শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১১

৪০ বছরের সম্পর্কের নির্মম পরিণতি (“হেমা কানাডায় গিয়েছিল হিজাব পরে। ফিরে এসেছে স্কিন টাইট গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরে)

“হেমা কানাডায় গিয়েছিল হিজাব পরে। ফিরে এসেছে স্কিন টাইট গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরে। এয়ারপোর্টে নেমে ২০ মিনিট পরে সুমনকে জিজ্ঞেস করে, ‘কেমন আছো’। এয়ারপোর্টে নেমেই সে আগে ফোন করে তার বয়ফ্রেন্ড নাভিদকে।”- এসব অভিযোগ করেন প্রিজন সেলে রহস্যজনকভাবে মৃত হাসান সাঈদের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, ওই পরিবারের সাথে সম্পর্ক ৪০ বছরের। শুধু হেমার অনৈতিক সম্পর্কের কারণেই আজ এই পরিণতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরের পারিবারিক নাম ছিল হেমা। আর হাসান সাঈদকে সবাই সুমন নামেই ডাকতেন। সাঈদের মা হাসিনা কবির বলেন, কানাডা যাওয়ার আগ পর্যন্ত রুমানা খুবই ভালো ছিল। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল ঈর্ষা করার মতো। সপ্তাহের অন্তত পাঁচ দিন ওরা বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাবার খেত। কানাডা যাওয়ার পরই হেমা পাল্টে যায়। যে হেমা হিজাব পরে কানাডা গিয়েছিল সে ফিরে আসে জিন্সের প্যান্ট এবং টাইট গেঞ্জি পরে। তিনি বলেন, সুমন তার খালাকে বলেছে কানাডা থেকে দেশে ফেরার দিন এয়ারপোর্টে প্রথমে হেমা তার বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে। এরপর তার মেয়েকে আদর করে। ২০ মিনিট পর্যন্ত সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল সুমন। কিন' ততক্ষণে তার দিকে ফিরেও তাকায়নি হেমা। এরপর সে তাকে শুধু জিজ্ঞেস করে কেমন আছো। এ কথার পরই সে নাভিদকে ফোন করে। নাভিদ ফোন রিসিভ না করলে সে বলে ওঠে, ‘নাভিদটা ফোন ধরছে না কেন’। হাসান সাঈদ শুধু মুখবুজে কাঁদত। এমনকি, পরিবারের সবার সাথে এগুলো শেয়ার পর্যন্ত করত না। রুমানা এবং তার মা বাড়ির ছাদে যেত জগিং করতে। আর কাজের লোককে বলে যেত ‘কানাটার মুখে থুথু মার’। হাসান সাঈদের মা অভিযোগ করেন, এভাবেই ওই পরিবারের সদস্যরা তার ছেলের ওপর অমানবিক আচরণ করত। হাসান সাঈদ চোখে দেখত না বলে ওই পরিবারের লোকজন তাকে ‘কানা’ বলে ডাকাত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কানাডায় নাগরিকত্ব পাওয়া। হাসান সাঈদের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার নিষ্পাপ বাবা অনেক কষ্ট করে গেছে। আর মৃত্যুর পর সে কারণেই তার চেহারাটা অত উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল ও বলছে, আমি তোমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেলাম। তোমরা আমার জন্য কিছুই করতে পারলে না।’ হাসান সাঈদের মা বলেন, ‘আমরা কারো কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাইনি। যেখানে গিয়েছি আমাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সত্য কথা বলারও সাহস পাইনি।’ হাসান সাঈদের মা বলেন, ‘ওই পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্ক ৪০ বছরের। হাসান সাঈদের বাবা আহম্মেদ কবির এবং রুমানা মঞ্জুর ওরফে হেমার বাবা মঞ্জুর হোসেন বুয়েটের একই রুমে থাকতেন। তারা ৬৪ সাল থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত একই রুমে কাটিয়েছেন। সেই থেকেই দুই পরিবারের সম্পর্ক। দুই পরিবার সব সময় একত্রেই থাকত। সে থেকেই রুমানা এবং হাসান সাঈদের প্রেম। ৮ বছর প্রেম শেষে তারা বিয়ে করে। বিয়ের পর আরো ১০ বছর কেটে যায়।’ হাসিনা কবির বলেন, এই ১৮ বছরে রুমানার বিরুদ্ধে তার একটিও অভিযোগ নেই। সে ছিল ভালো মেয়ে। সবার সাথে তার মধুর সম্পর্ক ছিল, যে সম্পর্ক দেখলে সবাই ঈর্ষা করত। কিন' কানাডা যাওয়ার পর থেকেই সে পাল্টে যায়। দুই পরিবারের দূরত্ব বাড়তে থাকে। নাভিদ নামের ওই যুবকই দুই পরিবারকে দূরে সরিয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, কানাডা যাওয়ার পর থেকেই রুমানা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। দেশে ফিরে সে সুমনের ওপর নানাভাবে নির্যাতন করত। ৯ মাস কানাডা থাকাকালে যে মেয়েকে কষ্ট করে হাসান দেখাশোনা করেছে সেই মেয়েকে মৃত্যুর আগে দেখতে পর্যন্ত পারেনি হাসান।

হাসানের বোন সামিরা নয়া দিগন্তকে বলেন, কানাডা যাওয়ার পরই রুমানা কেমন যেন হয়ে যায়। হাসান তখন ফোন করে প্রায়ই এসব কথা বলত। বলত, সে মারা গেলে তার মেয়েটাকে যেন আমি নিয়ে রাখি। তিনি বলেন, রুমানা কানাডার নাগরিকত্ব, সেখানকার টাকা এবং নাভিদের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল।

হাসান সাঈদের মেজ খালা সেলিনা রহমান বেবি বলেন, ‘সুমন মাঝে মধ্যে আমাকে তার কষ্টের কিছু কথা বলত। বলত সবাই কাপুরুষ। কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না।’

হাসান সাঈদের ভাই ফারুক গতকালও অভিযোগ করেন, প্রিজন সেলে তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। কারা এর সাথে সম্পৃক্ত সে ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর পরই আগামী সপ্তাহে এ ব্যাপারে মামলা করা হবে। ইতোমধ্যে ভিনদেশী যুবকের সাথে রুমানার অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য তাদের হাতে রয়েছে। নোংরা ভাষায় লেখা অনেক মেইল বার্তা তাদের হাতে এসেছে। ওগুলোই প্রমাণ করবে তার ভাইয়ের মৃত্যুর পেছনে কী কী কারণ থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে গ্রেফতার হন হাসান সাঈদ। তার বিরুদ্ধে স্ত্রী রুমানাকে নির্যাতন এবং তার দুই চোখ নষ্ট করে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষিকা রুমানা উচ্চশিক্ষার জন্য ৯ মাস কানাডা অবস'ান করেন। দেশে ফেরার পর এ ঘটনা ঘটে। স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে সে থেকেই হাসান সাঈদ জেলে বন্দী ছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে তিনি রহস্যজনকভাবে মারা যান। তার হাত এবং কোমরে রশির দাগ পাওয়া যায়। মুখে পলিথিন পেঁচানো ছিল বলে জানা যায়। এ ঘটনায় হাসান সাঈদের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়, পরিকল্পিতভাবে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তার মৃত্যুর পর জেল কর্তৃপক্ষও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করে। প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষ একে আত্মহত্যা বললেও পরে সেখান থেকে বলা হয় হাসান সাঈদ মারা গেছেন হার্ট অ্যাটাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ