমার মেজ চাচা’র ফ্রেন্ড ।





আঙ্কেল, তোমার প্রিয় খেলা কোনটি ?

-ক্রিকেট । :D

ওহ । তা ক্রিকেটে কোন দল সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ?

-অস্ট্রেলিয়া (আবার জিগায়) ।B-)

বাংলাদেশও তো ক্রিকেট খেলে, বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া’র খেলা থাকলে কোন দল সাপোর্ট করো ?

-উমম... তখন দুইটাই সাপোর্ট করি । অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশ হারলেও তেমন খারাপ লাগে না । :|

প্রশ্নের জবাব দেয়ার পর ভাবলাম আমার কি আসলেই খারাপ লাগে না যখন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ’কে ধুঁইয়ে মুছে দেয় ? বেশিক্ষন ভাবার সুযোগ পেলাম না, সেবারের চ্যাম্পিয়ন গ্রীস ফেবারিট পর্তুগাল’র জালে বল পাঠিয়ে দিয়েছে ! এখন চিন্তা ভাবনা করার সময় না, গোল গোল চিল্লানোর সময় । “গোওওওওওওওওওওওওওওওওওল” !! :P :P







এক বছর পর ।

জুন ১৮, ২০০৫ ।

বাংলদেশ ক্রিকেট দল গেলো ইংল্যান্ডে । ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি’র দ্বিতীয় ম্যাচ ।

টস জিতে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিল । প্রথম বল, বোলার মাশরাফি বিন মুর্তজা । সামনে দাঁড়িয়ে এডাম গিলক্রিস্ট । প্রথম বলেই এল বি ডব্লু । গিলক্রিস্ট আউট !! কেমন যেন একটা ঘোর ঘোর লাগছিল । ৯ রানের মাথায় অস্ট্রেলিয়ান স্কিপার পন্টিং’ও সাজঘরে । আজ কিছু একটা হবে এটা যেন তখনি সবাই বুঝে গিয়েছিল ! ডেমিয়েন মার্টিনের ৭৭ আর ক্লার্কের ৫৪’তে ৫০ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২৪৯ । যে দলে ম্যাকগ্রা, গিলেস্পি,হগ, ক্যাস্প্রোউইকজ আছে তাদের বিপক্ষে ২৪৯’ও তো পাহাড়সম ! :-* 

কিন্তু আশরাফুল-আফতাব’র এসব ভাবার সময় আছে ? আশরাফুলের ক্যারিয়ার সেরা সেঞ্চুরীর পর শেষ ওভারে’র দ্বিতীয় বলে গিলেস্পির মাথার উপর দিয়ে আফতাবের সেই ছয় ! ওরা ১১ জনের সাথে আমরা চৌদ্দ কোটি বাঙ্গালী’ও যেন লাফিয়ে উঠলাম ! মনে আছে, আমি গলা ছেড়ে কাদঁছিলাম । না, অস্ট্রেলিয়া হেরে গেছে বলে নয়; আমি কাদঁছিলাম কারন আমি ঠিক তখনই প্রথমবারের মত বুঝতে পারছিলাম লাল সবুজের মর্মার্থ ! শুধু একটা পতাকা নয় এটা । এটা আমার পরিচয়, আমার গর্ব । অনেক রক্ত দিয়ে কেনা এই পরিচয় ।

পরেরদিনের প্রথম আলোর শিরোনাম ছিল,
“বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব” ।





আমার বাবা নরমালি চশমা পড়েন না । কোন ফাইল সাইন করার সময় অথবা পত্রিকায় ছোট হরফে কিছু লেখা পড়ার সময় কেবল উনার চোখে চশমা দেখা যায় । কাছের জিনিস ভালো দেখেন না উনি । তবু নিতান্ত বাধ্য না হলে চশমা বাবা’র চোখে দেখি না ।

আমিও কিন্তু গ্লাস ব্যাবহার করি । যখন কোনকিছু পড়তে হয় শুধুমাত্র তখন চশমা’টা খুলতে হয় কেননা আমার চোখে পাওয়ার নাই; এক্সট্রা ভাব্জের জন্যই এই গ্লাস পড়া, এটা দিয়ে কোন কিছু পড়লে আমার চোখ উলটো ব্যাথা করতে থাকে ! কাজেই আমার ক্ষেত্রে গ্লাস পড়াটা প্রয়োজন নয়, শুধুই শো অফ ।

এই কথা’টা বলার কারণ এখন ব্যাখা করবো ।



ফেইসবুক ভর্তি এখন লাল সবুজ । সবাই যার যার প্রোফাইল লাল সবুজ দিয়ে রাঙ্গাচ্ছে । দেখতে কিন্তু হেব্বি লাগে বস ! কিন্তু এ প্রসঙ্গে আমার একটা প্রশ্ন’ও আছে । আমাদের দেশপ্রেম কি কেবলি শো অফ’এর দিকে চলে যাচ্ছে ? লাল সবুজ একটা সবুজ প্রোফাইল’এ দিলেই আমার দায়িত্ব শেষ ?

আরেকটা গল্প বলতে হচ্ছে এখন ।



৭ ৮ দিন আগে বনানী’তে মাহী বি চৌধূরী এক সেমিনার আয়োজন করেছিলেন । আমরা ফ্রেন্ড’রা কনসার্ট ভেবে আগে ভাগেই গিয়ে বসেছিলাম । (পরে অবশ্য ব্যাথীত মনে ফিরে আসি !) যে স্টেজ’টা বানানো হয়েছিল সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানী’র ছবি পাশাপাশি টানানো ছিল । ওখানেই এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়, স্বনামধন্য এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ও লেভেল পড়ে । ও নিজেও কনসার্ট ভেবেই এসেছিলো ওর ফ্রেন্ড’দের সাথে । স্টেজ’এ আমাদের জাতীয় নেতা’দের ছবি দেখে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা ভাইয়া, উনারা কি আজ এখানে আসবেন?”। আমি হাসবো, না কাঁদবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না । বললাম, “আল্লাহ তোমার মঙ্গল করূন” ।

বাজি ধরে বলতে পারি, ওই মেয়েটির প্রোফাইলেও এখন লাল সবুজ পতাকা । X(X(





আমাদের উঠতি জেনারেশনের পোলাপাইনের ধারণা, দেশ’র জন্য আমাদের করার মত কিই বা থাকতে পারে ? ধারণাটির শতকরা ৯৯% ভুল । এখন থেকেই যদি অভ্যাস না গড়ে ওঠে, প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তুমি কোন বা*’টা ফেলবা দেশের জন্য ? সবার প্রশ্ন হবে, “আমি কিভাবে দেশের জন্য কিছু করবো ?”

১০ টা বেনসন অথবা ২ প্লেট ফুচকার টাকা দিয়ে একটা টবসহ গাছ কিনে নিজের ছাদেই লাগাও না কেন ? নিজের বাবা’কে গিয়ে প্রশ্ন কর, “বাবা, তুমি কি ইনকাম ট্যাক্স দাও?”, বাইকে হলার লাগিয়ে ভুমমমম ভুমমমম না করে নরমালি বাইক চালাও, উত্তরা থেকে পুরান ঢাকা বিআরটিসি বাসে যাওয়ার সময় ন্যায্য টিকেট’টাই কেনো, অযথা যেন ৫ ৭ টাকা বাঁচানোর জন্য দেশ’কে বাশঁ দেয়া ? সবাই বলবে, Why Me ? অন্যরা তো ঠিকই বনানী/এয়ারপোর্টের টিকিট নিয়ে আজিমপুর চলে যাবে, আমি কেন পুরো টাকা দেবো ? আবার, আমি আমার বাইকে হলার লাগাইসি, তো কি হইসে, কতজনেই তো লাগায়, লাগায় না ?

হ্যা, সবাই গুঁ খায় । তুমিও খাও গিয়ে । বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, কেঊ “না” বালার নেই এখানে । এখানে ফূর্তি করবা না, তো কি সুইজারল্যান্ড গিয়ে করবা ? 



অনেক বাজে বলে ফেলেছি মনে হচ্ছে । দেশ’কে ভালোবাসো সবাই । নিজের জায়গা থেকে যতোটা পারো, ঠিক ততোটা । [[ভুল কিছু বলে থাকলে দুঃখিত ।]]















পরিশেষে একটা গান । এটা যতবারই শুনিনা কেন, প্রতিবার গাঁয়ের লোম শিউরে ওঠে । 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ