শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১১

‘বউমা’র চোখ ভাল হওয়ার জন্য কোরআন খতম পড়েছি, বিনিময়ে ওরা আমার ছেলেকে খতম করলো’

কারা নিয়ন্ত্রিত প্রিজন সেলে হাসান সাঈদের রহস্যজনক মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না নিহতের মা হাসিনা কবির। মৃত্যুর পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু শোক ভুলতে পারছেন না তিনি। গতকাল পর্যন্ত ছিলেন পাগল প্রায়। বুক ফাটা আর্তনাদ করে তিনি গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে জানতে চান, কোথায় আপনাদের নারীবাদীরা? যারা আমার প্রায় অন্ধ ছেলের ন্যূনতম জামিনের বিরোধীতা করেছিলেন আদালতে। বিচারপতির সামনেই আদালতকে ‘নারী মঞ্চ’ বানিয়ে অন্ধ ছেলের আইনজীবীকে হেনস্থা করেছিলেন! আমিও তো নারী, কই আমার নারীত্বের তো সম্মান রাখলেন না? নাতনিকে দেখতে যাওয়ার অপরাধে আমাকেও আসামি বানালেন! নারীবাদীরা কি মানুষ না? ওরা কি ভিনগ্রহের বাসিন্দা? ওদের কি মনুষ্যত্ববোধ নেই? এক নারীর চোখ কে ইস্যু বানিয়ে আরেক মায়ের বুক খালি করাই কি ওদের পেশা? এ পেশা ছাড়া অন্য কোন ভাল উপায়ে কি বিদেশীরা ডোনেশন দেয়না? তাই বলে সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে এভাবেই মাতৃত্বের অপমান করতে হবে? ওকে হত্যার পরিকল্পনা করার আগে একবারও কি ভাবলেনা -এ কানা লোকটাও আরেক নারীর সন্তান? তিনি আরও বলেন, কারাগারে আমার ছেলে চশমা ছাড়া কিছুই দেখতে পেতোনা। ওর দুরবস্থা দেখে কারাগারের অনেক হাজতি দু:খ প্রকাশ করেছে । সমবেদনা জানিয়ে বলেছে এ জায়গা তো ভাই আপনার জন্য নয়। যে ছেলে নিজের স্ত্রীকে আল্লাহর পরেই স্থান দিয়েছিল, সেই স্ত্রীর ব্যভিচারীর বলি হয়ে ছেলে আমার হাজতবাসী হয়েছে। মান-সম্মানও কেড়ে নিয়েছে। ছেলের পাশাপাশি সবাইকে হুমকিদাতা হিসাবে চিহ্নিত করে পত্রিকার পাতায় পাাতায় ছেপেছেন। বিভিন্ন নারী বাদী সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের একপক্ষীয় ভূমিকার কারণে আমরা বন্দি হয়ে পড়েছিলাম।এতকিছুর পরও ওরা আমাদের ছাড়লনা। শেষ পর্যন্ত প্রায় অন্ধ ছেলেটাকে ওরা মেরেই ফেললো। এ কথা বলেই বুক চাপড়িয়ে আহাজারি করে ওঠেন তিনি। এরপর তিনি একেবারেই শান্ত হন। আস্তে আস্তে বলে ওঠেন, বউমার চোখ ভাল হওয়ার জন্য নিজে নামাজ পড়ে দোয়া করেছি। কোরআন খতম পড়েছি। তার বিনিময়ে ওরা আমার ছেলে খতম করে দিলো। 
পুনশ্চ- ছেলে হারানো অনেক মায়ের প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শুধু এই মায়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি ঢাবির শিক্ষক রুমানা মঞ্জুরের নিপীড়ক স্বামীর মা। প্রথমে অধৈর্য্য পরে নির্বাক হয়ে আমরা ক’জন শুধূ তার কথাগুলো শুনেছিলাম। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ